Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ নির্দেশদাতা কে

নয়াপল্টনে হামলা ও গাড়ি পুড়ানো মামলা

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের উপর হামলা ও পুলিশের গাড়ি পুড়ানোর নির্দেশ দাতাদের কে জানতে দফায় দফায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে রিমান্ডে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদেরক। একই সাথে ঘটনায় জড়িত পলাতক নেতাকর্মীদের শনাক্ত করার বিষয়ে তথ্য জানার জন্য নানা কায়দায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের। ডিবির কর্মকর্তারা গ্রুপ করে পৃথক পৃথকভাবে আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। পল্টন থানায় দায়েরকৃত ৩টি মামলার পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে ডিবি ও পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। তিন মামলায় ৩৮ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শনিবার ঢাকা মহানগর হাকিম মাইনুল ইসলাম রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশ সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের সাথে সম্পৃক্ত ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, অগ্নিসংযোগকারী ও হেলমেটধারীদের গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে শিগগিরই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
ডিবি সূত্র জানায়, নানান পন্থায় ৪৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে গতকাল ৩৮জনকে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিএনপি নেত্রী নিপুনসহ ৭জনকে আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্যদেরকেও ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তারা জিজ্ঞাসাবাদে হামলার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
পল্টন থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন বলেন, এই ৩৮ জনকে পাঁচদিনের রিমান্ড দেয়া হয়েছিল। দুই দিনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হওয়ায় তাদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এমন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আমরা নিশ্চিত কারো না কারো নির্দেশ বা ইন্ধনে হামলা চালানো হয়েছে। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে ইন্ধনদাতার সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার নাম জানা গেছে। আমরা এসব তথ্য যাচাই বাছাই করছি।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ঘটনার সময় পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন দেয় কয়েকজন তরুন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত একজনকে সনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক ঠিম। ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে তার পরিচয় সনাক্ত করা হয়। একই সাথে ঘটনার আগে ও পরে শীর্ষ নেতারা মোবাইল ফোনে কার সাথে কথা বলেছেন এবং কি কথা বলেছেন তাও জানার চেষ্টা চলছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির এক কর্মকর্তা গতকাল বিকালে বলেন, এখন পর্যন্ত ৪৫ জন যাদের নাম বলেছে তাদের মধ্যে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা রয়েছে চারজন। তাদেরকেও গ্রেপ্তার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তাদের বাসা, অফিসসহ সম্ভব্য স্বজনদের বাসাতেও গোয়েন্দানজরদারি শুরু হয়েছে। যেকোন সময় তারা গ্রেপ্তার হতে পারে।
গত বুধবার নয়াপল্টনে হামলার ঘটনায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত দুই দিনে পল্টন থানায় দায়ের করা তিন মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বৃহস্পতিবার রিমান্ড পাওয়া ৩৮ জন ও গত শুক্রবার রিমান্ড পাওয়া সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা দপ্তরে নেয়া হয়েছে।
হামলা ও পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুত্রবধূ ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীসহ সাতজনকে গত শুক্রবার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। রিমান্ডের আদেশ পাওয়া অন্য ছয়জন হলেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা, রাজধানীর খিলক্ষেত থানা বিএনপির সভাপতি ইউসুফ মৃধা, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার যুবদল নেতা আবুল হাশিম সবুজ, বরগুনার তালতলী উপজেলার বিএনপি নেতা আমির হোসেন এবং বিএনপির কর্মী মহসিন ও মামুনুর রশিদ খোকন।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে গত ১৪ নভেম্বর বুধবার পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্য আহত হয়। এ সময় পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ এজাহারভুক্ত আসামি হন গয়েশ্বর রায়ের পুত্রবধূ নিপুণ রায়। বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পল্টন থানার নাশকতা মামলায় গ্রেপ্তার হন নিপুণ রায় চৌধুরী। এ সময় বিএনপির আরেক নেত্রী কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনকে আটক করা হলেও পরে তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়।
মামলার তদারক কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (পূর্ব) খন্দকার নুরন্নবী বলেন, পল্টন থানায় দায়ের করা তিন মামলায় পুলিশ এখন পযন্ত মোট ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। উল্লেখ্য গত বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানায় পুলিশের দায়ের করা নাশকতার তিন মামলায় আসামির সংখ্যা ৪৮৮ জন। আসামির তালিকায় রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যাত্রাবাড়ী বিএনপির সভাপতি নবী উল্লাহ নবী, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আকতারুজ্জামান এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন, বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, মিডিয়া উইং সামসুদ্দিন দিদার, দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট নিপুণ রায়, যুবদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মজনু, ছাত্রদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন, কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা প্রমুখ।



 

Show all comments
  • Jashim Uddin ১৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:১২ পিএম says : 0
    সন্ত্রাসীদের আড়াল করা হচ্ছে অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে,, এর কি কোন শেষ নেই?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ