Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসায় নির্বাচনী ডামাডোল

চট্টগ্রামে ভোটের হাওয়া স্থিতিশীল সরকার এলেই চাঙ্গা হওয়ার আশাবাদ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে দেশজুড়ে। ভোটের হাওয়া সজোরে বইছে গ্রাম-গঞ্জ হাট-বাজার থেকে শুরু করে শহর-নগর-বন্দরের সর্বত্র। নির্বাচনমুখী রাজনীতির ডামাডোলে দেশের সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে আপাতত মন্দাদশা বিরাজ করছে। বন্দরনগরী ও দেশের ‘বাণিজ্যিক রাজধানী’ খ্যাত চট্টগ্রামের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রধান সমুদ্র বন্দরভিত্তিক শিপিং খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-বাণিজ্যিক খাতসমূহের এবং শতবর্ষ প্রাচীন সওদাগরী পাড়া চাক্তাই খাতুনগঞ্জের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তাগণ নির্বাচনী ডামাডোলের কারণে আপাতত অঘোষিত ‘ধীরে চলো নীতি’ অনুসরণ করছেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিনের দিকে সবার কৌতূহলী দৃষ্টি।
কেননা প্রধান দুই প্রতিদ্ব›দ্বী দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি তথা মহাজোটের বিপরীতে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের অধিকাংশ সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশীসহ তাদের সমর্থিত নেতারা হচ্ছেন ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা। তারা এ মুহূর্তে ব্যবসা-বাণিজ্যের তুলনায় ভোটের লড়াইয়ে নিজেদের মনোনয়ন নিশ্চিত করার বিষয়েই বেশি মনোযোগী এবং দিন-রাত ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সমর্থিত ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং কর্মকর্তাগণও নির্বাচনমুখী কর্মকান্ডে তৎপর রয়েছেন। অবশ্য নির্বাচনের শেষে স্থিতিশীল নির্বাচিত সরকার গঠনের পরই আবারো ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রসঙ্গত টিআইবির প্রতিবেদন অনুসারে দেশে জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৮০ শতাংশই ব্যবসায়ী। বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গতকাল শুক্রবার আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, প্রধানত দুই কারণে নির্বাচনী ডামাডোলে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাদশা বিরাজ করছে।
প্রথম কারণ. বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের অধিকাংশ সম্ভাব্য প্রার্থী কিংবা মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সরাসরি জড়িত। অনেকেই নিজ নিজ ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার।
দুই প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের তারিখ সবেমাত্র শেষ হয়েছে। নির্বাচনের জন্য আগামী ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের কাছে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলে তারিখ ধার্য করা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে তদবির ও দেন-দরবার করা, মনোনয়ন পত্র পেশ ইত্যাদি প্রস্তুতি-প্রক্রিয়ার মধ্যে অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশীসহ তাদের সমর্থিত নেতারা বর্তমানে অবস্থান করছেন রাজধানী ঢাকায়। আবার অনেকেই তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সমর্থন নিশ্চিত করা কিংবা মন জোগাতে, মান-অভিমান ভাঙাতে ছুটে গেছেন নিজেদের নির্বাচনী এলাকায়।
বন্দরনগরীর তিনটি আসনসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের এবং তিনটি পার্বত্য জেলার তিনটিসহ মোট ১৯টি নির্বাচনী এলাকায় এবারও জাতীয় নির্বাচনের অধিকাংশ সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতি। তাদের সমর্থিত নেতারাও অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এরফলে তাদের নির্বাচনমুখী ব্যস্ততার ধাক্কা গিয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর।
দ্বিতীয় কারণ. জাতীয় নির্বাচনের মতো জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ-বিদেশের নামিদামি ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তাগণ নির্বাচনের পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তথা ব্যবসা-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কোনো বড় ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাইছে না। এরজন্য তারা চায় নির্বাচন অবধি অপেক্ষা করতে। এরপর অবস্থা বুঝে পদক্ষেপ নিতে চায় তারা। নির্বাচনের আগে তারা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর নিবিড় দৃষ্টি রাখছে।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি ও চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সাবেক পরিচালক নাসির উদ্দিন চৌধুরী গতকাল শুক্রবার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আমাদের দেশে সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে এক ধরনের চাপা শঙ্কা, অনিশ্চয়তা বিরাজ করে থাকে। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্যে কম-বেশী স্থবিরতা দেখা দেয়। এবারও তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে তা সাময়িক। তিনি বলেন, শিল্পায়ন-বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সাধারণত বড় ধরনের সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা এখন কম। আবার নির্বাচনের পর স্থিতিশীল সরকার গঠিত হলে তখন এই আপাতত স্থবিরতা কেটে যাবে বলে আশা করা যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ