Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের হস্তক্ষেপ কামনা

ওয়াশিংটনে নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে ব্রিফিং

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিভিন্ন থিংক ট্যাংক ও মানবাধিকার সংগঠনের কর্মকর্তারা। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের হস্তক্ষেপ কমনা করেন তারা। বাংলাদেশে অব্যাহত গুম ও খুনের ঘটনা অসহনীয় পর্যায়ে উপনীত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তারা। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের পর এবার একটি মার্কিন থিঙ্ক ট্যাংক বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করলো। গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে টম ল্যানটস হিউম্যান রাইটস কমিশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশে নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি’-শীর্ষক এক ব্রিফিং-এ সমালোচনা করা হয়। এর আয়োজন করেন যুক্তরাষ্ট্র হাউজ কংগ্রেসের টম ল্যানটস হিউম্যান রাইটস কমিশনের কো-চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান র‌্যান্ডি হিউল্টন ও কংগ্রেসম্যান জেমস পি ম্যাকগভার্ন।
ন্যাশনাল এন্ডুমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির এশিয়া অঞ্চলের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনা দেবের সঞ্চালনায় ব্রিফিংয়ে প্যানালিস্ট বক্তব্য রাখেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অ্যাডভোকেসি ডাইরেক্টর জন সিফটন, ইউনাইটেড স্টেইটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের পলিসি অ্যানালিস্ট ওয়ারিস হোসাইন, ওয়ার্ল্ড ভিশন ইউএসএ’র সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার লাউরা বর্মন।
অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ও ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. জিয়াউদ্দিন।
জন সিফটন বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এক সংকটময় মুহূর্তে উপনীত হয়েছে। এবারের নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু হবে বলেও আশা করা কঠিন। কারণ বিরোধীদলের বহু নেতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কারাগারে রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া ১৯ জন বিএনপি নেতা গুম হয়েছে। প্রায় হাজারের মতো মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিক কতজন লোক রাজনৈতিক কারণে কারাগারে আছেন তা নিরূপণ করা কঠিন।
তিনি আরো বলেন, সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি এতই নাজুক যে, তা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা কঠিন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে আসছে। স্কুলছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে কথা বলায় সাংবাদিক শহীদুল আলমকে কারান্তরীণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন মানবাধিকার পরিস্থিতির উত্তরণে ইতোমধ্যেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসই পারে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে সরকারকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধ্য করতে। কারণ কংগ্রেসের এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এখন ডেমোক্র্যাটদের রয়েছে।
ওয়ারিশ হিউস্টন বলেন, নির্বাচনকে সামনে নিয়ে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের উপর হামলার আশংকা রয়েছে যেমনটি আগের নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে। এছাড়াও তিনি কওমী সনদের স্বীকৃতি ও হেফাজতে ইসলামের কাছ থেকে সংবর্ধনা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেন। অবশ্য, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন ওয়ারিশ হিউস্টন। তিনি বলেন, কেয়ারটেকার সরকার শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া উভয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কিন্তু সরকার শেখ হাসিনার মামলা প্রত্যাহার করেছে।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের কর্মকর্তা লরা ব্রামন বলেন, বাংলাদেশে অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু অনেক কিছু করার বাকি আছে। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতা বাংলাদেশের শিশুদের জন্য একটি বড় বিপদ এবং এই সহিংসতায় অনেক সময়ে শিশুদের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
প্রশ্নোত্তর পর্বে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশনের উপপ্রধান মাহবুব সালেহ এবং ব্রামন বিভিন্ন মন্তব্যের জবাব দেন।
সরকার নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক চায় না, এমন মন্তব্যের জবাবে মাহবুব সালেহ বলেন, সরকার পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানায়। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের আটক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলের সংলাপে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। বিরোধীদলের যাদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা নেই, প্রধানমন্ত্রী তাদের তালিকা দিতে বলেছেন। খালেদা জিয়ার শাস্তি প্রসঙ্গে মাহবুব সালেহ বলেন, খালেদা জিয়াকে শাস্তি দিয়েছে আদালত,সরকার নয়।
চিত্রশিল্পী শহীদুল আলমের আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, উনাকে আটক করা হয়েছে, কারণ তিনি জনসমক্ষে এমন মন্তব্য করেছেন যা জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী ছিল। রোহিঙ্গাদের জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপপ্রধান বলেন, বর্হিবিশ্বের চাপের কারণে নয়, বরং রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে চায়নি বলে প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি।
শেখ হাসিনার মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে জন সিফটনের মন্তব্যের জবাবে বাংলাদেশ মিশনের কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের দাবি একটি স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর সন্দেহ সৃষ্টির অপপ্রয়াস।
অনুষ্ঠানে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ওয়ার্ল্ডভিশনসহ বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তিনি কোনও কথা বলেননি।



 

Show all comments
  • Ansarul Hoque ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ২:১৯ এএম says : 0
    Edeshe thaka ........... .......... chhara onno keo Bangladeaher jonmo satru USA er edhoroner karjo kalap pachhondo Kore na.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানবাধিকা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ