পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্তমান দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিভীষিকাময় বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গতকাল শনিবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় আসকের কার্যালয়ে ২০২২ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক নূর খান এ মন্তব্য করেন।
নূর খান বলেন, দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি বিভীষিকাময়। গণতন্ত্র সংকুচিত হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। নির্বাচন কমিশন নিয়ে মানুষের আস্থা এখনও সঠিকভাবে আসেনি যে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অনেকটাই মাকাল ফলের মতো।
তিনি বলেন, গোপন যে ব্যবস্থা রয়েছে যাকে কারাগারে বা ডিটেনশন সেন্টার বলি কিংবা ইন্টারোগেশনের জন্য যে সমস্ত জায়গা রয়েছে সেগুলো বন্ধ করা উচিত। আমাদের আইন ও সংবিধান এগুলো সমর্থন করে না। যারা এগুলো পরিচালনা করেন তাদের চিহ্নিত করা উচিত। গুমের ঘটনা সঠিকভাবে সংবাদ মাধ্যমে আসছে না।
আসকের নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমরা মনে করি, বিচারবহির্ভুত সকল তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। গুম, খুন ও অপহরণের ঘটনা বন্ধে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশন চিহ্নিত করবেন এ ধরনের তৎপরতার সঙ্গে কারা জড়িত আছেন। জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা বিচারবহির্ভূত প্রতিটি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই। দেখেছি, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত একটা পর্যায়ে গিয়ে থেমে যায়। তাই প্রতিটি ঘটনার স্বাধীন তদন্ত হওয়া দরকার।
২০২২ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আসকের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংস্থাটির পরিচালক নিনা গোস্বামী ও সমন্বয়ক ফজলুল কবির। আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদায়ী বছরে সারা দেশে ৪৭৯টি রাজনৈতিক সংহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭০ জন। আহত হন ৬ হাজার ৯১৪ জন। এ বছর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৯ জন। শুধুমাত্র র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে আরো ১৫ জন নিহত হয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগে মামলা হয়েছে ২২৪৯টি। অপহরণ, গুম ও নিখোঁজ হয়েছেন ৫ জন। নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৬৯৪টি। খুন হয়েছে ১২৬ জন নারী। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৩৬ জন। অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ১২ জন নারী। শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৪৫টি। এ ধরনের ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪৭৪ শিশু।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিদায়ী বছর সীমান্তে হত্যার শিকার হয়েছেন ২১ জন। গণপিটুনিতে মারা গেছেন ৩৬ জন। কারা হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের। এছাড়া ২০২২ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর ১২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২১০ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে আসকের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নতির জন্য আসকের ১৪ দফা সুপারিশ:
জিনিসপত্রের অবিরাম মূল্যবৃদ্ধির ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। দ্রব্যমূল্য গত এক বছরে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ বেড়েছে। অথচ নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী ছাড়া কারো আয় বাড়েনি। কৃষকের ফসলের দাম নেই, গার্মেন্টসসহ শ্রমিকদের মজুরি আয়ের নিম্নমাত্রাতেই আটকে আছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে। এর মধ্যে মানুষ টিকে থাকার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে।
১৪ দফা সুপারিশ হচ্ছে-১. শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। এ অধিকার যথাযথভাবে চর্চা করার পরিবেশ তৈরি এবং জনদুর্ভোগ এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে হবে। সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এ আইনে মামলা গ্রহণ না করার নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
৩. রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা যেকোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেমন—বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এখতিয়ার বহির্ভূত আচরণ ইত্যাদির অভিযোগ উঠলে তা দ্রুত নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে এবং সম্পৃক্তদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শাস্তি প্রদান করতে হবে।
৪. এ পর্যন্ত সংঘটিত সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দেশের যেকোনো নাগরিককে আটক বা গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সম্পূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।৫. নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করতে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইনগুলোতে পরিবর্তন আনতে হবে। নারীর অধিকার সম্পর্কে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। শিক্ষা কারিকুলামে সমমর্যাদা, সমানাধিকার, বৈষম্যহীতা, বৈচিত্র্যতার প্রতি সম্মান প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৬. নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে এবং প্রতিকার বিধানে ভুক্তভোগী ও ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করতে হবে। ২০০৭ সালে আইন কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘ক্রাইম ভিকটিম কম্পেনসেশন অ্যাক্ট’ আইনে পরিণত করতে হবে।
৭. ‘সাক্ষ্য আইন (সংশোধন) বিল, ২০২২’ দ্রুততার সঙ্গে গেজেট আকারে প্রকাশ এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের ১৮ দফা নির্দেশনা সুস্পষ্টভাবে মেনে চলা এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ নির্দেশনা ব্যাপকভাবে প্রচার করা এবং দায়িত্ববাহকদের যথাযথভাবে জানানো ও সংবেদনশীল করে তুলতে হবে। আইন ও বিচারিক কাঠামো নারীবান্ধব করতে হবে।
৮. ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করে কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটে তার জন্য পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিজ বিশ্বাস ও রীতি চর্চার অধিকার এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. মানবাধিকারকর্মী ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ দ্রুততার সঙ্গে সংশোধন করতে হবে। কমিশনের প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগের জন্য একটি উন্মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। ১০. পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ১১. কাক্সিক্ষত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকার সুনিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ১২. দেশে সুস্থ রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নাগরিকদের অধিকার ভোগের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ১৩. অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা ও সহযোগিতায় বিদেশে দূতাবাসগুলোতে জরুরি হেল্পলাইন নম্বর চালুসহ অন্যান্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থা বিস্তৃত করতে হবে। এবং ১৪. সাধারণ জনগণের জন্য রেশন কার্ড চালু করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।