Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহাজোট-ঐক্যফ্রন্টের আসন বণ্টন

আ.লীগের শরিকরা ধোঁয়াশায়

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৮ এএম

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে দেশ। নির্বাচনের বল গড়িয়েছে মাঠে। জোটভুক্ত হয়ে এবার ভোটযুদ্ধে নামার চিত্র অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রায় সব দলই দুই সারিতে দাঁড়িয়ে গেছে। একটি সারি আওয়ামী লীগকে ঘিরে মহাজোট; অন্যটি বিএনপিকে ঘিরে ঐক্যফ্রন্ট। দুই জোটের শরীক দলগুলোর যারা প্রার্থী হওয়ার স্বপ্নে দলীয় মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছেন তাদের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। কিন্তু তিনশ সংসদীয় আসনে দুই জোট প্রার্থী দিতে পারবেন মাত্র ৬’শ জন। কারা পাচ্ছেন মহাজোট-ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী? এ নিয়ে চলছে দেশব্যাপী আলোচনা। মাহজোট ও ঐক্যফ্রন্টের নীতি নির্ধারকরা প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চুলচেরা বিশ্লেষণে নেমে গেছেন।

কোন দলকে কয়টি আসন ছাড় দেয়া হবে তা নিয়ে এখনো ধোয়াশার মধ্যে রয়েছে ১৪ দলের শরিকরা এবং মহাজোটের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী দলগুলো। আওয়ামী লীগের তরফ থেকে এখনো কোন ধরণের বার্তা না দেয়ার কারণে হতাশা ও জটিলতার মধ্যেও আছে তারা।

তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ বেশ কিছুদিন থেকেই জানিয়ে আসছে জোটের শরিকদের ৬৫ থেকে ৭০টি আসনে ছাড় দেয়া হবে। উইনেবল ক্যান্ডিডেট না পাওয়া গেলে এ সংখ্যা কম বেশি হবে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শরিকদের আগে নিজ দলের তালিকা প্রস্তুত করবে আওয়ামী লীগ এবং মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগে শরিকদের বিষয়ে ফায়সালা করা হবে। আপাতত শরিকদের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেবে না দলটি। সূত্র জানায়, এর মধ্যে জাতীয় পার্টিকে ৪০টি, ১৪ দলের শরিকদের ২৩টি আর বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট, জাকের পার্টিসহ ছোট কয়েকটি দলকে ৫ থেকে ৭টি আসন দেয়া হবে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির আবদার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। দশম জাতীয় নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের ৬০টি আসন দাবির প্রেক্ষিতে ১৮টি আর জাতীয় পার্টিকে ৪০টি আসন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বর্তমানে জাতীয় পার্টির এমপি সংখ্যা ৩৪ জন আর শরিকদের ১৫ জন। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির ৬ জন, জাসদ দুই অংশের ৫ জন, তরিকত ফেডারেশনের ২ জন, জাতীয় পার্টি (জেপি) ২জন এমপি রয়েছে। জোটের বাইরে নির্বাচন করে নিজ নিজ প্রতীকে ওয়ার্কার্স পার্টির ৩ জন ও জাসদের একজন এমপি হয়েছেন।
গতবারের চেয়ে এবার শরিক দলগুলোর চাহিদা বেশি। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নিকট একটি তালিকা দেয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির তালিকা এখনো তৈরী হয়নি কারণ তাদের দলের মনোনয়ন কার্যক্রম চলমান। তালিকায় জাসদ (ইনু) ১৫টি (এর মধ্যে ঢাকায় একটি আসন চায় তারা। ঢাকা-৫ এ ছাড় পাওয়ার জন্য জোর তদবির দলটির), জাসদ (আম্বিয়া) ৫টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১৫টি, তরিকত ফেডারেশন ৫টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ৫টি, সাম্যবাদি দল ২টি, গণতন্ত্রী পার্টি ৫টি, ন্যাপ ৩টি, আসন চেয়েছে। গণ আজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র এবং জাসদ (আম্বিয়া)- এই পাঁচটি দলের নিবন্ধন নেই। জাসদ-আম্বিয়া বাদে অন্য দলগুলো একটি করে আসনের তালিকা দিয়েছে। এছাড়া মহাজোটে অংশ নিতে চায় এমন দলগুলোর মধ্যে জাকের পার্টি ৫টি আসনের তালিকা দিয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান মোস্তাফা আমির ফরসাল এর জন্য ফরিদপুর ও আশেপাশের যেকোন জেলার একটি আসন চান। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথেও তাদের কথা হয়েছে বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশ জাতীয় জোট এর চেয়ারম্যান, তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা একটি আসন চান, নতুন গঠিত ইসলামিক ডেমোক্রাটিক এলায়েন্স ( মাও. মেজবাহুর রহমান চৌধুরী-এম এ আউয়াল) ১০টি আসনের তালিকা দিয়েছে। ইসলামি ঐক্যজোট, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্টসহ কয়েকটি দল তালিকা দিলেও একটি করে আসনের ব্যাপারে জোর লবিং চালাচ্ছে।
নির্বাচনী মহজোটে জাতীয় পার্টি ছাড়া সকলের চাহিদা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা। তাই আসন বন্টন না হওয়ায় তারা কোন প্রতীকে মনোনয়ন সংগ্রহ করবেন তা নিয়ে বিপাকে রয়েছে। এর মধ্যে অনেক দলের নিবন্ধন নেই। জোটের হয়ে নৌকা প্রতীক না পেলে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। সে বিষয়েও পিছিয়ে তারা।
এদিকে যে দলগুলোর নিবন্ধন রয়েছে তাদের প্রস্তুতি জোট থেকে যে কয়টি আসন পাবে তা নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবে প্রার্থীরা। আর এর বাইরে যেসব আসনে প্রার্থীদের অবস্থান ভাল সেসব আসনে নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচন করার পরিকল্পনা তাদের। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন বণ্টনের ফায়সালা হয়নি বিধায় বিপাকে রয়েছে তারা। নিজ প্রতীকে নির্বাচনের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
তাই মহাজোটের জন্য ছেড়ে দেয়া আসন এখনই প্রকাশের দাবি তুলেছে জোটের শরিক দলগুলো। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্তের আগেই এই ঘোষণা চায় তারা। মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার শেষদিন কিংবা আগের দিন আসন ভাগাভাগি তারা মানতে চান না। তাদের সাফ কথা, কোনোরকম ঝুঁকি কিংবা শঙ্কার মধ্যে তারা থাকতে চান না।
তাদের মতে, আমরা মহা অন্ধকারে পড়ে আছি। আমাদের কোনো নির্দেশনা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। পরে তড়িঘড়ি করা হবে। মনোনয়ন না পেলে যাতে কিছু বলতে বা করতে না পারি সেদিকেই হাঁটছে নেতৃত্বদানকারী দলটি। কিন্তু আমরা তা মানব না।
গতবারের কথা তুলে ধরে তারা বলেন, সব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে পরবর্তীকালে জোটের প্রার্থী দিলে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়। সে সময় আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বললে নানা সংকট ও দ্ব›দ্ব-সংঘাত হয়। হামলা-মামলার ঘটনা ঘটে। অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে থেকে যান। জোটের অনেক আসনে দলের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করায় চাপা ও ক্ষোভ অসন্তোষ ছাড়াও উল্টো তারা জোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে নেমে পড়ে। ফলে জোটের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই তারা এবার এ সংকটের ফয়সালা এখনই চান।
এছাড়া উইনেবল ক্যান্ডিডেট না হলে মনোনয়ন দেয়া হবে এ ধরণের কথাকে শরিক দলগুলোকে আসন না দেয়ার বাহানা হিসেবে দেখছে তারা। তারা মনে করেন জোট করা হয়েছে প্রতীক ও ভোটের সুবিধার জন্যই। আওয়ামী লীগেরও অনেক প্রার্থী রয়েছে যাদের এলাকায় কোন অবস্থান ছিল না কিন্তু দলের মনোনয়ন পেয়ে এমপি হয়েছেন।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ঘোষণার আগেই জোটের জন্য ছেড়ে দেয়া আসনের নাম ঘোষণা হওয়া উচিত। জোটের জন্য ছেড়ে দেয়া আসনগুলোর নাম আগে ঘোষণা করা না হলে সমস্যা বাড়বে।
জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা এবার এ বিষয়টি আগেভাগে নিশ্চিত হতে দলের মধ্যেও জোরালোভাবে দাবি তুলেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহার নিয়ে নানা নাটকের গতবারের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি চান না তারা।
মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। প্রার্থী ঘোষণার পর তা প্রত্যাহারেও দলের নির্দেশ মানতে হবে। তবে কিছু কথা থেকেই যায়। তাই আগে ভাগেই এর সমাধান প্রয়োজন।
১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, আমরা ১৪ দলের পক্ষে সংলাপের দিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব করেছি- একইদিনে ৩শ’ আসনে দলীয় ও জোটগত প্রার্থীর নাম ঘোষণার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য এবং সভাপতি মন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করব। এরপর ২৫ নভেম্বরের আগে-পিছে জোটগত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আগে নিজেদের তালিতা আমরা প্রস্তুত করবো, এরপর শরিকদের। যেসব আসনে জোট শরিকদের প্রার্থী থাকবে সেখানে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেবে। এতে তো কোনো সমস্যা দেখছি না। তাছাড়া এবার দলীয় সভাপতির নির্দেশের বাইরে কারও যাওয়ার সুযোগ নেই।



 

Show all comments
  • Mohammad Mosharraf ১৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩২ এএম says : 0
    ছোট দলগুলো যা পাবে কাই বেশি।
    Total Reply(0) Reply
  • Shah Alam ১৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩৩ এএম says : 0
    এদের বেশিরভাগ দলের প্রার্থীর চেয়ারম্যান হওয়ার মতো ভোট নেই
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi anas ১৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩৪ এএম says : 0
    এবার মসে হচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ameen Munshi ১৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩৪ এএম says : 0
    নাম ও নেতা সর্বস্ব দলগুলোকে একটি দিলেই তো বেশি।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ১৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩৫ এএম says : 0
    This is the challenge for Mohajot-okkofront
    Total Reply(0) Reply
  • হারুন ১৬ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:১৩ এএম says : 0
    প্রধান দল বাদে বাকীরা মরা লাস, এদেরকে দিয়ে কী লাভ,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ