Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পল্টনের ঘটনায় পুলিশের ৩ মামলা আব্বাস দম্পতিসহ আসামী ৪৮৮

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:২০ এএম, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮

রাজধানীর পল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি সমর্থকদের সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া এবং পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ সব মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস ও রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপির ৪৮৮ জন নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৬৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যাদের মধ্যে ৩৮ জনকে ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর ও ২৭ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এদিকে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারী যুবক ছাত্রদলের নেতা বলে দাবি করেছে পুলিশ। এছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, বিএনপি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পল্টনের হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।

থানা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, পল্টনের সংঘর্ষের ঘটনায় গত বুধবার রাতে পল্টন থানায় পৃথক তিনটি মামলা করে পুলিশ। মামলা নম্বর হচ্ছে- ২১, ২২ ও ২৩। এসব মামলায় আব্বাস দম্পতি ছাড়াও বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ ও অন্যদের অজ্ঞাত করে ৪৮৮ জনকে আসামী করা হয়েছে। এদিকে, পল্টনের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ৬৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিকেলের দিকে তাদেরকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ৩৮ জনকে ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর ও ২৭ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহারে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট, হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারী কাজে বাধা প্রদান, সড়কে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাগুলো গতকাল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক বলেন, মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসসহ দলটির অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুসহ ৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পল্টন থানা ও আদালত সূত্র বলেন, গতকাল গ্রেফতার ৬৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঠানো হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত শুনানী শেষে ৩৮ জনকে ৫দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর ও ২৭ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, নয়াপল্টনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়া যুবকের নাম শাহজালাল খন্দকার। তিনি পল্টন থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে গতকাল রাত পর্যন্ত ৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, পল্টন থানার মামলা নম্বরগুলো যথাক্রমে ২১, ২২ ও ২৩ । এর মধ্যে ২১ নং মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ১৯২ যাতে গ্রেফতার হয়েছে ১৯ জন। ২২ নং মামলায় এজাহারভুক্ত ১৫৯ আসামীর মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৩ জন। ২৩ নং মামলায় এজাহারভুক্ত ১৩৭ আসামীর মধ্যে ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পল্টনের হামলা বিএনপির পূর্ব পরিকল্পিত
ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পুলিশের ওপর হামলা বিএনপি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছে। নির্বাচনের আগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতেই এ অতর্কিত হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা সবাই বিএনপি এবং দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। তাদের গ্রেফতারে পুলিশ ইতোমধ্যেই তৎপরতা শুরু করেছে। গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার এ সব কথা বলেন।
কমিশনার বলেন, নির্বাচনের আগে পুলিশকে উসকানি দিতে আর অসৎ উদ্দেশ্যে আমাদের গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। কারা আগুন দিয়েছেন, তাদের দেখা গেছে। এছাড়া মিডিয়ার ফুটেজে স্পষ্টই দেখা যায় তারা কীভাবে পুলিশের সদস্যদের লাঠিপেটা ও ইটপাটকেল মেরেছে। আমাদের পুলিশ সদস্যরা জীবন বাঁচাতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে।
তিনি বলেন, যে আগুন দিয়েছে, গাড়ির উপর দাঁড়িয়ে যারা তান্ডব চালিয়েছে, বুকের কাপড় খুলে লাঠি দিয়ে যে তান্ডব নৃত্য তারা দেখিয়েছে তাদেরকে ভিডিও ফুটেজে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে তাদের অনেকের পরিচয় জেনেছি, শনাক্ত করেছি। তারা সকলেই বিএনপি এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী। আমরা ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৬০ জনকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করেছি এবং বাকি যারা রয়েছে তাদের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া প্রিন্ট মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্তকরণ অব্যাহত রেখেছি। ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, হামলার ঘটনায় আমাদের অফিসারসহ ২৩ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। যারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস মিছিল নিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম (ঢাকা-৮ আসন) কিনতে আসলে কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের দুটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। পুলিশ ছররা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়লে এক সাংবাদিকসহ বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী ও ২৩ পুলিশ আহত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ