Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাশরের ময়দানের ভয়াবহতা ও বিচার

মাওলানা এ এইচ এম আবুল কালাম আযাদ | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

তিন

যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব-নিকাশ সহজে হয়ে যাবে এবং সে তার পরিবার-পরিজনের কাছে হৃষ্টচিত্তে ফিরে যাবে এবং যাকে তার আমলনামা পিঠের পশ্চাদ্দিক থেকে দেয়া, হবে, সে মৃত্যুকে আহবান করবে। (সূরা ইনশিকাক-৭-১১)
এ আমলনামায় তার দুনিয়ার প্রতিটি কর্মের কথা অক্ষরে অক্ষরে লেখা থাকবে। দুনিয়াতে প্রতিটি মানুুষের সাথে আল্লাহ দু’জন ফেরেশতা রেখেছেন। একজন তার ডান কাঁধে থেকে তার নেক আমলগুলো লিখে রেখেছে। অন্যজন বাম কাঁধে থেকে তার বদ আমলগুলো লিখে রেখেছেন। হাশরের দিন প্রত্যেকের হাতে সে আমলনামা দেয়া হবে। এবিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে- ‘(আমলনামা দিয়ে আল্লাহ বলবেন) তুমি তোমার আমলনামা পড়। তুমি নিজেই আমলনামা পড়ে তোমার রায় লিখ- তোমার কী বিচার হওয়া উচিত।’ (সুরা বনী ইসরাঈল : ১৪) সে আমলনামা দেখার পর অনেকের দ্বিধাদ্বন্ধে পরে যাবে যে, তার আমলনামায় নেকআমল বেশি, নাকি বদআমল বেশি! তখন আল্লাহ তাদের সন্দেহ দূর করার জন্য মিযান তথা পাল্লার ব্যবস্থা করবেন। তাতে মেপে দেখাবেন কার আমলনামা কোন দিকে ভারী।
অতএব যার পাল্লা ভারী হবে, সে সুখীজীবন যাপন করবে। আর যার পাল্লা হালকা হবে, তার ঠিকানা হবে হাবিয়া। আপনি জানেন তা কি? প্রজ্জ্বলিত অগ্নি! (সূরা কারিয়া-৬-১১)
হাশরের ময়দানে জিহ্বা ও হাত-পা’র সাক্ষ্য : নিজের হাতে আমলনামা দেখে এবং পাল্লা দিয়ে ওজন করার পরও অনেকে কৃতকর্ম অস্বীকার করে বসবে। তারা বলতে চাইবে- আমরা এই এই কাজ করিনি। ফেরশতাগণ কম-বেশি বা ভুল করে লিখে রেখেছেন। তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের মুখ বন্ধ করে দিবেন। তাদের ইচ্ছাধীন বাকশক্তির বদলে তাদের জিহ্বা, হাত এবং পা’কে কথা বলার শক্তি দিবেন। তখন জিহ্বা তার কৃতকর্মের সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, হে আল্লাহ! সে আমার দ্বারা অমুককে গালি দিয়েছে, এই এই মিথ্যা বলেছে। এমনিভাবে হাত সাক্ষ্য দিবে- সে আমার দ্বারা অন্যায়ভাবে অমুকে প্রহার করেছে, আমার দ্বারা এই খারাপ কাজ করেছে। পা সাক্ষ্য দিবে- এ আমার দ্বারা এই এই খারাপ কাজ করেছে। পবিত্র কুরআনে আছে- ‘সেদিন প্রকাশ করে দিবে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও তাদের পা, যা তারা করত।’ (সুরা নুর : ২৪) এমনিভাবে জমিনও তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘সেদিন মাটি প্রত্যেকের সম্পর্কে বলে দিবে- হে পরওয়ারদেগার! তোমার বান্দা আমার উপরে থেকে নাফরমানী করেছে। আমাকে পায়ের নিচে থাকার জন্য বলে দিয়েছেন, তাই পায়ের নিচে ছিলাম ঠিক; কিন্তু সে আমার উপরে থেকে অবাধ্যতা করেছে।’ (সুরা যিলযাল)
হাশরের ময়দানে বিচারের পদ্ধতি : কেয়ামতের দিন যাদের হিসাব নেয়া হবে তারা মূলত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত হবে। এক শ্রেণী হলো, যাদের হিসাব খুব সহজ হবে। সেটি শুধু আমলনামা প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মোমিনদের জননী হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন যারই হিসাব নেয়া হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি জানতে চাইলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা কি বলেননি, যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে তার হিসাব সহজ করে নেয়া হবে! রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এটি হচ্ছে শুধু প্রদর্শনের ক্ষেত্রে। আর কেয়ামতের দিন যার হিসাব জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে নেয়া হবে, তাকে অবশ্যই শাস্তি দেয়া হবে।’ (বোখারি : ৬৫৩৭, মুসলিম : ২৮৭৬)।
অপর শ্রেণী হলো, যাদের হিসাব খুব কঠিন করে নেয়া হবে। ছোটবড় প্রত্যেক বিষয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যদি সত্যি বলে তাহলে খুবই ভালো। আর যদি মিথ্যা বলে অথবা গোপন করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের মুখে সিলমোহর এঁটে দেয়া হবে, তখন তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কথা বলতে থাকবে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব, তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’ (সূরা ইয়াসিন : ৬৫)।
হাশরের ময়দানে পাঁচটি প্রশ্নের জওয়াব: হাশরের ময়দানে ৫টি সুওয়ালের জাওয়াব না দেয়া পর্যন্ত কেউই তার ক্বদম নড়াতে পারবে না। রাসূল স. এরশাদ করেন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার কোনো সন্তান অর্থাৎ কোনো মানুষ হাশরের ময়দানে তার ক্বদম নড়াতে পারবে না ৫টি প্রশ্নের বা সুওয়ালের জাওয়াব না দেয়া পর্যন্ত। (এক) তার হায়াতে জিন্দেগী কিভাবে সে অতিবাহিত করেছে। (দুই) তার যৌবনকাল কিভাবে সে কাটিয়েছে। (তিন) তার অর্থ-সম্পদ কিভাবে সে উপার্জন ও অর্জন করেছে। (চার) তার উপার্জিত ও অর্জিত অর্থ-সম্পদ কোন পথে সে ব্যয় করেছে। (পাঁচ) সে যে ইলম অর্জন করেছে তাদনুযায়ী সে কি আমল করেছে। এই পাঁচটি সুওয়ালের জাওয়াব না দেয়া পর্যন্ত সে তার ক্বদম নড়াতে পারবে না। কাজেই, পুরুষ-মহিলা প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ইন্তিকালের পূর্বে হায়াতের মধ্যেই উক্ত সুওয়ালের জাওয়াব সমূহ ঠিক করে নিতে হবে। অন্যথায় কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে।
কুরআন ভূলে যাওয়ার জন্যে হাশরের ময়দানে কঠোর শাস্তি: যে কুরআন শরিফ ভুলে গেছে তার কঠিন অবস্থা হবে। হযরত সাদ ইবনে ওবাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কুরআন শরিফ পড়েছে, অতঃপর (অলসতা অমনোযোগিতার কারণে) ভুলে গেছে, সে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে। (মেশকাত শরিফ)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিচার


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->