Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের নীরবতা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:৩৯ পিএম

 (বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের নীরবতা এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনে ভারতের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। বিশ্বের প্রভাবশালী ওই গণমাধ্যমটিতে ‘সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ঃ বিএনপি অংশ নিচ্ছে, সেটাই কি ভারতের উদাসীনতার কারণ?’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি লিখেছেন তাদের দিল্লি প্রতিনিধি শুভজ্যোতি ঘোষ। ইনকিলাব পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।)
বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে যে দেশটি আগাগোড়া জোরালো সমর্থন জানিয়ে এসেছিল, সেটি ছিল ভারত। ওই নির্বাচনকে সফল করার লক্ষ্যে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব নির্বাচনের ঠিক আগে ঢাকা সফর পর্যন্ত করেছিলেন।
কিন্তু পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পাঁচ বছর বাদে বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচনকে ঘিরে ভারত কিন্তু এবার অনেকটাই নিস্পৃহ। এই নির্বাচনের প্রাক্কালে ভারতের দিক থেকে তেমন কোনও সক্রিয়তাই চোখে পড়ছে না। কিন্তু কেন ভারত এধরনের অবস্থান নিচ্ছে, বাংলাদেশে এবারের ভোটাকেই বা তারা কী চোখে দেখছে? আসলে বাংলাদেশে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়ে ভারতের দিক থেকে যে ধরনের অতি-সক্রিয়তা ছিল, পাঁচ বছর বাদে এবারে তার কিন্তু ছিটেফোঁটাও নেই।
এ বছরেই নির্বাচন হয়েছে নেপাল বা মালদ্বীপেও। সেখানেও ভারতের দৃশ্যমান কোনও ভূমিকা চোখে পড়েনি। দিল্লিতে ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিসের সিনিয়র ফেলো স্মৃতি পট্টনায়ক মনে করছেন, খুব সচেতনভাবেই ভারত এবার বাংলাদেশের নির্বাচন থেকে একটা দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে। ড: পট্টনায়কের কথায় ‘২০১৪- তে ভারত যেভাবে পররাষ্ট্রসচিবকে (সুজাতা সিং) ঢাকায় পাঠিয়েছিল সেই অভিজ্ঞতা কিন্তু খুব সুখকর হয়নি। সেটাকে অনেকেই ভারতের হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখেছিলেন; যদিও ভারতের আসল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে একটা সাংবিধানিক বিপর্যয় এড়ানো। ‘কিন্তু এখন বাংলাদেশের রাজনীতি যে ধরনের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তাতে ভারতের উদাসীন থাকাটাই উচিত। আর তারাও ঠিক সেটাই করছে। ভুললে চলবে না, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কও এর মাঝে অনেক পরিণত ও প্রিিতষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।’
বাংলাদেশে বিগত নির্বাচনে বিএনপি জোট অংশ নিতে রাজি হয়নি বলেই সেই নির্বাচনকে ঘিরে অত প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু এবারে নির্বাচন অনেকটাই অংশগ্রহণমূলক হতে যাচ্ছে। ফলে ভারতেরও অত মাথা ঘামানোর কোনও প্রয়োজন নেই, বিবিসিকে বলছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী। তার কথায় “বড় পরিবর্তন বাংলাদেশে যেটা দেখতে পাচ্ছি তা হল ভারতে যেটাকে আমরা ‘মহাগঠবন্ধন’ বলি, সেই ধাঁচে ওখানেও বিরোধীদের ঐক্যফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করেছে।” ‘এখন তো আবার যুক্তফ্রন্টও চলে এসেছে। ফলে নির্বাচন সঠিক পথেই আছে মনে হচ্ছে। আর এভাবে যদি সব এগোয় তাহলে তো ২০১৪ ’র তুলনায় সেটা সম্পূর্ণ আলাদা!’
‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা তো এখন স্বাভাবিক পথেই আছে মনে হচ্ছে। সব দলও নির্বাচনে যোগ দিতে চাইছে। যেমনটা স্বাভাবিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হয় আর কী। কাজেই মনে তো হয় না এই নির্বাচনকে সমালোচনা করার কোনও সুযোগ আছে বলে!’
বাংলাদেশে ভারতের আর এক সাবেক হাই কমিশনার বিনা সিক্রিও মনে করেন, ‘যদিও এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারপরও বিএনপির নির্বাচনে যোগদান খুবই ইতিবাচক ব্যাপার।’ ‘তারা যেভাবে জোট শরিকদের সঙ্গে কথা বলছে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করছে, যেমনটা স্বাভাবিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে - সেটা অবশ্যই দারুণ বিষষ।’ ‘ভারত এখানে কী করল, বা কী করল না ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে তা খোঁজার কোনও দরকারই নেই’ পরিষ্কার মত দেন বিনা সিক্রি।
বাংলাদেশে এবারের নির্বাচনী পরিবেশে এখনও পর্যন্ত ভারত-বিরোধিতার কোনও আবহ তেমন নেই, দিল্লির দৃষ্টিতে সেটাও অত্যন্ত ইতিবাচক একটা পদক্ষেপ। ফলে আগ বাড়িয়ে সে দেশের নির্বাচন নিয়ে অতি-সক্রিয়তা দেখিয়ে ওই পরিবেশ বিগড়ে দেওয়াও কোনও বুদ্ধিমানের কাজ নয়, এটাও হয়তো ভারত মাথায় রাখছে।
পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তীর কথায় ‘আমি তো বলব এটা পারস্পরিক সম্পর্কের একটা ম্যাচিওরিটি, যেখানে অন্য দেশকে নিজের নির্বাচনে ডোমেস্টিক ইস্যু বানানোর কোনও দরকার পড়ে না’। ‘হ্যাঁ, দুদেশের মধ্যেকার অভাব-অভিযোগ বা অমীমাংসিত ইস্যুগুলো নিয়ে অবশ্যই দুদেশের সরকারকেই ডিল করতে হবে। সেটা কিছুটা হয়নি, কিছুটা আবার হয়েছেও। যেমন স্থল সীমান্ত চুক্তি হয়েছে, সমুদ্র-সীমা চুক্তি হয়েছে। প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে, আধুনিকীকরণের কাজও হচ্ছে। তো এগুলো তো একটা সুফল দেবেই!’ বলছিলেন পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তীর। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এই পরিণতি আর ভোটে বিএনপি’র যোগদান, এই দুটো ফ্যাক্টরই আসলে পাঁচ বছর আগের তুলনায় ভারতের অবস্থানকে আজ পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। পররাষ্ট্রসচিবকে পাঠানো তো দূরস্থান, বাংলাদেশের এবারের নির্বাচন নিয়ে তাই এখনও কোনও বিবৃতি দেওয়ারও প্রয়োজনবোধ করেনি ভারত।



 

Show all comments
  • মোঃ আব্দুল কাদির ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ৮:৪০ পিএম says : 0
    সময়ই প্রকাশ হবে ভারতের আসল রূপ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ