পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরগরম হয়ে উঠেছে গ্রাম-গঞ্জ-জনপদ। দীর্ঘ দশ বছর পর বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ‘টোটাল রাজনীতি’ এখন নির্বাচনমুখী। আর রাজধানী ঢাকা অতিক্রম করে নিবাচনমুখী রাজনীতির ঢেউ লেগেছে গ্রামবাংলায় পাড়া-মহল্লায়। ভোট রাজনীতিতে এসেছে কাক্সিক্ষত জাগরণ। ঘরে-বাইরে অফিস-আদালত পাড়া, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সওদাগরী পাড়া, হাট-বাজার, দলীয় অফিস থেকে শুরু করে ড্রয়িং রুম সবখানেই আলাপে-আড্ডায় ঘুরেফিরে উঠে আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এপিঠ-ওপিঠ সরব আলোচনা। হেমন্ত ঋতুর মাঝামাঝি এই সময়ে উত্তুরের হিমেল বাতাসে শীতের আমেজ যতই বাড়ছে, গরম চায়ের কাপে জমজমাট আড্ডায় নির্বাচনী আলাপচারিতা ততই জোরদার হচ্ছে।
দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির এবারের নির্বাচনী চ্যালেঞ্জে মাঠে অবতীর্ণ হওয়ার ঘোষণার ফলেই শহর-নগর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামান্তরে তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতি হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত। গত ১১ নভেম্বর (রোববার) বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে’ আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার পরই পাল্টে যেতে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গনের দৃশ্যপট। কেননা এর মধ্যদিয়ে দেশে এবার একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে রাজনীতি সচেতন জনগণের প্রত্যাশা পরিপূরণের পথ সুগম এবং রাজনীতিকে দীর্ঘ খরা ও অচলায়তন কেটে যাচ্ছে বলেই সাধারণ মানুষ একে ভোট রাজনীতিতে সুবাতাস হিসেবে দেখছেন।
এদিকে বন্দরনগরীর ৩টি আসনসহ চট্টগ্রাম জেলার ১৬ আসন ও তিনটি পার্বত্য জেলার তিনটি আসন মিলে মোট ১৯টি নির্বাচনী এলাকার গতকাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫শ’ মনোনয়ন প্রত্যাশী বা সম্ভাব্য প্রার্থী আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ এবং বিএনপির ‘ধানের শীষ’ ছাড়াও জাতীয় পার্টির ‘লাঙল’সহ বিভিন্ন (নিবন্ধিত দলীয় প্রতীক) প্রতীকের জন্য দলীয় বা জোট-মহাজোটগত মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। বিএনপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেয়ার জন্য আরও তিন দিন সময় থাকায় ‘ধানের শীষে’র জন্য আরো অনেকেই ফরম কিনতে ঢাকায় রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী বা সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও তা জমা দিয়েই ছুটেছেন নিজেদের নির্বাচনী এলাকায়। তারা তৃণমূলের নেতা-কর্মী, সমর্থক, স্থানীয় সমমনা মুরব্বী-মাতব্বর, আত্মীয়-পরিজন, আলেম-ওলামা, এলাকায় প্রভাবশালী মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়ে দোয়া ও সমর্থন কামনা করছেন। আবার অনেকে নিজ নিজ মনোনয়ন ‘পাক্কা’ করতে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে গিয়ে ঘন ঘর দেন-দরবার, তদবির করছেন। ভোটের আগে এ যেন মনোনয়নের লড়াই চলছে।
মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের অধিকাংশ নির্বাচনী আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে এ নিয়ে আগের মতো খুব একটা তাড়াহুড়া ভাব দেখা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে কিছু কিছু মনোনয়নপত্র জমা পড়লেও বেশিরভাগ জমা পড়তে পারে আগামী সপ্তাহ নাগাদ। এ মুহূর্তে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের দলীয় ও জোটগত মনোনয়ন নিশ্চিত করার দিকেই বেশী মনোযোগী এবং টেনশনের মাত্রাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিসহ মাঝারি ও ছোট দল-জোটগুলোর মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, ওয়ার্ড পর্যায়ের তৃণমূল দলীয় কার্যালয়গুলো এখন আগের তুলনায় বেশ সরগরম। দুপুরের পর থেকেই দলীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পদভারে মুখরিত হচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক অফিসগুলো। নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সমমনা পেশাজীবীগণ ভোট রাজনীতির হালচাল বিশেষ করে দলীয় ও জোটগত মনোনয়নের ভাগ্যের শিকা কোন এলাকায় কার দিকে ছিঁড়বে তা নিয়ে পর্যালোচনায় মেতে উঠেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কদর বহুগুণে বেড়ে গেছে। আপাতত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু না হলেও যার যার প্রভাব বলয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তৃণমূলের সমর্থনকে খুব বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। কেননা চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার অনেক আসনেই দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে তৎপর রয়েছেন। বিশেষত ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বে মহাজোটে দেখা দিয়েছে প্রার্থীজট।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ফলে গ্রাম-জনপদে ভোট রাজনীতি ক্রমেই চাঙ্গা হওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ চট্টগ্রামের ইস্ট-ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচন বয়কট করা ফলদায়ক নয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সত্যিকারের ঐক্য বজায় রাখতে পারলে তারা একটি ঐক্যবদ্ধ ফোর্স হবে। তখন আর একচেটিয়া দখল করা সম্ভব হবে না। আমজনতা ভাববে, ভেতরে ভেতরে তারা তৈরি আছে। সাধারণ মানুষ এখন অনেক সচেতন। প্রবীণ সমাজ চিন্তাবিদ অধ্যাপক সিকান্দার খান মনে করেন, বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশগ্রহণের মানে সরকারের ওপর চাপ কমেনি; বরং আরও বেড়ে গেলো।
একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার ইনকিলাবকে বলেন, সকলে মিলেমিশে নির্বাচন করলে তা দেশের জন্যই ভালো। তবে নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য না হয় এরজন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে। এ সরকারের আমলে পদোন্নতি ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের পরিবর্তে নির্বাচনী কর্মকান্ডে অভিজ্ঞ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা সমীচীন হবে। নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নমুনা তো দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচন আরও পিছিয়ে দেয়ার দাবিটিও অত্যন্ত যৌক্তিক। এতে সংবিধানের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। এরফলে ব্যাকপুটে থাকা দেশের অন্যান্য ছোট দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ সুগম হবে। তাছাড়া বিএনপিসহ ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ গায়েবী মামলা, ধরপাকড়, কারাবন্দী, হুলিয়ার জন্য ভোটের মাঠে তেমন সক্রিয় হতে পারেনি। ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার অভিমত দেন, নির্বাচন কমিশনকে কোন পার্ট নয়; রেফারির ভূমিকায় থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।