Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাতানো নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন সোমবার সংসদ নির্বাচনের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর থেকে পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করার কথা ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি নির্বাচন করতে রাজি হওয়া বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আংশিক দাবি মিটাতেই এ তারিখ পিছানো হয়েছে। খবর আল-জাজিরা।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ও অমিমাংসিত প্রধান রাজনৈতিক বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সরকারের সাথে আলোচনার দাবি জানানোর মধ্যে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের এ ঘোষণা দেয়া হল। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এখনো নির্বাচন একমাস পিছানো, বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দেয়া এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা নয়, নির্বাচনকালিন বিশেষ মন্ত্রীসভা গঠনের দাবি জানাচ্ছে।
অন্যদিকে শেখ হাসিনা ও তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জোর দিয়ে বলছে, আসন্ন নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্যগণ ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকা উচিত। পরস্পরের প্রতি রাজনীতিবিদদের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা অনাস্থা এবং ক্ষতিকর অনমনীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে বাংলাদেশের বিগত চারটি জাতীয় নির্বাচন (১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছে। ২০১৪ সালের সংসদীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়েই নির্বাচনকালীণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংবিধানিক বিধান বিলুপ্ত করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করায় ক্ষমতাসীন দল ৫০ শতাংশ সংসদীয় আসন বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় পেয়ে যায়। এই নির্বাচনের পর থেকেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে সমালোচনা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা, কেউ কেউ ২০১৪ সালের নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন পর্যন্ত বলেছেন।
এই অবস্থা যদি বিদ্যমান থাকে এবং আগামী নির্বাচন ২০১৪ সালের মতো পরিবেশেই হয়, শেখ হাসিনা হয়তো খুব সহজেই টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে পারবেন। টানা ১০ বছরেরও বেশী সময় ধরে ১৭ কোটি মানুষের দেশ শাসন করা সহজ ব্যাপার নয় এবং ১৯৭১ সাল থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে কোন সামরিক কিংবা রাজনৈতিক নেতাই এ ব্যাপারে সাফল্য অর্জন করতে পারেননি।
দুর্বল বিরোধীদলের তুলনায় শেখ হাসিনা একজন কর্তৃত্বপূর্ণ নেত্রী। তার রয়েছে অসাধারণ রাজনৈতিক দক্ষতা ও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তীক্ষ্ন দৃষ্টি। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক বিরোধীদের ধ্বংস ও পাশাপাশি রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে ধর্মভিত্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষ দুই ক্ষেত্রেই অনেক বন্ধু তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ১০ বছরের শাসনের পরে, শেখ হাসিনার দল তাদের মতাদর্শ অনুযায়ী পছন্দের লোকদের বাংলাদেশের প্রধান রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সব পর্যায়ে নিয়োগ করে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। এর ফলে তার দলকে ক্ষমতায় থাকা নিয়ে কোন বিরোধের সম্মুখিন হতে হয়নি।
শেখ হাসিনার অধীনে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন: হাসিনার শক্ত শাসন বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এনেছে, যার ফলে গত দশ বছরে দর্শনীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল বছরে ১,৩৩৫ ডলার। ২০১৩ সালের থেকে যা ৪০ শতাংশ বেশী। একই সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় বেড়েছিল যথাক্রমে ১৪ ও ২১ শতাংশ। মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ভারত এবং পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে। ২০২৪ সালে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতাও বাংলাদেশ অর্জন করেছে।
কার্যত একদলীয় রাষ্ট্র: বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্রমশ কর্তত্ববাদী হয়ে উঠছে এবং কিছু ক্ষেত্রে, এটি এখন কার্যত এক দলীয় একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক বিরোধীদের, এমনকী জনগণের মূল সাংবিধানিক অধিকারও শাসকদলের করায়ত্ত হয়ে পড়েছে।
গত ১০ বছরে নির্বিচারে গ্রেফতার, আটক, গুম, এবং রাজনৈতিক ব্যাক্তিদেরকে নির্বিচারে হত্যাকান্ড আশংকাজনকভাবে বেড়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ এবং ‘মাদক-নির্মূল’ অভিযানের নামে সম্পূর্ণ দায়মুক্তির সাথে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী নিয়মিতভাবে সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীদের হত্যা করার মতো ক্রিয়াকলাপে নিয়োজিত থাকছে।
সরকারের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী আচরণে গত এক দশকে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগিরা দেশের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রগুলো একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে নিরাপদে আশ্রয়ে পাচার হয়েছে এবং আয় বৈষম্য আকাশ ছুঁয়েছে। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে ‘ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির’ তালিকায় স্থান পেয়েছে।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলির রাজনৈতিকীকরণের ফলে খেলাপি এবং অপরিশোধিত ঋণের বিপদজনক বৃদ্ধির সাথে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। শুধুমাত্র ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালেই মোট খেলাপি ঋণ পর্যন্ত প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।



 

Show all comments
  • সপ্ন বিলাসী মন ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫২ এএম says : 0
    Right
    Total Reply(0) Reply
  • Saiful Islam ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫৩ এএম says : 1
    এই ইসির অধীনে আপনি আপনার ভোট দিতে চান।তা দিবেন।আমার মতো পুলিশে ঘাড় ধরে ভোট কেন্দ্র থেকে বাহির করে দিবে।বলবে আপনার ভোট হয়েছে চলে যান।তখন আপনি কি করবেন।তাই তার আগে নিদলীয় সরকারের অধীনে এই সিইসি বাদ দিয়ে নতুন করে তফসিল ঘোষনা করে নিবাচন দিন।ষোল সতের কুটি জনগণ কে বাচতে দিন।
    Total Reply(0) Reply
  • এম হোসাইন ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫৪ এএম says : 1
    দুঃশাসন ও অপশাসন প্রতিরোধে নৌকা প্রতীক বর্জন করুণ ************************************* নৈতিকবোধ জাগ্রত করে আপনার ভোটটি প্রদান করুণ ************************************* আওয়ামীলীগ এর দুঃশাসনের কড়া জবাব আপনার মূল্যবান ভোটটি প্রদানের মাধ্যমে নিশ্চিত করুণ।আওয়ামী ১০বছরের শাসন ব্যবস্থা অত্যন্ত করুণ ও দুঃসহ। অন্যায়, অবিচার,জুলুম,নিপীড়ন,হত্যাকাণ্ড,জঙ্গি তৎফরতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড,রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার,খুন,গুম,অরাজকতা, লুটতরাজ, সন্ত্রাস, ধর্ষণ এবং দুর্নীতি চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।দেশের সম্মান প্রতিষ্ঠার অন্যতম বাহক ও বাংলার অকুতোভয়, সাহসী এবং শ্রেষ্ঠ সন্তান সেনাবাহিনীর ৫৮ চৌকস সেনাকর্মকর্তাদের ওপর রাষ্ট্রীয় মদদে এবং পরিকল্পিত নকশা স্বরুপ নারকীয় হত্যাকাণ্ড সৃষ্টি করে।যা বিডিআর বিদ্রোহ নামে আলোচিত। আওয়ামী দুঃশাসন ও অপকর্মের সর্বপ্রথম ও সর্বনিকৃষ্ট এটি ঘটনা।যা দেশ- বিদেশে বাংলাদেশের সম্মান ও অর্জন চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়।এটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত।দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ এই শক্তিকে বিনষ্ট করার নীল নকশা হিসেবে এবং রাষ্ট্রীয় মদদে এটি সংঘঠিত হয়। এই হত্যকান্ড এখনো দেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করে।এটি আওয়ামী দুঃশাসন ও অপশাসনের মুহুর্তে ঘটিত একটি ঘটনা।তাছাড়াও দেশের বহমান শান্তি, বিশৃঙ্খলা ও সাংবিধানিক শক্তিকে নির্জীব ও দলীয়করণের মাধ্যমে একের পর এক অন্যায় ও অপরাধ করে নিকৃষ্ট ও দুঃশাসনের ইতিহাস সৃষ্টি করে।দেশের হাজারো মানুষকে অন্যায় ও বিনাদোষে হত্যার ইতিহাস রচনা করে।জনগণের গণবিপ্লব ভোটের অধিকার কেড়ে নেই।যা কখনো কারো কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।আওয়ামীলীগের ১০ বছরের অপশাসনে দেশের সার্বিকক্ষেত্রে হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।দেশ ও জাতি নির্যাতনের যাতাকলে আবদ্ধ ছিল।তাই আওয়ামী অপশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান।আওয়ামীলীগ ও নৌকা প্রতীককে ঘৃণাভরে প্রত্যাক্ষাণ করুণ।জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীবিত হতাশা নিরসন করবে।ভোটের বিপ্লব ঘটিয়ে স্বৈরশাসককে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হোন। নির্বাচনের দিন ভোট চোর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিতাড়িত করার সর্বশক্তি সঞ্চয় করুণ। জনগণের বিজয় সন্নিকটে।জনগণ বিজয়ের হাসিতে হাসবে যেদিন অপশাসনের কবর রচনা হবে।ঐক্যবদ্ধ শক্তির উদ্ভব ও বিকাশ আওয়ামী স্বৈরশাসকের প্রতিরোধের হাতিয়ার।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Suman ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫৫ এএম says : 1
    একশতে একশ
    Total Reply(0) Reply
  • Sabbir Hossain Tutul ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫৫ এএম says : 0
    Absulately right
    Total Reply(0) Reply
  • saifan ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:২২ এএম says : 0
    নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধিনে নির্বাচন দেওয়া হোক এই ইসি কে বাদ দেয়া হোক
    Total Reply(0) Reply
  • Mizan Chowdhury ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৮ পিএম says : 0
    সরকারের এতই জনপ্রিয়তা এতই উন্নয়ন তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে এত ভয় কিসের ?????????
    Total Reply(0) Reply
  • মো. হুমায়ুন কবির ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৯ পিএম says : 0
    গোটা জাতি সামনে একটা নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত, পরিচ্ছন্ন, সন্দেহ-বিতর্ক-আপত্তিহীন এবং সর্বোপরি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখার গভীর আগ্রহে অপেক্ষমান।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Suman ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৯ পিএম says : 0
    আগেই জানা কথা, সুষ্ঠু নির্বাচন দিবে না
    Total Reply(0) Reply
  • Md Nizam ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:১১ পিএম says : 0
    পাতানো নির্বাচন এটাই মনে হচ্ছে,,,,সে দিকে যাচ্ছে,,৷
    Total Reply(0) Reply
  • M.D. ASMOTH ALI ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ২:৪৪ পিএম says : 0
    JOY BANGLADESH
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ