পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও রক্ষনাবেক্ষণে বছরে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। জনগনের রাজস্ব এই ব্যয়ের প্রধান উৎস। বিশেষত সড়ক-মহাসড়কে নদ-নদী উপর নির্মিত সেতু ও শহরের ব্যস্ততম এলাকায় নির্মিত উড়ালসেতু থেকে আদায়কৃত টোল রাজস্ব আয়ের একটি বড় খাত। সাম্প্রতিক সময়ে পিপিপির আওতায় নির্মিত ওভারব্রীজগুলোর টোল থেকেই বিনিয়োগ লাভসহ উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতানুগতিক ধারার এই টোল আদায় পদ্ধতিতে নিয়মিত যানজটের বিড়ম্বনা বেড়ে যাওয়ায় আরো সহজ ও গতিশীল টোল আদায় পদ্ধতির কথা ভাবার কোন বিকল্প নেই। বিশেষত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায়শ: ৫০-৬০ কিলোমিটার লম্বা যানজটের শিকার হতে হচ্ছে। এর ফলে এ রুটের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনগুলোকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। একই অবস্থা বিরাজ করছে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুসহ দেশের অন্যান্য ব্যস্ত মহাসড়কগুলোর টোলপ্লাজা সন্নিহিত এলাকা এবং রাজধানীর প্রবেশপথের উড়ালসেতুর গেটওয়েগুলোতেও। এহেন বাস্তবতায় টোল প্লাজায় প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের পরিকল্পনা করছে সরকার। ইতিমধ্যে দেশের অন্তত ১৪টি টোলপ্লাজায় অনলাইন ভিত্তিক রিয়েলটাইম বেইজ্ডমনিটরিং সিস্টেম চালু থাকলেও সেতুর দুই প্রান্তে যানজট ও টোল আদায়ে সময়ক্ষেপনের বিড়ম্বনা কমিয়ে আনার প্রযুক্তিগত সুবিধা সংযুক্ত করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকার এখন সর্বাধুনিক ‘টাচ এন্ড গো’পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
দেশের সবেচেয়ে ব্যস্ততম ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল ‘টাচ এন্ড গো’ পদ্ধতিতে টোল আদায় শুরু হয়েছে। এই পদ্ধতিতে স্মার্টকার্ডে প্রিপেইড সিস্টেমে টাকা পরিশোধ করে চালকরা স্বল্পতম সময়ে টোলপ্লাজা অতিক্রম করার কারণে যানজট অনেকটা কমে আসতে পারে। তবে পরীক্ষামূলক ব্যবস্থার মূল্যায়ন করে টোল আদায়ে আরো কার্যকরভাবে স্বচ্ছতা এবং গতিশীলতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহন করা যেতে পারে। একই রুটে নিয়মিত যাতায়াতকারী পরিবহনের চালককরা স্মার্টকার্ড ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ‘টাচ এন্ড গো’ পদ্ধতিতে অত্যন্ত কম সময়ে টোল প্লাজার বিড়ম্বনা পার হতে পারছে। দেশের অন্যান্য সেতুর টোল প্লাজা এবং ফ্লাইওভার গুলোকেও এই পদ্ধতির পাশাপাশি অনলাইনভিত্তিক রিয়েল টাইম মনিটরিং সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসলে যানজট কমে আসার পাশাপাশি টোল আদায়ে গতিশীলতা, স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা সহজ হতে পারে। একই মহাসড়কের কোথাও ম্যানুয়েল পদ্ধতি কোথাও ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করে যানজট নিরসন ও টোল আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ব্যস্ত মহাসড়কের সর্বত্র টোল আদায়ে যথাসম্ভব দ্রæত ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
দেশের সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থায় এক প্রকার নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। মালিক-চালকদের যথেচ্ছাচার, সড়ক-মহাসড়ক রক্ষনাবেক্ষণ ও নিরাপত্তায় অব্যবস্থাপনা, যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে জনদুর্ভোগ চরমে। এহেন বাস্তবতায় টোল আদায়ে স্বচ্ছতা, গতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী। ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে টোল আদায়ের সুযোগে এবং যান্ত্রিক ত্রæটি দেখিয়ে টোল প্লাজায় অতিরিক্ত টোল আদায় এবং গাড়ীচালকদের হেনস্তা হওয়ার অভিযোগও শোনা যায়। সম্প্রতি বুড়িগঙ্গা সেতুর টোল আদায়কে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে হঠাৎ করেই ট্রাকপ্রতি ৩০০ টাকা টোল বৃদ্ধির কারণে ট্রাক চালকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টির খবরও প্রকাশিত হয়েছে। একই মহাসড়কে অনেকগুলো নদীর উপর নির্মিত টোল প্লাজা থাকার কারণে অনেক সময় নষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে টোলপ্লাজার সংখ্যা কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পুরনো সেতুগুলোর টোল আদায় স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। ম্যানুয়েল পদ্ধতি টোল আদায়ের মাধ্যমে অতিরিক্ত টোল আদায়, সময় ক্ষেপন ও চালকদের হয়রানির সুযোগ বন্ধ হওয়া আবশ্যক। সারাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করতে হলে বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে চালু সিস্টেমটিকে জনপ্রিয় করে তোলার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্মার্টকার্ড পদ্ধতিতে সাড়া দিতে গাড়ী চালক ও মালিক পক্ষের সচেতনতা ও সমর্থন নিশ্চিত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সেতু ও সড়ক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। টোল আদায়ে ডিজিটাল পদ্ধতি সফল হলে তা ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা বাস্তবায়নে একটা বা অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।