Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মনোনয়ন ফরম নিলেন ৪ ইয়াবা ব্যবসায়ী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসন থেকে চারজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তারা হলেন-বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম, ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভি রফিক উদ্দিন ও বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মৌলভি আজিজ উদ্দিন। এলাকাবাসীর ধারণা, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কালো টাকার কাছে হেরে যাচ্ছেন দলের ত্যাগী ও যোগ্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৭৩ জনের হালনাগাদ করা ‘ইয়াবা গডফাদারের’ তালিকায় সংসদ সদস্য বদির নাম ১ নম্বরে। জাফর আলম, মৌলভি আজিজ ও মৌলভি রফিকের (এ দুজন সহোদর) নাম যথাক্রমে ৬, ২৫ ও ২৬ নম্বরে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে তাদের কয়েকজনকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দলের মনোনয়ন ফরম সবাই কিনতে পারবেন এ নিয়ে কোন বাধা নিষেধ নেই। তবে তালিকাভুক্ত অথবা তালিকাবিহীন কোন অপরাধীকেই দলের মনোনয়ন দেয়া হবে না।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জাফর আলম ও মৌলভি রফিক উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, তারা নির্বাচন করার জন্যই দলের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। জনপ্রিয়তা না থাকলে তারা জনপ্রতিনিধি হতে পারতেন না। ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গেও তারা জড়িত নন।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে এ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ২১ জন। তাদের মধ্যে টেকনাফের ১২ ও উখিয়ার ৯ জন।
জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ইয়াবার বদনাম থেকে টেকনাফ ও উখিয়ার মানুষকে দূরে রাখতে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু মনোনয়ন বোর্ডে সংসদ সদস্য বদির পক্ষে সাফাই গাইতে ১০-১৫ জন ডামি মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন। বদিসহ কয়েকজন তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীর দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার বিষয়টি লজ্জাজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। তিনি কোনো অপরাধী বা মাদক ব্যবসায়ীকে মনোনয়ন দেবেন না বলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছেন টেকনাফের ২১ জনপ্রতিনিধি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তারা এই ব্যবসা করে আসছেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদারদের তালিকায় উঠে এসেছে সাবেক ও বর্তমান মিলে ২১ জনপ্রতিনিধির নাম। এদের মধ্যে রয়েছেন, উখিয়া-টেকনাফের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, তার ভাই টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মৌলভী মুজিব, রাশেদ মোহাম্মদ আলী ও মাহাবুব মোরশেদ, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাফর আলম, তার ছেলে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান। তালিকায় রয়েছেন, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক উদ্দিন, তার ভাই টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন, টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আলম, টেকনাফ পৌর যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক ও পৌর কাউন্সিলর নুরুল বশর নুরশাদ, টেকনাফ পৌরসভার নারী কাউন্সিলর কোহিনুর আকতারের স্বামী শাহা আলমসহ অনেকেই। তালিকাভুক্ত এসব ইয়াবা জনপ্রতিনিধিদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে মাদকবিরোধী বিশেষ টাস্কফোর্স। এ সময় অবৈধ টাকায় গড়া তাদের সুরম্য প্রাসাদও ভেঙে দেয়া হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ