নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
কার্তিক মাসের শেষ প্রহর। শীতের আমেজ ঢাকা জুড়েই। কুয়াশার চাদর সরিয়ে মাত্রই উঁকি দিয়েছে রক্তিম সূর্য। সুন্দর সকালটা শুরু হয়েছিলো প্রাকৃতিক নিয়ম মেনেই। সেই সকালটা আরো সুন্দর, মনোরম হয়ে ধরা দিলো মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে। নতুন সাজে সেজেছে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের আউটফিল্ড। চৌকোনা সবুজ আর হলদে আভায় মোড়ানো চারদিক। যেন সবুজ গালিচায় বিছানো দাবার কোর্ট। এমন সুন্দর দিনেও বাংলাদেশ ক্রিকেটে ব্যাটিং আবারও ঢাকা ঘোর কুয়াশায়! তাহলে কি লাক্কাতুড়ার ভূত তাড়া করতে করতে চলে এসেছে মিরপুরেও!
সেই ভূত ব্যাট হাতে ওঝা হয়ে তাড়ালেন বাংলাদেশের দুই ‘টেস্টম্যান’ মুশফিকুর রহিম আর মুমিনুল হক। সময়ের সঙ্গে দিনটি হয়ে উঠল রৌদ্রোজ্জ্বল, মুমিনুল-মুশফিকে ব্যাটিং দীপ্তিতে দলের ইনিংসও হয়ে উঠল ঝলমলে। বারবার দুইশর নিচে গুটিয়ে যাওয়া দলের এক জুটিতেই এল দুইশর বেশি। অনেক দিন পর টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ পেল আনন্দময় দিন। মুমিনুল-মুশফিকের সেঞ্চুরি ও রেকর্ড জুটিতে প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ তুলেছে ৯০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩০৩ রান। ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার দেড়শ ছাড়ানো ইনিংসে মুমিনুল ফিরেছেন ১৬১ রানে। ১১১ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন মুশফিক। আগের আট ইনিংসে দুইশর নিচে গুটিয়ে গেছে যে দল, এ দিন সেই দলই পেয়েছে ২৬৬ রানের জুটি। চতুর্থ জুটিতে যা বাংলাদেশের সেরা তো বটেই, প্রথম দুইশ রানের জুটি।
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের কুয়াশামাখা সকালটা নিয়ে এসেছিল বিপদের বার্তা। ম্যাচ শুরু হয়েছে আধ ঘন্টাও পার হয়নি। মিরপুরের বল গড়িয়েছে মাত্র ৪০টি। উইকেটে ছিল আর্দ্রতা। তা কাজে লাগিয়ে জিম্বাবুয়ের পেসার কাইল জারভিস পেলেন ভংঙ্কর হয়ে ওঠার রসদ। রানের খাতায় ১৩ রান জমতেই নেই ইমরুল। সেই ধাক্কা সামলানোর বদলে উল্টো ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে মাঠ ছাড়লেন লিটনও। দুই ওপেনারকে হারিয়ে তখন বাংলাদেশের বাতাসে শঙ্কার রেণু। সেই বিপদ আরো বাড়ালেন আরেক পেসার ডোনাল্ড তিরিপানো। অমানিশার অন্ধকার আরো ঘন হলো অভিষিক্ত মোহাম্মদ মিঠুনের শূণ্য রানে বিদায়ে। ২৬ রানে বাংলাদেশের নেই তিন উইকেট! আউট হবার ধরণগুলোও ‘অপরিপক্কতার’ ছাপ। টেস্ট ক্রিকেটে দেড় যুগ পেরিয়েও যে ‘অপ্রাপ্তবয়সের’ কথা আগের দিনই স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন আপদকালীন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। আবারও চোখ রাঙাচ্ছিলো সিলেট টেস্টের বিভিষিকা।
দলের এই বিপদে আবারো ত্রাতার ভুমিকায় মুমিনুল। দলীয় ১৩ রানে ইমরুল কায়েস আউট হওয়ার পর উইকেটে গিয়েছিলেন টেস্ট স্পেশালিস্ট এই ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের টেস্ট ব্যাটিংয়ের সাম্প্রতিক দুরাবস্থার সমার্থক হয়ে ছিলেন যেন মুমিনুল। সাদা পোশাকে যিনি ছিলেন দলের বড় ভরসা, তিনিই যেন ভুলে গিয়েছিলেন রান করতে। এই টেস্টের আগে টানা যে আট ইনিংসে দুইশ ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ, এই আট ইনিংসে মুমিনুলের রান ছিল ৬৯। রানখরার চেয়েও দুর্ভাবনার ব্যাপার ছিল তার আউট হওয়ার ধরন। বারবার ফিরছিলেন আলগা শটে। এই ইনিংসের শুরুটাও খুব ভালো ছিল না। সৌভাগ্যের ছোঁয়া ছিল। জীবন পেয়েছেন ৯, ২৫ ও ১২০ রানে। ছিলেন বেশ নড়বড়ে। আত্মবিশ্বাসের অভাব ব্যাটিংয়ে ফুটে উঠছিল স্পষ্টভাবে। ফিফটি করেছিলেন ৯২ বলে। পরের ফিফটি কেবল ৫৮ বলেই। ১৫০ বলে ছুঁয়েছেন ক্যারিয়ারের সপ্তম টেস্ট সেঞ্চুরি।
তার সেঞ্চুরিতে একটা মাইফলক স্পর্শ করল দেশের ক্রিকেটও। ১১০ টেস্টে বাংলাদেশের এটি ৫০তম টেস্ট সেঞ্চুরি। সাত টেস্ট সেঞ্চুরিতে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডে মুমিনুল এখন এককভাবে দুইয়ে। ৬১ টেস্টে ৬ সেঞ্চুরি করা মোহাম্মদ আশরাফুলকে পেছনে ফেললেন ৩১ টেস্টেই ৭ সেঞ্চুরি করে।
তিনটি জীবন পেয়ে কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো গেছেন দেড়শ রানে। ২৩৯ বলে ১৫১ রান করতে ১৭টি বাউন্ডারি হাঁকান মুমিনুল। শেষ পর্যন্ত থামেন দিনের মাত্র ২৮ বল বাকি থাকতে চাতারার শিকার হয়ে। তবে তার আগে খেলে গেছেন টেস্টে নিজের তৃতীয় সেরা ২৪৭ বলে ১৯ চারের ১৬১ রানের ইনিংস। ২০১৩ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে খেলা ১৮১ টেস্টে এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ একই ভেন্যুতে এই বছরের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা ১৭৬।
এই সেঞ্চুরিযাত্রায় তার সঙ্গী ছিলেন মুশফিক। বিপর্যয় থেকে দলকে টেনে তুলেছে এই দুজনের জুটিই। চতুর্থ উইকেটে দুজনে গড়েছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটির রেকর্ড। আগের রেকর্ড জুটিতেও ছিলেন মুমিনুল। বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে মুমিনুল ও লিটন দাস গড়েছিলেন ১৮০ রানের জুটি। রেকর্ড জুটির পলে বহুল আকাক্সিক্ষত সেঞ্চুরিটিও পেয়ে গেছেন মুশফিক। টেস্টে বরাবরই ভরসার প্রতীক এই ব্যাটসম্যান নিজের জায়গা পেয়েই ফেরেন চেনা ছন্দে। ২৩ ইনিংস পর পেয়েছেন তিন অঙ্কের দেখা। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হায়দরাবাদে ভারতের বিপক্ষে ১২৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মুশি। অপরাজিত আছেন ১১১ রানে। ২৩১ বল খেলা তার ৯টি চারের ইনিংসটি দেখাচ্ছে আরেকটি সুন্দর দিনের শুরুর আভাস।
টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি
জুটি উইকেট রান প্রতিপক্ষ ভেন্যু তারিখ
মুশফিক-সাকিব ৫ম ৩৫৯ নিউজিল্যান্ড ওয়েলিংটন ১২ জানু. ২০১৭
ইমরুল-তামিম ১ম ৩১২ পাকিস্তান খুলনা ২৮ এপ্রিল ২০১৫
আশরাফুল-মুশফিক ৫ম ২৬৭ শ্রীলঙ্কা গল ৮ মার্চ ২০১৩
মুমিনুল-মুশফিক ৪র্থ ২৬৬* জিম্বাবুয়ে ঢাকা ১১ নভে. ২০১৮
মুমিনুল-মুশফিক ৩য় ২৩৬ শ্রীলঙ্কা চট্টগ্রাম ৩১ জানু. ২০১৮
*চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশের সেরা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।