Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জোটগত নির্বাচন : ইসিতে যাচ্ছে চিঠি

বাড়তি সময় চায় আ.লীগ-বিএনপি

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:৪৭ এএম

জোটবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের শরিক দলের প্রতীকে ভোট করতে চাইলে তফসিল ঘোষণার তিনদিনের মধ্যে তথ্য দেয়ার সময় শেষ হচ্ছে আজ। এই সময়ের মধ্যে জানাতে না পারলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে। তাহলে কোনও শরিক দল জোটের প্রতীকে ভোট করতে পারবে না। নিজ নিজ প্রতীকে অংশ নিতে হবে। গতকাল শনিবার নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেয়া হয়। তবে এ চিঠি এখনো রাজনৈতিক দলগুলো পায়নি বলে জানা গেছে। এদিকে সময় চেয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট দুই দিনের আবেদন করবে বলে জানা গেছে।
ওদিকে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, যদি কোনো রাজনৈতিক জোট সময় চেয়ে আবেদন করে সেটা ইসি দেখবে। তবে এ আইন সংসদে পাস করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে কমিশনকে জানাতে হবে। আমরা সেই কাজ করেছি। এর বাইরে যাওয়ার সময় নেই। আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দুই জোট দুই দিনের সময় চেয়ে আবেদন করবে এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, তারা আবেদন করলে ইসি বিষয়টি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তা আগে বলতে পারছি না।
গতকাল আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা গতবার জোটগত নির্বাচন করেছি, এবারো করবো। সময় চেয়ে ইসিকে চিঠি দেয়া হবে।
অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বলেছেন, জোটের পক্ষ থেকে আমরা দুই দিনের সময় চেয়ে ইসিকে আজ চিঠি দেব। আমাদের আবেদন আমলে নেবে ইসি।
সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে অগাধ ক্ষমতা দিয়েছে কমিশন ইসি। নির্বাচনে দল বা জোট একটি আসনে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন দিলেও প্রত্যাহারের আগে যাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে কেবল তিনিই প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারবেন। ওই আসনে দলের বা জোটের অন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এর ফলে কারও বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। কেউ নির্বাচন করতে চাইলে আগে থেকেই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়পত্র জমা দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, জোটের প্রার্থী বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সভাপতি, সম্পাদক, মহাসচিবকে বলা হয়েছে. অন্য কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যৌথভাবে মনোনীত প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে ১১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে দরখাস্ত দাখিলের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করছি। চিঠিতে এ বিষয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদের কয়েকটি উপ-অনুচ্ছেদ স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা আছে, অনুচ্ছেদ ১১-এর উপ-অনুচ্ছেদ (১)-এর অধীনে প্রজ্ঞাপন (নির্বাচনী তফসিল) প্রকাশিত হওয়ার পর তিন দিনের মধ্যে কমিশনের কাছে দরখাস্ত করলে কমিশন দুই বা ততোধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের যৌথভাব মনোনীত প্রার্থীকে ওই দলগুলোর জন্য নির্ধারিত কোনো প্রতীক বরাদ্দ করতে পারবে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আইনগত দুর্বলতার কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিবন্ধিত বা নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে এমন দলের নেতারাও জোটভুক্ত হয়ে নিবিন্ধত কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তবে জোটের যে দলের প্রতীকে তারা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন সে দলের প্রার্থী হিসেবেই গণ্য হবেন তারা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে প্রেসিডেন্টের অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই বিধান যোগ করা হয় যে, কোনো অনিবন্ধিত দলের সঙ্গে জোট করা যাবে না এবং জোটের প্রার্থীরা যে দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন তারা সেই দলের প্রার্থী হিসেবে গণ্য হবেন। কিন্তু প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার কারণে ওই বছর দ্বিতীয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বিধানটি (৯০-খ-৩ অনুচ্ছেদ) বাদ দেয়া হয়। তবে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে পুরনো দলগুলোর ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিন বছরে বেশি সময় দলের সদস্য থাকার বাধ্যবাধকতা বহাল থাকে। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ (১) ঞ অনুচ্ছেদের ওই বিধান বাদ দেয়া হয়। নির্বাচন কর্মকর্তাদের মতে, এর ফলে বর্তমানে নিবন্ধন নেই এমন দলগুলোর নেতারা কোনো নিবিন্ধত দলের সঙ্গে জোটভুক্ত হয়ে দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে পারবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী এলাকার এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন সূচক স্বাক্ষর নেওয়ার চাইতে এটি সহজ হবে।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে অনেক ক্ষমতা দিয়েছে ইসি। দলগুলো একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে। প্রত্যাহারের আগে একজনকে চূড়ান্ত করে চিঠি দিলে অন্যদের মনোনয়ন বাতিল বলে গণ্য হবে। এর আগে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ক্ষমতা প্রার্থী বা তার এজেন্টের হাতেই ছিল। দল বা জোট কাউকে চূড়ান্ত মনোনয়ন না দিলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারতেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে ১২ ধারা ৩এ(বি) এবং ১৬ ধারা (২) তে এই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
নবম সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর এই ক্ষমতা ছিল না। ১২ ধারার ৩এ(বি) তে আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যায়নপত্রের মাধ্যমে প্রার্থীকে ওই দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হতো। এক্ষেত্রে শর্ত ছিল, কোন নিবন্ধিত দলের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান করা যাবে। একের অধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পূর্বেই চূড়ান্তভাবে একজন মনোনীত প্রার্থীর নাম রিটার্নিং অফিসারকে লিখিতভাবে জানাতে হতো। কিন্তু ২০১৩ সালে কমিশন এই ধারায় সংশোধনী আনে। বর্তমানে এই ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোন নিবন্ধিত দলের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান করা যাবে। একের অধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হলে তা ১৬ (২) ধারা অনুযায়ী কার্যকর হবে। ১৬ (২) ধারায় বলা আছে, যদি কোন আসনে একের অধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়, তার মধ্যে থেকে একজনকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে আগেই চূড়ান্ত করতে হবে। তা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের কেউ লিখিতভাবে রিটার্নিং অফিসারকে জানাবেন। দলের অন্য মনোনীত প্রার্থীদের প্রার্থিতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
আগামী ১৯ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে। মনোনয়নপত্র বাছাই ২২ নভেম্বর। কারো প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেলেও অন্যদের মধ্যে থেকে ২৯ নভেম্বর প্রত্যাহারের আগে একজনকে চূড়ান্ত করার সুযোগ পাবে দলগুলো। আর ভোট ২৩ ডিসেম্বর।



 

Show all comments
  • আরজু ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ২:৩৬ এএম says : 0
    ইসিকে নিরপেক্ষ হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ