মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গাজা উপত্যকার হামাস সরকারের উন্নয়ন এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারীদের মধ্যে ধর্ম প্রচার বিভাগ ২১ অক্টোবর থেকে ধর্মীয় সংস্কৃতি প্রচারের জন্য একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। বি ডিফারেন্ট নামের এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন উচ্চবিদ্যালয়ের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হিজাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। এই কার্যক্রমটি বর্তমানে গাজা শহরে চালু করা হয়েছে এবং ধীরে ধীরে এটি ফিলিস্তিনের অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে দেয়া হবে। বি ডিফারেন্ট এই কার্যক্রমটি ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত চলবে। নারী ধর্ম প্রচার বিভাগের প্রধান নাদিয়া আল-গুল ২১ অক্টোবর এক বিবৃতিতে বলেন- ‘এই কার্যক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে শরিয়া অনুযায়ী পোশাক পরিধান করার জন্য নারীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা।’ তিনি আরো বলেন, ‘কিছু নারী হয়ত পর্দা পরিধান করতে অনিচ্ছুক, কিন্তু এমনটি হয়েছে মূলত ইসলামি জ্ঞানের অভাবে অথবা পারিবারিক শিক্ষার অভাবে।’ ফিলিস্তিনি সমাজে নারীদের মধ্যে হিজাব পরিধান করার সংস্কৃতি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়। অধিকাংশ ধর্মমনা পরিবারের মেয়েরা যখন বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে তখন থেকেই হিজাব পরিধান করা শুরু করেন। সাধারণত ১৬ বছর বয়স থেকেই ফিলিস্তিনি নারীরা হিজাব পরিধান করে থাকেন। এই প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের সমন্বয়ক আবির আল-তারতুর বার্তা সংস্থা আল-মনিটরকে বলেন- বি ডিফারেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে গাজা উপত্যকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেসব নারী হিজাব পরিধান করেন না, তাদের সবাইকে নিয়ে হিজাবের সংস্কৃতি সম্পর্কে উপদেশমূলক আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।’ ‘একই সাথে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের মায়েদের সাথে হিজাব পরিধান করার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।’ তিনি আরো বলেন, গাজা শহরের দক্ষিণাঞ্চলের আল-ইয়েমেন বিদ্যালয়ের হিজাব পরিধান করেন না এমন শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বি ডিফারেন্ট প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হবে। এর পরে অন্যান্য বিদ্যালয় যেমন গাজার পূর্বাঞ্চলের আল-শাজাইয়া বিদ্যালয়, গাজার কেন্দ্রে অবস্থিত মুস্তাফা হাফেজ বিদ্যালয়ে সফর করা হবে। এসময় মন্ত্রণালয়ের নারী কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের মায়েদের সাথে হিজাবের গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করবেন। আল-তারতুর বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে বিদ্যালয়সমূহের পরিচালকদের সাথে কথা বলে তাদের বিদ্যালয়সমূহে হিজাব পরিধান করেন না এমন শিক্ষার্থীদেরকে দুটি আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং তাদের সাথে হিজাব পরিধান করার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হবে।’ পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে নারীদের জন্য হিজাব পরিধান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি একটি হাদিসের বর্ণনা অবতারণা করেন। আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি একবার নবী মুহাম্মদ (সা.) আসমা (রা.) কে দেয়া একটি উপদেশ শুনতে পেয়েছেন। ‘হে আসমা, যখন একটি মেয়ে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে যায় তখন তাকে তার শরীরের শুধুমাত্র এই এবং এই অঙ্গগুলো... প্রকাশের অনুমতি দেয়া হয়।’ আয়েশা (রা.) রাসুল (সা.) এই এবং এই বলতে মুখমণ্ডল এবং হাত বুঝিয়েছেন। আল-শাজাইয়া নামক বিদ্যালয়ে থেকে নয়জন শিক্ষার্থী ‘বি ডিফারেন্ট’ প্রকল্পে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী রাফিফ ইউসেপ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, তিনি হিজাব পরিধান করেন না কারণ তার পরিবার এটিকে আবশ্যকীয় মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘আলোচনা সভার প্রথম দিনে আলোচকরা তাদের নিকট কিছু প্রশ্নপত্র ধরিয়ে দেন। যেখানে প্রশ্ন করা হয়- আপনি হিজাবে কতটা বিশ্বাস করেন? কেন আপনি হিজাব পরিধান করেন না? এবং আপনি কি এজন্যই হিজাব পরিধান করেন না কারণ আপনি আপনার পরিবারের মত হিজাবকে ফ্যাশন পরিপন্থী মনে করেন? ইত্যাদি।’ আল-তারতুর বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক হিজাব পরিধান করানো বি ডিফারেন্ট প্রকল্পের উদ্দেশ্য নয়।’ আল-ইয়েমেন নামে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোসালিন্ডা আল-আসহি’র পিতা আল-মনিটর নিউজকে বলেন, তার পরিবারের সকল বয়স্ক নারী সদস্যগণ হিজাব পরিধান করেন। গাজা উপত্যকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব আনোয়ার আল-বারাউয়ি বার্তা সংস্থা আল-মনিটরকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় ‘বি ডিফারেন্ট ’ প্রকল্পটিকে উৎসাহ দিচ্ছে। হিজাব পরিধান করা ফিলিস্তিনের সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের অংশ।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি ‘বি ডিফারেন্ট ’ নামক প্রকল্পের মাধ্যমে কারো অধিকার ক্ষুন্ন হতে দেখিনি। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে- সম্পূর্ণ শিক্ষামূলক এবং তারা কাউকে জোর করছে না। তথাপি আমি বিশ্বাস করি ফিলিস্তিনি নারীদের অবশ্যই হিজাব পরিধান করা উচিত যাতে করে তারা এখানকার সামাজিক মূল্যবোধকে সম্মান করতে পারে এবং একই সাথে ইসলামিক পরিচয়ের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে।’ গাজা উপত্যকার রুয়া আল-শেখ আহমেদ নামের ২২ বছর বয়সী শিক্ষার্থী যিনি মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছেন তিনি ‘বি ডিফারেন্ট ’ প্রকল্পের আলোচনা সভায় অংশ নেয়ার পূর্বে হিজাব পরিধান করতেন না। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক মাস যাবত আমি হিজাব পরিধান করার চিন্তা ভাবনা করেছি কারণ আমি আর ছোট কোনো মেয়ে নই। মুসলিম নারীদের জন্য হিজাব পরিধান করা ধর্মীয় দায়িত্বের অংশ। আমার হিজাব পরিধান করার সিদ্ধান্ত নিতে অনেক কষ্ট হয়েছে কারণ আমার বেশিরভাগ বন্ধুই হিজাব পরিধান করেন না। কিন্তু ‘বি ডিফারেন্ট ’ প্রকল্পের আলোচনা সভায় অংশ নেয়ার পরে আমি হিজাব পরিধান করার সিদ্ধান্ত নিই।’ আল-তারতুর বলেন, ‘বি ডিফারেন্ট ’ প্রকল্পের আলোচকরা ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় যেমন আল-আজহার এবং আল-আকসা বিশ্ববিদ্যালয়ে সফর করেছেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গাজা উপত্যকার সকল বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পটি ধীরে ধীরে আরো উচ্চাকাক্সক্ষী হবে। যখন ২০১৯ সালের মে মাসে এই প্রকল্পের কার্যক্রম শেষ হবে তখন সমাজের হিজাব পরিধান করেন না এমন নারীদের নিকটে হিজাবের বার্তা নিয়ে যাওয়ার জন্য এধরনের আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।’ আল-মনিটর ডট কম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।