চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
দুই
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ স. বলেন : কিয়ামতের দিন মানুষের এত ঘাম বেরুবে যে, তা জমিনে সত্তর গজ উঁচু হয়ে বইতে থাকবে এবং তাদের ঘামের লাগাম পরানো হবে, এমনকি তা তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
হাশরের ময়দানে হাওজে কাওসারের পানি পান: হযরত সাহাল বিন সাদ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন, আমি তোমাদের আগে হাউজে কাউসারের ধারে পৌঁছবো। যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে, সে হাউযের পানি পান করবে। আর যে পান করবে সে আর কখনোও পিপাসার্ত হবে না। নিঃসন্দেহে কিছু স¤প্রদায় আমার সামনে (হাউজে) উপস্থিত হবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারবো আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। এরপর আমার এবং তাদের মাঝে প্রতিবন্দকতা সৃষ্টি করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী-৬৫৮৩)
আরশের ছায়ায় স্থান পাবে সাতজন: হাশরের ময়দানের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ হবে যে, সূর্য মানুষের মাথার মাত্র অর্ধ হাত উপরে আসবে। আর পায়ের নিচের মাটি হবে জ্বলন্ত তামার। তাই গরমের তীব্রতায় মানুষের মাথার মগজ টগবগ করবে। যেমন চুলার উপর ভাতের পাতিল টগবগ করে। এই কঠিন এবং ভয়াবহ অবস্থায় মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় সাত প্রকারের বান্দাকে নিজের আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডের মাঝে তাদের জন্য রহমতের শীতল চাদর বিছিয়ে দেবেন। দাউদাউ করা দাবানলের গ্রাস থেকে প্রিয় বান্দাদের রক্ষা করবেন। আসুন জেনে নিই সেই সৌভাগ্যবান সাত ব্যক্তি কারা।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন বলবেন, যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছে আমারই জন্য তারা আজ কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় ছায়া দান করবো। আজ এমন দিন আমার ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া নেই। (সহীহ মুসলিম ১৯৮৮)
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল স. বলেছেন: কেয়ামত দিবসে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তার ছায়া ব্যতীত ভিন্ন কোন ছায়া থাকবে না- ন্যায়পরায়ন বাদশা; এমন যুবক যে তার যৌবন ব্যয় করেছে আল্লাহর ইবাদতে; ঐ ব্যক্তি যার হৃদয় সর্বদা সংশি¬ষ্ট থাকে মসজিদের সাথে; এমন দু ব্যক্তি, যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবেসেছে, এবং বিচ্ছিন্ন হয়েছে তারই জন্য; এমন ব্যক্তি, যাকে কোন সুন্দরী নেতৃস্থানীয়া এক রমণী আহ্বান করল অশ্লীল কর্মের প্রতি, কিন্তু প্রত্যাখ্যান করে সে বলল, আমি আল্লাহকে ভয় করি ; এমন ব্যক্তি, যে এরূপ গোপনে দান করে যে, তার বাম হাত ডান হাতের দান সম্পর্কে অবগত হয় না। আর এমন ব্যক্তি, নির্জনে যে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দু-চোখ বেয়ে বয়ে যায় অশ্রুধারা। (বুখারী ও মুসলিম)
আবু ইয়াসার কাআব ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: যে কোন ঋণগ্রস্ত বা অভাবী ব্যক্তিকে সুযোগ দেবে অথবা তাকে ঋণ আদায় থেকে অব্যাহতি দেবে আল্লাহ তাআলা তাকে নিজ ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। (মুসলিম- ১০৩)
সুপারিশের জন্য আকুতি : ভয়াবহ এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে অস্থির হয়ে উঠবে লোকজন। তাদের দাবি হবে- বিচারের রায় যাই হোক না কেন, বিচারটা আগে হয়ে যাক। সেজন্য তারা নবীদের কাছে যাবে; যেন তারা আল্লাহর কাছে বিচার শুরু হওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। এ বিষয়ে হজরত আমাস সা. থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুল সা. বলেন, ‘যখন কেয়ামত হবে তখন মানুষ জনসমুদ্রের ভিড়ের মধ্যে হুমড়ি খেতে থাকবে। তারা তখন হজরত আদম আ. এর কাছে আরজ করবে- আপনি আমাদের জন্য আল্লাহ পাকের কাছে সুপারিশ করুন। তিনি বলবেন, আমি তার উপযুক্ত নই বরং তোমরা আল্লাহর খলিল হজরত ইবরাহিম আ. এর কাছে যাও, কেননা তিনি আল্লাহ পাকের অন্তরঙ্গ বন্ধু। তারা ইবরাহিম আ. এর কাছে হাজির হয়ে এরূপ আরজ করলে তিনিও বলবেন, আমি তার উপযুক্ত নই। তোমরা ঈসা আ. এর কাছে যাও। যিনি হলেন রুহুল্লাহ। অতঃপর তারা হজরত ঈসা আ. এর কাছে গিয়ে ওই কথা বলবে। তিনি বলবেন, আমি এ কাজের লায়েক নই। তোমরা বরং মুহাম্মদ সা. এর খেদমতে যাও। তখন তারা আমার কাছে আসবে এবং আমি বলব, হ্যাঁ, আমি এ জন্য আছি। অতঃপর আমি আল্লাহ পাকের কাছে অনুমতি চাইলে আমাকে অনুমতি দেবেন এবং কতগুলো প্রশংসাবাণী আমার অন্তরে ঢেলে দেবেন, যেগুলোর দ্বারা আমি প্রশংসা করব কিন্তু সেগুলো এখন আমার কলবে অনুপস্থিত। অতঃপর আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য সিজদা করব। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ আপনি মাথা উঠান এবং যা খুশি বলুন, আজ আপনার কথা শোনা হবে। আমি তখন সকল মানুষের হিসাব-নিকাশ শুরুর জন্য সুপারিশ করবো। (বুখারি শরিফ)
হাশরের ময়দানে সবাইকে আমলনামা প্রদান : বিচার শুরু হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা সবার হাতে তাদের দুনিয়ার আমলনামা দিবেন। আমলনামা দেয়ার সময় সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। কারণ, আল্লাহ কারও আমলনামা ডান হাতে দিবেন। কারও দিবেন পিছন দিকে ঘুরিয়ে বাম হাতে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।