মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। আট বছরে প্রথমবারের মতো কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ পেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। ডেমোক্র্যাটদের এই সাফল্যকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য একটা বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ এর ফলে এখন ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের প্রশাসনিক এবং ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করতে পারবে। আইন প্রণয়ন বিষয়ক যে কোনো প্রস্তাবে বাধা দেয়ার ক্ষমতাও থাকবে তাদের হাতে।
প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের হাতে গেলেও মধ্যবর্তী এই নির্বাচনে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পেরেছে রিপাবলিকানরা। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে ৪৯ আসন আর রিপাবলিকানরা প্রয়োজনীয় ৫১ আসন জিতে নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়েছে।
এবার হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ৪৩৫টি আসনের সবক’টিতেই ভোট হয়েছে। এছাড়া সিনেটের ৩৫টি এবং ৩৬টি অঙ্গরাজ্যের ৩৯টি গভর্নর পদেও ভোট হয়েছে। সিনেটে ৫১-৪৯ ব্যবধানে এর আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল রিপাবলিকানরা। এই নির্বাচনে ৩৫ সিনেট আসনের ২৬টিই ছিল ডেমোক্রেটদের দখলে। তাই তাদের জন্য বিষয়টি চ্যালেঞ্জিংই ছিল।
সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ডেমোক্র্যাটরা সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। কারণ ইতোমধ্যে সিনেটে ৫১টি আসন রিপাবলিকানদের নিশ্চিত হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে। সেখানে ডেমোক্রেটদের আসন দাঁড়িয়েছে এ পর্যন্ত ৪৫টি। বাকি ৪টি আসনের ফলাফল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
তবে আইনসভার নিম্নকক্ষে যে ট্রাম্পের দল নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুযায়ী ৫৩৫ আসনের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ২১৯ আসন ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করেছে। যেখানে রিপাবলিকানদের অর্জন ১৯৩টি। বাকি ২৩ আসনের ফলাফল এখনো ঘোষণা হয়নি।
এটি হলে গত আট বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো প্রতিনিধি পরিষদে আধিপত্য পাবে ডেমোক্রেটরা। এতে ডেমোক্রেটরা হাউস কমিটির মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নতুন তদন্ত শুরু করতে পারবে। এছাড়া রিপাবলিকান বিল আটকে দিতে এবং সম্ভবত প্রেসিডেন্টকে ইমপিচের প্রস্তাবও কংগ্রেসে উত্থাপন করতে পারবে।
এদিকে নিম্নকক্ষে ডেমোক্রেটদের এই সাফল্যের পেছনে কৃষ্ণাঙ্গ, নারী ও তরুণ ভোটাররাই মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন বার্তা সংস্থার খবরে এমনটিই দাবি করা হয়েছে।
নির্বাচনের দিনে ভোটারদের মাঝে একটি জরিপ চালায় রয়টার্স। যেখানে দেখা যায় ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত ৫৫ শতাংশ নারী প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটদের ভোট দেয়ার কথা জানিয়েছেন। যার হার ২০১৪ সালে ছিল ৪৯ শতাংশ।
শুধু নারী নয়, তরুণ ভোটাররাও ডেমোক্রেটদের দিকে নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেন। ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ভোটারদের শতকরা ৬২ শতাংশ ডেমোক্রেটদের পক্ষে ভোট দেয়ার কথা জানিয়েছেন। ২০১৪ সালে যার পরিমাণ ছিল ৫২ শতাংশ।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, সিনেট ও হাউসে রিপাবলিকানদের একক কর্তৃত্বের অবসান হওয়ায় ২০২০ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতার ইঙ্গিত মিলছে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিজাত শ্রেণির সঙ্গে বাকিদের পার্থক্য রয়েছে। বেশিরভাগ রক্ষণশীল শ্বেতাঙ্গের কাছেই ট্রাম্প খুবই জনপ্রিয়। ভোটের ফলাফল রিপাবলিকানদের জন্য সাফল্য ও ব্যর্থতার হলেও ট্রাম্প মধ্যবর্তী নির্বাচনে সাফল্যই উদযাপন করতে চান। এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘আজকের রাতে আমরা দারুণ সাফল্য পেয়েছি। সবাইকে ধন্যবাদ।’
ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। এখন যেকোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ডেমোক্র্যাটিক কমিটির প্রধানদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে ট্রাম্পকে। তাদের বিরোধিতার মুখেও পড়তে হতে পারে তাকে। রিপাবলিকানদের কাছ থেকে এমন বাধা কখনোই পাননি ট্রাম্প।
ডেমোক্র্যাটদের প্রতিনিধি পরিষদের নেতা ন্যান্সি পেলোসি এর আগে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় আবারও দায়িত্বে ফিরবেন তিনি। ডেমোক্র্যাট এই নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন, সাংবিধানিক ক্ষমতা ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা হবে।
ট্রাম্পের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো ডেমোক্র্যাটরা এখন ট্রাম্প প্রশাসনকে নজরদারিতে রাখার উদ্যোগ নিতে পারবে। এখন হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন ডেমোক্র্যাট অ্যাডাম স্কিফ। এই কমিটিউ ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে। স্কিফ ঘোষণা দিয়েছেন, ট্রাম্পের বৈদেশিক অর্থ লেনদেনের বিষয় গভীরভাবে পর্যালোচনা করবেন। এমনকি ট্রাম্পের আয়কর প্রদানের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা ও প্রকাশ করা হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের আরও কয়েকজন কর্মকর্তাও নজরদারির আওতায় আসতে পারেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রায়ান জিংকে থাকবেন এই তালিকার সর্বাগ্রে।
পরিষদে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় ট্রাম্পকে অভিশংসনের বিষয়টিও রয়েছে আলোচনায়। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় নিম্নকক্ষে অভিশংসনের প্রস্তাব পাস করানো সহজ হবে নীল শিবিরের। স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুয়েলার নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে এবং তাতে ট্রাম্পের যোগসাজশের বিষয়টি উঠে আসলে অভিশংসনের প্রস্তাব নিশ্চিতভাবেই আনবেন ডেমোক্র্যাটরা।
হাউসে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় চ্যালেঞ্জ থাকলেও সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সংহত হওয়া ট্রাম্পের জন্য স্বস্তিদায়ক।
জয় নিশ্চিতের কিছুক্ষণ পরই ডেমোক্রেটরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়। ট্রাম্পের ব্যবসায়িক বিষয়াবলী খতিয়ে দেখা, বিশেষ করে তার কর রিটার্ন নিয়েও কাজ করার কথা জানায় তারা।
ইতিহাস গড়লেন নারী ও সংখ্যালঘুরা
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ইতিহাস গড়েছেন নারী ও সংখ্যালঘু প্রার্থীরা। গতকাল বিসিসি জানিয়েছে, মধ্যবর্তী নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এবারের নির্বাচন অনেক কারণেই ইতিহাস গড়ল। নন-প্রেসিডেন্ট এই নির্বাচনে ভোটদানের হার বেশি, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছেন, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক এলজিবিটি প্রার্থী অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছেন, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সামরিক ব্যক্তি প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। সূত্র : রয়টার্স, ওয়াশিংটন পোস্ট, সিএনএন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।