দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
সুন্নাহ শব্দটি মুসলিম সমাজে একটি সুপরিচিত পরিভাষা। সুন্নাহর আভিধানিক অর্থ সম্পর্কে মিসবাহুল মুনীর গ্রন্থকার বলেন, সুন্নাহ শব্দটির আরবি আভিধানিক অর্থ- পথ ও পদ্ধতি, আদর্শ ও রীতিনীতি। আল মুফরাদাত গ্রন্থের প্রণেতা বলেন, রাসূলের (স.) সুন্নাত, এ কথার অর্থ রাসূলের (স.) আদর্শ যা তিনি পালন করতেন। মহান আল্লাহর সুন্নাত এ কথার অর্থ, মহান আল্লাহ তায়ালার সুমহান পথ ও পদ্ধতি, তাঁর হিকমত এবং তার আনুগত্যের নিয়মকানুন ও পদ্ধতি। ‘সুন্নাহ’ এ অর্থেই পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরীফে বারবার ব্যবহৃত হয়েছে।
ওলামায়ে হক্কানিরা বলেন, ইসলামি শরীয়তে যখন সাধারণভাবে সুন্নাহ শব্দটি ব্যবহার করা হবে, তখন এর অর্থ দাঁড়াবে নবী (স.) এর আদেশ, নিষেধ কথা, কাজ ও সম্মতি ইত্যাদি। সুন্নাহ বিশ্লেষক আলেমগণ বলেন, বিশেষ করে যে সব বিষয়গুলো পবিত্র কুরআনে বর্ণিত নয়, কেবল মাত্র রাসূল (স.) হতে বর্ণিত, নির্দেশিত শরীয়তের সে সব বিষয়গুলোকে সুন্নাত বলে। মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাত লাভ করতে হলে জীবনের সকল ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (স.) এর সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহ (স.) এর আদর্শের পরিপন্থী যাবতীয় আইন-বিধি, নীতি-আদর্শ, পথ-মত, জাহিলিয়াত ও নাফসানিয়াত পরিহার করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে অনেক আলোচনা বিদ্যমান।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে রাসূল! (স.) আপনি বলুন! যদি তোমরা আল্লাহর ভালবাসা পেতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত ৩১) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, রাসূল (স.) তোমাদের যা আদেশ দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে তোমরা বিরত থাক।(সূরা হাশর : আয়াত ৭) যে রাসূলের (স.) আনুগত্য করল, সে যেন আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, আমি আপনাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে প্রেরণ করিনি। (সূরা নিসা: আয়াত ৮০) তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল (স.) এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। (সূরা আহযাব : আয়াত ২১)
এমনিভাবে পবিত্র কোরআনে সুন্নাহর অনুকরণ-অনুস্বরণের জন্য অত্যাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআন এ কথাও বলেছে, কেউ যদি সুন্নাহর অনুসরণ না করে, তবে তার ঈমান যথাযথ হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, তোমার পালনকর্তার কসম!! সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে অর্থাৎ নবী (স.) কে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টিচিত্তে তা কবুল করে নেবে। (সুরা নিসা: আয়াত ৬৫) তিনি আরও বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূল (স.) কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে অন্য কোন এখতিয়ার থাকে না। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (স.) আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়। (সূরা আল-আহযাব : আয়াত ৩৬)
ইহ-পরকালীন নাজাত, কল্যাণ ও জান্নাতের পথ শুধুমাত্র কুরআন ও রসূলুল্লাহ (স.) এর আদর্শের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং খোলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে কিরামগণের (রা.) এর আদর্শে ও বিদ্যমান। রাসুল (স.) এর আদর্শ সেভাবেই অনুসরণ করতে হবে যেভাবে সাহাবায়ে কেরাম বিশেষতঃ মুহাজীর ও আনসারগণ (রা.) অনুসরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, মুহাজীর ও আনসারদের অগ্রগামী দল আর যারা যথাযথভাবে তাদের অনুসারী, মহান আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও মহান আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তাঁদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে এমন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত। তাঁরা সেখানে অনন্তকাল থাকবে। এটাই হল মহান সফলতা। (সূরা তাওবাহ : আয়াত ১০০)
রাসূলুল্লাহ (স.) এর সুন্নাহ আঁকড়ে থাকার ব্যাপারে হুজুর (স.) নিজেই বলেছেন, আমি তোমাদের কাছে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে থাকবে, ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না: আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক : হাদিস নম্বর ৩৩৩৮।) খোলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত সম্পর্কে হযরত ইরবায বিন সারিয়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) একদিন আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বসলেন। অতঃপর আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় উপদেশ দিলেন যে, চক্ষু অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং হৃদয় ভীত-বিহবল হয়ে পড়ল। এমন সময় একজন বলে উঠলো, হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটা যেন আপনার বিদায়ী ভাষণ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাদের আমীরের আদেশ শুনতে ও মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও তিনি একজন হাবশী গোলামও হন। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা অতিসত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকেই আকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁতগুলো দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। (মুসিলিম : হাদিস নম্বর ১৭১৮; আবু দাউদ : হাদিস নম্বর ৪০৬৭।) সাহাবাগণের সুন্নাত অনুসরণ-অনুকরণ সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। প্রিয় রাসুল (স.) বলেছেন, বানী-ইসরাইলীগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মাত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে, সকলেই জাহান্নামে যাবে, কিন্তু একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে। সাহাবাগণ (রা) জিজ্ঞাসা করলেন, এই দল কারা? রসূলুলাহ (স.) বললেন, যারা আমার ও আমার সাহাবাগণের সুন্নাতের উপর কায়েম থাকবে। (তিরমিযি : হাদিস নম্বর ২৫৭৮।) বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলী কারী (রহঃ) বলেন, সে দল হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সুন্নাতের গুরুত্ব জেনে, বুঝে সুন্নাহর ওপর জীবন অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।