দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
অনলাইনে এখন সারা পৃথিবী দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যক্তিমাত্রকেই তার ভাবনা প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। আফ্রিকার কোনো এক দেশে দেখা যাচ্ছে একদল তরুণ মহাসড়কে রীতিমত হৈ-হল্লা করে বাস, কার ও অন্যান্য যানবাহন থামানোর চেষ্টা করছে। অনেক গাড়ি বিষয়টি বুঝতে না পেরে না থেমে বরং গতি বাড়িয়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু পরের গ্রæপ তাদের থামতে বাধ্য করছে। এই ভিডিও ক্লিপটির হেডিং আরবীতে ‘অন্যরকম ডাকাতি’। পোস্ট যিনি দিয়েছেন তার ভাষায় এটি একটি ডাকাতি প্রবণ এলাকা। অতএব কেউ হাত তুললে বা ব্যারিকেড দিলেও এখানে না থামাই নিয়ম। কিন্তু গত কয়েক বছরের চেষ্টায় এখানে ধর্মীয় সংস্কার ও তা’লিমের চর্চা এতই সফল হয়েছে যে, তরুণরা এবার যাত্রীদের থামিয়ে ইফতার করাচ্ছে। রোজা শেষের শেষ আধঘন্টা তারা এ পথে কাউকেই সামনে চলে যেতে দিচ্ছে না। কারণ, সামনে বহুদূর কোনো থামার পরিবেশ নেই। যাত্রীরা বিষয়টি বুঝতে পেরে ধীরে ধীরে নেমে এসে ইফতারির আয়োজনে শরীক হচ্ছে। এসংস্কৃতি ইসলামের মূল শিক্ষার অংশ। প্রিয় নবী সা. বলেছেন, কেউ যদি রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে সে একটি রোজার সওয়াব লাভ করবে। অথচ রোজাদারের সওয়াবে কোনো কমতি হবে না। -আল হাদীস।
মহানবী সা. এর এ হাদীস শুনে দরিদ্র সাহাবীরা একটু বিব্রত হবেন ভেবে নবী করিম সা. আবার বলেন, এক ঢোক পানি বা একটি খেজুরও ইফতারি। অন্য হাদীসে আছে, তুমি দানের মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করো। হোক না সে দান এক টুকরো খেজুর। -আল হাদীস। মুসলিম বিশ্বে যুব তরুণরা সবসময়ই সংঘবদ্ধ হয়ে জনসেবা ও শুভ সংস্কৃতি চর্চা করেছে। ৭০০ বছর আগে বিশ্ব সেরা পর্যটক ইবনে বতুতা তার ভ্রমণ কাহিনীতে মুসলিম বিশ্বে তরুণদের ক্লাবিংয়ের যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা বর্তমানে দেখা যায় না। মুসলমান ব্যবসায়ীরা প্রতিটি নগরীতে এমনকি পল্লীতেও যুবকদের এমন সব কাজে লাগাতেন, যা উন্নত বিশ্বে মানুষ এখন চিন্তা করছে। তরুণরা সারাদিন কোনো ভিনদেশী মুসাফির তালাশ করতো। তাদের জরুরী সেবা, থাকা-খাওয়া ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করার জন্য। যারা নিঃসন্তান তাদের সন্তানের অভাব পূরণের জন্য। বৃদ্ধ অথর্ব ও রোগী পরিবারে কেনাকাটা বাজার সদাই ইত্যাদি করে দেওয়ার জন্য। এতিম ও বিধবা পরিবারে অভিভাবকের দায়িত্ব পালনের জন্য। যারা অভাবী, রিযিক সংকুচিত, ঋণ জর্জরিত কিংবা পরিস্থিতির শিকার তাদের জরুরী টাকা পয়সা ও জীবনোপকরণ সরবরাহ করার জন্য। সেবার প্রয়োজন আছে এমন রোগীর দেখাশোনাও এ তরুণরা করতো। পাশাপাশি দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা বিষয়টিও তাদের কাজের অংশ হিসাবে থাকতো। বাদশাহ বা খলীফার হয়ে তারা সামাজিক নজরদারীও করতো। যেকোনো তরীকার পীর বুযুর্গ বা শাইখের তত্ত¡াবধানে এসব তরুণ নিজেদের ইবাদত বন্দেগী আমল আখলাকও উন্নত থেকে উন্নততর করার চেষ্টা করতো। মুসলিম তরুণদের এ সংস্কৃতি বিশ্বব্যাপী আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। নাচ-গান, মাদকতা, অপসংস্কৃতি, বখাটেপনা, জুয়া নয়। মুসলমানদের ক্লাবিং হচ্ছে খেদমতে খালক বা সৃষ্টির সেবা। মুসলিম জাতি ৬২২ ইং থেকে ১৯১৭ ইং পর্যন্ত পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিতে পেরেছিল যেসব গুণ অর্জন করে সেসব আবার তাদের আত্মস্থ করতে হবে। সুন্নত হতে হবে তাদের সংস্কৃতি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।