পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামে গ্যাসের সঙ্কটে হাহাকার অবস্থা তৈরি হয়েছে। আড়াই মাস যেতে না যেতেই এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ ব্যাবস্থা বিকল হয়ে পড়েছে। এলএনজির উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এতে করে শিল্প প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীজুড়ে গ্যাসের অভাবে রান্নাবান্না প্রায় বন্ধ থাকায় ঘরে ঘরে মানুষকে পোহাতে হচ্ছে অশেষ দুর্ভোগ। বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ মাঝারি আকারের ও রফতানমুখী দু’শরও বেশী শিল্প কারখানায় উৎপাদন অচল প্রায়। সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপ তলানিতে। এলএনজির উৎস থেকে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিঃ (কেজিডিসিএল) দৈনিক ৩২০ মিলিয়ন থেকে ৩৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ পাচ্ছিল। এখন তা সম্পূর্ণ বন্ধ। চট্টগ্রামে সঙ্কট সামাল দেয়া হচ্ছে আপাতত জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিয়ে।
গত ৩ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ী এলএনজি টার্মিনালের সাথে সংযুক্ত সমুদ্রর তলদেশের পাইপলাইনের মধ্যবর্তী সংযোগস্থলের প্রায় ৪০ মিটোর নিচে থাকা হাইড্রোলিক ভাল্ব হঠাৎ করে বিকল হয়ে যায়। কারগিরি সমস্যাটি পেট্রোবাংলা চিহ্নিত করেছে। গ্যাসের অনিয়ন্ত্রিত চাপের কারণে হাইড্রোলিক ভাল্বটি অকার্যকর হয়ে পড়ে প্রাথমিকভাবে এমনটি ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীগণ। তবে তলদেশের ওই পয়েন্টে গিয়ে বিশেষজ্ঞদের টেকনিক্যাল অনুসন্ধানে প্রকৃত কারণ ও অবস্থা বেরিয়ে আসবে বলে সূত্র জানায়। এ অবস্থায় বিকল হাইড্রোলিক ভাল্বটি কবে মেরামত করা যাবে তা আপাতত অনিশ্চিত। তবে একটি সূত্র জানায়, আগামী দুই সপ্তাহ কিংবা সর্বোচ্চ চলতি মাসের মধ্যেই মেরামত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। মাতারবাড়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাতা আমেরিকান প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জির বিদেশী প্রকৌশলী নিয়ে আসার বিকল্প চিন্তা-ভাবনাও চলছে।
এদিকে চট্টগ্রাম গ্যাস সঙ্কটের বিষয়টি স্বীকার করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খায়ের আহমদ মজুমদার গতকাল (মঙ্গলবার) দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মাতারবাড়ী টার্মিনাল হয়ে পাইপলাইনে এলএনজির উৎস থেকে কেজিডিসিএল ৩২০ থেকে ৩৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পেয়ে আসছিল। তবে হঠাৎ করে গত ৩ নভেম্বর কারিগরি সমস্যার কারণে এলএনজি উৎসের গ্যাস বন্ধ রয়েছে। এখন কেজিডিসিএল জাতীয় গ্রিড লাইন থেকে ২২০ মিলিয়ন গ্যাসের সরবরাহ পাচ্ছে এবং তা দিয়ে আপাতত ঘাটতি মোকাবিলার চেষ্টা চলছে। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছে কেজিডিসিএল। তবে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে গ্যাসের গ্রাহকদের চাহিদা সামাল দেয়া নিয়েও বিপাকে রয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এলএনজি উৎসের গ্যাসের জোগান বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহৎ সার কারখানা সিইউএফএল, গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা আবাসিক গ্রাহকদের জন্য গ্যাস সরবাহের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবু বিভিন্ন এলাকায় আবাসিকে গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। এলএনজি সরবরাহের ক্ষেত্রে যান্ত্রিক বা কারিগরি সমস্যা কবে সারবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, এরজন্য পেট্রোবাংলা এবং এক্সিলারেট কাজ করছে। তারাই বলতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ী সংলগ্ন এলএনজি টার্মিনালের সাথে বঙ্গোপসাগর উপকূলের তলদেশ দিয়ে চলে আসা পাইপলাইনের একটি মধ্যবর্তী সংযোগস্থলে রয়েছে হাইড্রোলিক ভাল্ব। এর অবস্থান পানির তলদেশে প্রায় ৪০ মিটার নিচে। গত ৩ নভেম্বর হাইড্রোলিক ভাল্বটি হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ে। এতে করে এলএনজি থেকে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে হাইড্রোলিক ভাল্বটি বিকল হয়ে পড়তে পারে। এরপর থেকে এলএনজির উৎস থেকে চট্টগ্রাম হয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
গ্যাস সঙ্কট নিরসনের দাবি
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (বিএইচআরসি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ গতকাল (মঙ্গলবার) কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়ের আহমদ মজুমদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা চট্টগ্রামে চলমান গ্যাস সঙ্কট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানিয়ে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। এ সময় বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আমিনুল হক বাবু, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, আঞ্চলিক শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান উল্লাহ বাহার, শেখ ওয়ালিদ হাসান, ডাঃ দীপক বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মানবাধিকার কমিশন নেতৃবৃন্দ বলেন, নগরবাসীর দৈনন্দিন জীবন-যাপনের অন্যতম অনুসঙ্গ গ্যাস। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস সঙ্কটের কারণে জনদুর্ভোগ চরমে। বিশেষ করে বাসাবাড়িতে গ্যাসের অবাবে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। অনেক বাসাবাড়িতে নির্দিষ্ট সময়ে গ্যাস মোটেও থাকেনা। আবার কোন কোন জায়গায় গ্যাস থাকলেও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সরকার গ্যাস সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে এলএনজি আমদানি এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ সত্তে¡ও চট্টগ্রামের আবাসিক পার্যায়ে গ্যাস সঙ্কট অনভিপ্রেত। দ্রুতগতিতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার দাবী জানান নেতৃবৃন্দ।
কেজিডিসিএল’কে এখন নির্ভর করতে হচ্ছে জাতীয় গ্রিডের সরবরাহের ওপর। যদিও তা চট্টগ্রামের শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ, বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহকদের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
গ্যাসের তীব্র সঙ্কটের কারণে নগরীর জামাল খান, জুবিলি রোড, এনায়েত বাজার, মোমিন রোড হেমসেন লেইন, চকবাজার, বহদ্দার হাট, মুরাদপুর, বাকলিয়া, লালখান বাজার, মেহেদীবাগ, লাভ লেইন, আগ্রাবাদ, খুলশীসহ বিভিন্ন এলাকায় গৃহিনীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কোথাও কোথাও রাতে দিনে আদৌ গ্যাস নেই আবার কোথাও অল্প সময়ের জন্য আসে গ্যাস, চাপও থাকে কম। এ অবস্থায় অনেকেই লাকড়ির চুলা, কেরোসিনের চুলা (স্টোভ), বৈদ্যুতিক হিটারে কোনোমতে রান্না সারতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই হোটেল রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে আনছেন। আবার হোটেল রেস্তোাঁরায়ও গ্যাসের সঙ্কটে খাবার তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিগত ২৪ এপ্রিল এক্সিলারেট এনার্জির বৃহৎ ভাসমান টার্মিনালযুক্ত জাহাজ ‘এক্সিলেন্স’ কাতার থেকে প্রথম এলএনজির চালান নিয়ে মাতারবাড়ীর কাছে সমুদ্রে নোঙর করে। অনেক জটিলতা, যান্ত্রিক ও কারগরি ক্রুটি-বিচ্যুতি, পাইপলাইনে ফুটোসহ বিভিন্ন সমস্যা অতিক্রম করে গত গত ১৮ আগস্ট বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চট্টগ্রাম হয়ে পাইপলাইনে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।