নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ডাইনিংয়ে তখন উচ্ছাসের আবহ। আগের দিন রানের চূড়া দেখানো জিম্বাবুয়েকে ‘অল্প’ রানেই বেধে ফেলার আনন্দ কভার করতে আসা সকল সাংবাদিকের চোখে মুখে। কেউ কেউ আশার বাতি দেখালেন এই বলে, সিলেটের ‘নির্বিষ’ উইকেটে খুব সহজেই তিনশ’ পেরুনো সম্ভব। অনেকে আবার ফেরার দিন-তারিখও ঠিক করায় পাঁয়তারা করছেন আগে-ভাগে টেস্ট শেষ হবার স্বপ্নে। সেই আশার প্রদ্বীপ অবশ্য জ্বেলেছিলেন বাংলাদেশেরই একজন, তাইজুল ইসলাম। তার স্পিন ঘূর্ণিতেই তো প্রথম ইনিংসে ‘মাত্র’ ২৮২ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। কে জানতো, দিন শেষে তার চেয়েও বড় নিরাশার নিবন্ধ লিখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ!
দিনের শুরুর সেই আনন্দ দিন শেষে নিমজ্জিত বিষাদের অন্ধকারে।
সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে বড় লিড উপহার দিয়েছে বাংলাদেশই। সফরকারীদের করা ২৮২ রানের জবাবে গতকাল প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ১৪৩ রানেই। শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে ২ ওভার মাসাকাদজারা কাটিয়ে দিয়েছে ১ রান তুলে। দ্বিতীয় দিন শেষে তার দল এগিয়ে ১৪০ রানে। এ নিয়ে সবশেষ সাত টেস্ট ইনিংসে দুইশ করতে পারল না বাংলাদেশ। এর ছয়টিতেই ছুঁতে পারেনি দেড়শ। তবু জিম্বাবুয়ে বলেই এই ইনিংস যেন বেশি বিব্রতকর।
কেউ খোঁচা মারলেন বাইরের বলে, কেউ খেললেন শরীর থেকে দূরে। কারও কারও শটের আবার ব্যাখ্যা পাওয়াই কঠিন। ব্যাটসম্যানদের যেন প্রতিযোগিতা, কে বেশি কাণ্ডজ্ঞানহীন! গত বছরখানেক ধরে টেস্টে ধুঁকছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। তাই বলে দেশের মাটিতে এমন নির্জীব উইকেটে জিম্বাবুয়ের নির্বিষ বোলিংয়েও এমন হাল! জিম্বাবুয়ের দুই পেসার মিলে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। এমনকি সিকান্দার রাজার সাদামাটা স্পিনেও বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে তিন উইকেট।
অথচ দিনের প্রথম সেশনটি ছিল বাংলাদেশের। তাইজুলের স্পিন ঝলকে জিম্বাবুয়ে শেষ ৫ উইকেট হারায় ২১ রানের মধ্যে। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন তাইজুল। আরেকটি পাঁচ উইকেট পেতে সময়ের হিসেবে এরপর পেরিয়েছে প্রায় সাড়ে তিন বছর। ‘প্রিয় প্রতিপক্ষ’ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় এবং ক্যারিয়ারে চতুর্থ পাঁচ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। সব মিলিয়ে ইনিংসে নিয়েছেন ১০৮ রানে ৬ উইকেট। তবে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই করা তার সেরা বোলিংটি (ইনিংসে ৮/৩৯) ছুঁতে না পারার হতাশাও কি থাকবে না!
তবে বোলিংয়ের স্বস্তি লাঞ্চের পর রূপ নেয় ব্যাটিংয়ের হতাশায়। দুই সেশনে পাঁচটি করে উইকেট হারিয়ে বিধ্বস্ত দলের ব্যাটিং। সবচেয়ে বড় হতাশা, ১০ উইকেটের একটিতেও উইকেট নেওয়ার মতো দারুণ কোনো ডেলিভারি করতে হয়নি জিম্বাবুয়ের বোলারদের। উইকেটে তেমন প্রাণ ছিল না, জিম্বাবুয়ের বোলিং আক্রমণও নয় খুব ধারাল। কিন্তু নিজেরা আত্মঘাতী হলে পতন ঠেকাবে কে! শুরুর ইমরুল কায়েস থেকে শেষের আবু জায়েদ চৌধুরী, সবাই ছিলেন একই পথের পথিক।
লাঞ্চের পর প্রথম বলেই বাজে শট খেলেছিলেন ইমরুল। সেটিতে না পারলেও পরে সফল হয়েছেন উইকেট বিলিয়ে আসায়। টেন্ডাই চাটারার বাইরের বল টেনে এনেছেন স্টাম্পে। স্রোতের সেটি শুরু, পরের প্রায় সবাই বয়েছেন একই ধারায়। শরীর থেকে দূরে খেলেছেন লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ কি করতে চেয়েছিলেন, তিনি নিজেও মনে হয় জানেন না। মুমিনুল হকের আউটের ধরন আবারও জানান দিল, স্পিনে ক্রমেই তার ব্যাটে জাগছে সংশয়।
বিপর্যয়ে বরাবরের ত্রাতা মুশফিকুর রহিম লড়াই করছিলেন। দারুণ কিছু শটও খেলেছেন। চা-বিরতির পর শুরু করলেন দুর্দান্ত শটে চার মেরে। পরের বলে স্টাম্পের বাইরে বলে খোঁচা। মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে ছিল আশার ইঙ্গিত। কিন্তু যে বলে শন উইলিয়োমসকে ফিরতি ক্যাচ দিলেন, সেটিকে অনেক চেষ্টা করেও আউট হওয়া কঠিন।
বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতরেছেন কেবল দলের নবীনতম সদস্য। অভিষিক্ত আরিফুল হক লড়াই করেছেন। ৪৯ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর নেমেছিলেন, কিন্তু চাপে নুইয়ে পড়ার ছাপ ছিল না তার ব্যাটিংয়ে। ছিলেন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু যোগ্য একজন সঙ্গী যে পেলেন না! সিঙ্গেল নেওয়া, না নেওয়ার দোটানায় রান আউট শেষ ব্যাটসম্যান আবু জায়েদ। আরিফুল তখন অপরাজিত ৯৬ বলে ৪১ রান করে।
আরিফুল যখন ফিরছেন অভিষেকে ফিফটি না পাওয়ার হতাশা নিয়ে, বাংলাদেশের ড্রেসিং রুম তখন নিমজ্জিত আরও বড় হতাশায়। ব্যাট করতে হবে শেষ ইনিংসে, প্রথম ইনিংসেই ১৩৯ রানে পিছিয়ে থাকা মানে হারকে আলিঙ্গন করা।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে (১ম টেস্ট)
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম
টস : জিম্বাবুয়ে, ১ম দিন শেষে জিম্বাবুয়ে ২৩৬/৫
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস রান বল ৪ ৬
মুর অপরাজিত ৬৩ ১৯২ ৬ ০
চাকাভা ক শান্ত ব তাইজুল ২৮ ৮৫ ২ ০
ডব্লিউ মাসাকাদজা ক মুশফিক ব তাইজুল ৪ ২৮ ০ ০
মাভুতা এলবিডব্লিউ নামজুল ৩ ১৪ ০ ০
জার্ভিস ক মিরাজ ব তাইজুল ৪ ৯ ০ ০
চাতারা ক লিটন ব তাইজুল ০ ১ ০ ০
অতিরিক্ত (লে বা ১, বা ১) ২
মোট (১১৭.৩ ওভার, অল আউট) ২৮২
উইকেট পতন : ৬-২৬১ (চাকাভা), ৭-২৬৮ (ডব্লিউ মাসাকাদজা), ৮-২৭৩ (মাভুতা), ৯-২৮২ (জার্ভিস), ১০-২৮২ (চাতারা)।
বোলিং : আবু জায়েদ ২১-৩-৬৮-১, তাইজুল ৩৯.৩-৭-১০৮-৬, আরিফুল ৪-১-৭-০, মিরাজ ২৭-৮-৪৫-০, নাজমুল ২৩-৬-৪৯-২, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-৩-১।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস রান বল ৪ ৬
লিটন ক চাকাভা ব জার্ভিস ৯ ২৫ ১ ০
ইমরুল ব চাতারা ৫ ১৩ ১ ০
মুমিনুল ক মাসাকাদজা ব রাজা ১১ ৩৮ ১ ০
শান্ত ক চাকাভা ব চাতারা ৫ ৫ ১ ০
মাহমুদউল্লাহ ব চাতারা ০ ২ ০ ০
মুশফিকুর ক চাকাভা ব জার্ভিস ৩১ ৫৪ ৫ ০
আরিফুল অপরাজিত ৪১ ৯৬ ৩ ০
মিরাজ ক ও ব উইলিয়ামস ২১ ৩৩ ৩ ০
তাইজুল ক চাকাভা ব রাজা ৮ ২৪ ০ ০
নাজমুল ক চারি ব রাজা ৪ ১৫ ১ ০
আবু জায়েদ রান আউট (টেলর/চাতারা) ০ ১ ০ ০
অতিরিক্ত (বা৭, লে বা ১) ৮
মোট (৫১ ওভার, অল আউট) ১৪১
উইকেট পতন : ১-৮ (ইমরুল), ২-১৪ (লিটন), ৩-১৯ (শান্ত), ৪-১৯ (মাহমুদউল্লাহ), ৫-৪৯ (মুমিনুল), ৬-৭৮ (মুশফিকুর), ৭-১০৮ (মিরাজ), ৮-১৩১ (তাইজুল), ৯-১৪৩ (নাজমুল), ১০-১৪৩ (আবু জায়েদ)।
বোলিং : জার্ভিস ১১-২-২৮-২, চাতারা ১০-৪-১৯-৩, মাভুতা ৬-০-২৭-০, রাজা ১২-২-৩৫-৩, ডব্লিউ মাসাকাদজা ৮-২-২১-০, উইলিয়ামস ৪-০-৫-১।
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস রান বল ৪ ৬
মাসাকাদজা ব্যাটিং ১ ৮ ০ ০
চারি ব্যাটিং ০ ৪ ০ ০
অতিরিক্ত ০
মোট (২ ওভার, ০ উইকেট) ১
বোলিং : তাইজুল ১-০-১-০, নাজমুল ১-১-০-০।
*২য় দিন শেষে ১০ উইকেট হাতে নিয়ে ১৪০ রানে এগিয়ে জিম্বাবয়ে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।