Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘অজ্ঞাত লাশ’ এক বছর পর জানা গেল খুনি দুলাভাই!

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

পরনে লুঙ্গি, শার্ট। গলায় চিকন পাটের রশি। যুবকের লাশটি ভাসছিলো পুকুরে। এটি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার পশ্চিম মনসা সিপাহি বাড়ির পুকুর। খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। ১০দিন পর তার পরিচয়ও মিলে। স্বজনেরা সনাক্ত করেন তিনি মো. রুবেল উদ্দিন (২৫)। আর একবছর পর জানা যায় খুনের রহস্য। খুনি অন্য কেউ নয় তার আপন দুলাভাই। খুনি চক্রের দুইজনকে গ্রেফতারের পর পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
তবে মূলহোতা রুবেলের দুলাভাই জামশেদকে এখনও ধরা যায়নি। অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের পর পটিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। চার মাস তদন্ত করেও পুলিশ খুনের রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে মামলার তদন্তভার যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইতে। পিবিআই ক্লু-লেস এই মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়।
পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক গতকাল শুক্রবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জামশেদ পেশাদার ছিনতাইকারী। মাঝে মধ্যে শ্যালক রুবেল তার সহযোগী হতেন। ছিনতাইয়ের টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধের জেরেই এই খুন। জামশেদ তার সহযোগীদের নিয়ে কৌশলে রুবেলকে তার অটোরিকশাসহ তুলে নিয়ে খুন করেন। পরে অটোরিকশাটিও ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, রুবেলের লাশ উদ্ধারের দশদিন পর লাশ সনাক্ত করেন তার স্বজনেরা। আর তখন রুবেলের বোন নিজের স্ত্রীর সাথে জামশেদও খুব কান্নাকাটি করেন। ১০দিন নিখোঁজের পর রুবেলের লাশ পাওয়া যায়। ততদিনে তাকে হন্যে হয়ে খুঁজেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের সাথে সাথে ছিলেন জামশেদও। তার অভিনয় এতটা নিখুঁত ছিল সে যে এই খুনের সাথে জড়িত তার পরিবারের সদস্যরা তা বুঝতেও পারেনি। নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও বোয়ালখালী থেকে গত বুধবার অভিযান চালিয়ে মো. রোকন উদ্দিন মামুন (৪০) ও মো. নাছির (২২) নামে খুনিচক্রের দুই সদস্যকে পাকড়াও করা হয়। তারা মো. জামশেদের (২৮) সহযোগী।
এদের মধ্যে মামুন ইতোমধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বেশ্বর সিংহের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে বলেও জানান পিবিআই কর্মকর্তা আবু জাফর মো. ওমর ফারুক। জবানবন্দিতে মামুন জানিয়েছে জামশেদ ও নাছিরের পরিকল্পনায় রোকনকে ভাড়া করে এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। রোকনের বিরুদ্ধে রাউজান থানায় তিনটি হত্যা মামলা, নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অস্ত্র মামলা ও কয়েকটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি। এ হত্যাকান্ডের সাথে গ্রেফতার ওই দুইজনসহ মোট সাতজন জড়িত ছিলো বলে জবানবন্দিতে মামুন জানিয়েছে।
ওমর ফারুক বলেন, বড়বোনের স্বামী জামশেদের সাথে রুবেলের পারিবারিক বিরোধ ছিল। তার জেরে জামশেদ ও নাছির মিলে রুবেলকে হত্যার জন্য রোকনকে ভাড়া করেন। সে হিসেবে পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে রুবেলের সিএনজি অটোরিকশা করে ৩১ আগস্ট ভোরে পটিয়া যায় মোট চারজন। পথে তারা রুবেলকে গলায় রশি পেছিয়ে খুন করে লাশটি সড়কের পাশে পুকুরে ফেলে দেয়। বিক্রি করে দেওয়া রুবেলের অটোরিকশাটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বাসিন্দা আবুল কাশেমের পুত্র রুবেল চট্টগ্রাম নগরীতে সিএনজি অটোরিকশা চালাতো। নগরীর চান্দগাঁও থানার ওসমানিয়া পুলের গোড়ায় সেলিমের কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকতো রুবেল। পিবিআই জানান, মামুনের জবানবন্দিতে জামশেদ ও তার সহযোগীদের নাম আসার পর তারা পালিয়ে গেছে। তবে তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য চট্টগ্রামে মাসে গড়ে ২৫টি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার হচ্ছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই গুপ্তহত্যার শিকার। তবে নাম পরিচয় জানা না যাওয়া বেশির ভাগ মামলার রহস্য উদঘাটন করা যাচ্ছে না। পিবিআই ইতোমধ্যে এমন অনেক হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুনি

২৭ অক্টোবর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ