Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যৌন হয়রানির লোমহর্ষক বর্ণনা এইচআরডব্লিউর

নারীদেরকে যৌন সম্ভোগের উপকরণ মনে করা হয়

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

উত্তর কোরিয়ায় নারীদেরকে যৌন সম্ভোগের উপকরণ মনে করা হয়। সরকারি কর্মকর্তারা চাইলেই নারীদের ভোগ করতে পারে। এজন্য তাদের কোন জবাবদিহি বা বিচারের মুখোমুখি হতে হয় না। উল্টো নির্যাতিত নারীকে পরবর্তীতে আবারো নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক রিপোর্টে উত্তর কোরিয়ার নারীদের এমনই চিত্র ফুটে উঠেছে। বৃহস্পতিবার সংগঠনটি ৯৮ পৃষ্ঠাবিশিষ্ট ওই রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে নেয়া উত্তর কোরিয়ার শতাধিক অধিবাসীর সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন দেশটিতে নারীদের ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন। সাক্ষাৎকার দেয়া এসব ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। পরে তারা উত্তর কোরিয়া ত্যাগ করেছেন। তারা সভ্য সমাজের বুকে এমন একটি জগতের সন্ধান দিয়েছেন যেখানে অব্যাহতভাবে নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়। কিন্তু এর জন্য কোন শাস্তি পেতে হয় না। হয়রানি থেকে রেহাই পাননা নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত নারীরাও। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ায় অযাচিত যৌন সম্পর্ক ও নারীর প্রতি সহিংসতা এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে মানুষ এটিকে দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিতে শুরু করেছে। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রোথ বলেন, ন্যায় বিচার পাওয়ার কোন উপায় থাকলে উত্তর কোরিয়ার নারীরা হয়তো ‘মি টু’ এর মতো প্রতিবাদ জানাতো। কিন্তু কিম জং উনের স্বৈরশাসন তাদের কন্ঠ স্তব্ধ করে রেখেছে। রিপোর্টে যেসব নারীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে মাত্র একজন জানিয়েছেন যে তিনি হয়রানির বিষয়ে পুলিশকে জানানোর চেষ্টা করেছেন। বাকীরা কেউই তাদের সঙ্গে ঘটা হয়রানির বিষয়ে কাউকে জানাননি। কেননা তারা পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে পারেন না। তারা মনে করেন না যে, পুলিশ হয়রানির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবে। উত্তর কোরিয়ার একজন সাবেক নারী ব্যবসায়ী দাবি করেন, বিভিন্ন সময়ে তাকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রহরী বা পুলিশ যে কোন সময় আমাকে মার্কেটের বাইরে তার শূণ্য কক্ষে যেতে বলতো অথবা অন্য কোন জায়গায় নিয়ে যেতো। এমন ঘটনা এতই ব্যাপক আকার ধারণা করে যে নারীরা এটাকে সাধারণ বিষয় হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করে। ৪০ বছর বয়সী এই নারী বলেন, পুরুষরা আমাদের যৌন উপকরণ (সেক্স টয়) মনে করতো। আমরা ছিলাম তাদের করুণার পাত্র। এই ব্যবসায়ী ২০১৪ সালে উত্তর কোরিয়া ছেড়েছেন। উত্তর কোরিয়ার যেসব নারী চিকিৎসক দেশত্যাগ করেছেন, তারা জানিয়েছেন, সেখানে যৌন হয়রানির শিকার নারীদের পরীক্ষা ও চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মোট ১০৬ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এদের মধ্যে ৭২ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী, চার জন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ও ৩০ জন পুরুষ। এদের সবাই উত্তর কোরিয়ার বাইরে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। যৌন হয়রানির শিকার সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হিউ জং হাই সিএনএনকে বলেন, উত্তর কোরিয়ায় তার পরিচিত ৯০ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি তার এক বান্ধবীর কথা উল্লেখ করেন, যে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে ১৭ বছর বয়সেই আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাকারী ওই মেয়েটিকে তার পিতা-মাতা ধর্ষণ এড়ানো জন্য দিনের আলো ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই ঘরে ফিরতে বলেছিল। কিন্তু প্রকাশ্য দিবালোকেই তার সঙ্গে অসভ্যতা করা হয়েছে। এই পুলিশ কমকর্তা আরো জানান, উত্তর কোরিয়ার অনেক মেয়ে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়। কিন্তু এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের থেকে যৌন সুবিধা দাবি করে। তাদেরকে এ প্রস্তাবে অবশ্যই রাজি হতে হয়। সিএনএন, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যৌন হয়রানি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ