Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কারাগারে মাদক যেত মসলা-সবজির বস্তায়

রিমান্ডে পুলিশকে চাঞ্চল্যকর তথ্য জেলার সোহেল রানার

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

 কারাগারে নিয়োগ বাণিজ্য এবং টাকা না দিলে ইলিশ বেড

বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে ফেন্সিডিল, নগদ অর্ধকোটি টাকা ও বিভিন্ন ব্যাংকের চেক-এফডিআরসহ আটক হওয়া জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় দ’ুদিনের রিমান্ডে ভৈরব রেলওয়ে পুলিশকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন অভিযুক্ত জেলার। গত ৩০ ও ৩১ অক্টোবর রিমান্ডশেষে ভৈরব রেলওয়ে ওসি মো. আব্দুল মজিদ বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে ২ দিনের রিমান্ডে আনা হয়। জেলার সোহেল রানা স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে নিজের বিভিন্ন অপকর্মের কথা স্বীকার করেছেন। জেলার নিজেই একজন মাদকসেবী। কারাগারের অধিকাংশ দায়িত্বপ্রাপ্তরাও মাদক সেবনে জড়িত। বিভিন্ন সময় কারাভ্যন্তরে মাদক সেবন করার কারণে তারা টালমাটাল হয়ে পড়ত।
জেলার সোহেল রানার সাথে কয়েদী, কারারক্ষীসহ কারাগারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঠিকাদারদের খাদ্য সরবরাহ করা পিকআপ ভ্যানে পেঁয়াজ, রসুন ও সবজির বস্তার ভিতরে করে বন্দীদের কাছে ফেন্সিডিল, ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য পৌঁছার পর কয়েদীদের মাধ্যমে বন্দীদের কাছে বিক্রি করা হতো। মাদক বিক্রির টাকা মাস শেষে স্টাফসহ কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে বন্টন করত। জেলারের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া টাকা বন্টন শেষে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কোটি কোটি টাকা প্রতিমাসে বন্দিদের কাছ থেকে এবং মাদক বিক্রির মাধ্যমে অবৈধ উপার্জন করা হতো।
এ ছাড়াও বন্দীদের জিম্মি করে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিয়ে টাকা সংগ্রহ করতো জেলার। কারা অভ্যন্তরে বন্দিরা টাকা দিলে বিনাশ্রম কারাদন্ড হয়ে যেত সশ্রম ও টাকা না দিলে বিনাশ্রম হয়ে যেত সশ্রম কারাদন্ড। অন্যদিকে বন্দিদের যারা টাকা দিত তাদেরকে রাতে রাখা হতো হাসপাতালের বেডে। টাকা না দিলে ১০০ থেকে দেড়শ বন্দিকে একসাথে রাখা হতো ১২ ফুটের একটি কক্ষে।
অভিযুক্ত জেলারের ভাষায়, সেটাকে বলা হতো ‘ইলিশ বেড’। জেলার পুলিশকে আরো জানিয়েছেন, আগামী ৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারক্ষী পদে নিয়োগ বাণিজ্যের কথা। ওই নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোথা থেকে কিভাবে টাকা আসবে সে তথ্যও দেন। কারাগারে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িতদের অনেকের নামও প্রকাশসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন জেলার। তদন্তের স্বার্থে ওই নামগুলো পুলিশ আপাতত প্রকাশ করতে পারছে না বলে জানান ওসি।
উল্লেখ্য, ওই ঘটনায় ভৈরব রেলওয়ে থানার এসআই আশরাফ উদ্দিন ভূঁইয়া বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য ও মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলা দুটির মধ্যে মানিলন্ডারিং আইনের মামলা তদন্ত করবে দুদক এবং অপর মাদক আইনের মামলা তদন্ত করছেন রেলওয়ে পুলিশ। তদন্তের প্রয়োজনে রেলওয়ে পুলিশ বিজ্ঞ আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে কিশোরগঞ্জ বিচারিক আদালত-২ এর হাকিম ইকবাল মাহমুদ ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ