পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দি ঢাকা ফোরামের গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের উপাদানগুলো অনুপস্থিত। দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে স্বাধীনতাহরণ করা হয়েছে। বিচার বিভাগকে সরকার কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে তা সাবেক প্রধান বিচারপতির কথায় স্পষ্ট হয়ে গেছে। খেলার আগেই প্রতিপক্ষের হাত-পা ভেঙ্গে দিচ্ছে। রেফারি কে হবে, খেলার ফলাফল কি সেটাও নির্ধারণ করছে সরকার। চলমান এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানায় সংগঠনটি। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে বলা হয় নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে সংবিধানের প্রদত্ত ক্ষমতার ব্যবহার করতে দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই সকলের প্রত্যাশা প্রধান রাজনৈতিক দলের উচিত আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়া। তা না হলে দেশ গভীর অন্ধকারে নিপাতিত হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ঢাকা ফোরামের চেয়ারম্যান ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সিরাজুল ইসলাম। সাবেক আমলা, কূটনীতিক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
মূল প্রবন্ধে বলা হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সমগ্র জাতি ২০১৪ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তির আশংকায় উৎকণ্ঠিত। বর্তমান সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বহাল রেখেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার বিষয়ে অনড়। অর্থাৎ দলীয় নেত্রীকে নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান হিসেবে বহাল রাখতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সরকারি দল ইতিমধ্যে এই লক্ষ্যে পুলিশ ও জনপ্রশাসন বিভাগের রাজনীতিকরণ সম্পন্ন করেছে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে। যদি এটি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে এমন আশঙ্কা অমূলক নয় যে গায়েবী, মিথ্যা মামলা, গুম আর অপহরণের মতো বিষয়গুলো আরও প্রকটতর হবে।
দুটি বিষয় ভোটাধিকার পুনরূদ্ধারের ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণকে আশান্বিত করেছে বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে প্রথমটি হলো- অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কিছু পরিবর্তন। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভারতসহ অন্যান্য দেশ ও সংস্থাসমূহের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন।
বাংলাদেশ ইস্যুতে বহির্বিশ্বের অবস্থান বদলেছে দাবি করে প্রবন্ধে বলা হয় অতীতে আওয়ামী লীগের দেয়া যুক্তি বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দেওয়া মানে ‘তথা কথিত’ ইসলামী সন্ত্রাসকে উষ্কে দেয়া যা আন্তর্জাতিক বিশ্ব অনেকটা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নেই। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাম্প্রতিক সফরে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। বাংলাদেশে সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার ও অন্যান্য সাংবাদিক ও কূটনীতিক একই মত ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নেই উল্লেখ করে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, তফসিলের পর ৪৫ দিনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অসম্ভব। একটি রাজনৈতিক দল দুই বছর থেকে ভোট চেয়ে জনসভা করে বেড়াচ্ছে। আরেকটি দলকে জনসভার অনুমতিই দেয়া হচ্ছেনা। সিইসি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ৫ই জানুয়ারির মতো আর কোনো নির্বাচন হবে না। ১৯৯৬ সালে সিইসির দলীয় ও নির্দলীয় দুই রকম সরকারের অধীনে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ইসিকে তাই প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, সুশীল সমাজের কাজ হচ্ছে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। সেই সুশীল সমাজও বিভক্ত হয়ে গেছে। মামলা, মোকদ্দমা, গুম খুনের কারণে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে দেশে। এই পরিবেশ অব্যাহত থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ইসি সন্দেহজনক কার্যকলাপ করছে অভিযোগ করে সাবেক এই মহা হিসাবনিরীক্ষক বলেন, ইভিএম প্রকল্প পাসের আগে ইসি তা কেনার জন্য এলসি খুলেছে। ইসির তো আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। সেসব বাদ দিয়ে তারা ইভিএমের পেছনে লেগে আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, একাত্তর সালের মতো বাংলাদেশ একটি মৌলিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। গতানুগতিক নির্বাচন করে কেউ যদি তিন চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেয় সমস্যার সূত্রপাত হবে সেই সময় থেকে। আমরা স্বল্প সময়ে কিছু করতে পারবনা। পঞ্চদশ সংশোধনীর অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে সংসদ না ভেঙ্গে নির্বাচন না করলে ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন হবে। তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে ১৫০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম। জিডিপি জিএনপিসহ নানা সূচকে উন্নতি হচ্ছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে ফাকি রয়েছে। এই উন্নতির কোন মানে নেই। আইনের শাসনের কোন বিকল্প নেই। ভোট দিতে পারাই এখন জনগণের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার পরিবেশ না পেলে কিভাবে ভোট দিবে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও সুষ্ঠু নির্বাচনের শর্ত। কিন্তু সেই সংবাদপত্রকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হচ্ছে। দেশের বিচার বিভাগের কি অবস্থা তা সাবেক প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে বোঝা যায়। দেশে সাংঘাতিক সংকটময় পরিবেশ বিরাজ করছে। এখানে সুশীল সমাজও আপোস করে চলছে। এজন্য সংসদ ভেঙ্গে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, সত্যিকার ভোটে নির্বাচিত সরকারের কর্মকান্ড ভাল হয়। ভুয়া ভোটে নির্বাচিত সরকারের কাজ ভাল হয় না। যে সরকার প্রশাসন, পুলিশের মাধ্যমে ভোটে জিতে তারা জনগণকে খুশি করার বদলে পুলিশ ও প্রশাসনকেই খুশি করে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল বলে ভালভাবে শাসন করেছে। কিন্তু ২০১৪ সালের পরবর্তী পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। এই আমলে জনগণকে প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কের কারণে বিরোধী নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারছেনা। নির্বাচন যতই সামনে আসে সরকার ততই দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। জামিনযোগ্য অপরাধে মামলার পরও ব্যারিস্টার মইনুলকে জামিন দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। ইউএসএইড বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সুশাসন বিষয়ক ডেপুটি অফিস ডিরেক্টর স্লেভিকা রডোসেভিক বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সুশীল সমাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আশা করি তাদের এই আলোচনা ও সংলাপ অব্যাহত থাকবে।
বৈঠকে সাবেক রাষ্ট্রদূত এফ এ শামীম আহমেদ, মাহমদুর রেজা চৌধুরী, ইফতেখারুল করিম, মাসুদ আজিজ, শাহেদ আখতার, পানি বিশেষজ্ঞ ম ইনামুল হক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুজাহেরুল হক, জাপার এমপি ফখরুল ইমাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।