Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাস্তার পাশে লাশ

গুম-অপহরণের পর এখন নতুন আতঙ্ক

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

গুম, অপহরণের পর এখন নতুন আতঙ্ক শুরু হয়েছে ‘রাস্তার পাশে লাশ’ পাওয়া। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে রাস্তার পাশে লাশ পাওয়ার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বর্তমানে রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে বা নির্জন এলাকায় মানুষের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমে এসব লাশের পরিচয় পাওয়া না গেলেও পরবর্তীতে অনেকের পরিচয় মিলছে। অন্যদিকে বহুদিন অপেক্ষার পরেও কিছু লাশের পরিচয় পাওয়া যায় না। বেশিরভাগের শরীরে পচন ধরায় বা বিকৃত হওয়ায় পরিচয় নিশ্চিত হতে চিকিৎসক ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অনেক বেগ পেতে হয়।
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনদের দাবি, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে উঠিয়ে নিয়ে হত্যার পরে আলামত নষ্ট এবং দায় এড়াতে এসব লাশ রাস্তাসহ বিভিন্ন ঝোঁপঝাড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। যদিও বরাবরের মতো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে। তাদের দাবি, এমন কোনো ঘটনার সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত নয়। তবুও কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, রাস্তাসহ ঝোঁপঝাড়ে লাশ পাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও মানবাধিকারা কর্মীরা। তারা বলছেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যদি এমন ঘটনা না ঘটিয়ে থাকে তবে তাদের নিজেদের স্বার্থেই এসব হত্যাকান্ডের জোড়ালো তদন্ত করা উচিত। তাদের মতে, লোক দেখানো তদন্ত করে সময় ক্ষেপণ না করে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য উপাস্থাপনের মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আরোপিত অভিযোগের দায় মোচন করা উচিত। একইসঙ্গে ঘটনার সাথে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। নিরাপত্তা ও মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বরে নারায়গঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলের আলমপুরায় একটি সেতুর নিচে তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। প্রথমে লাশের পরিচয় অজ্ঞাত থাকলেও পরে নিহতদের পরিবার ও স্বজনরা লাশের পরিচয় সনাক্ত করেন। জানা যায়, নিহত যুবকরা হলেন-সোহাগ, শিমুল ও বাবু। পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ঢাকায় ফেরার পথে যাত্রবাহী বাস থেকে নামিয়ে তাদের তিনজনকে খুন করা হয়েছে।
তিন খুনের ঘটনার রেশ না কাটতেই মাত্র দেড় মাসের মাথায় গত ২১ অক্টোবর আবারও নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মহাসড়কের রাস্তার পাশ থেকে চারজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। এই চারজনের মাথায়ও আগের তিনজের মতোই গুলির চিহ্ন ছিল। স্বজনদের অভিযোগ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে .....কে তাদের তুলে নেওয়া হয়েছিল।
এদিকে একইদিনে রাজধানীর দিয়াবাড়ির একটি ডোবা থেকে আরও দুই যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের জন্য এসব লাশ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। স্বজনরা হাসপাতালে এসে পরিচয় নিশ্চিত করলে জানা যায়, নিহতরা হলেন- কামাল হোসেন শুভ ও ইমান শেখ। পরিবার ও স্বজনরা জানান, ১৪ অক্টোবর থেকে কামাল ও ইমান নিখোঁজ ছিলেন।
এদিকে চার খুনের রেশ কাটতে না কাটতেই গত বৃহস্পতিবার আবারও নারায়ণগঞ্জে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ছিন্নভিন্ন লাশ পাওয়া গেছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের কাছ থেকে লাশটি উদ্ধার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ। এই নিয়ে গত ১০ দিনের ব্যবধানে খোদ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সড়কের পাশ থেকে ৭ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
কয়েকদিনের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জে এতগুলো লাশ পাওয়ায় এটি এখন আতঙ্কের নগরী। এসব লাশ কিভাবে এখানে এসেছে বা কারা তাদেরকে হত্যা করেছে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন তথ্য নেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। যদিও নিহতদের স্বজনদের অধিকাংশের তীর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে। ঘটনার পর লাশ সনাক্তে এসে বেশিরভাগ পরিবার দাবি করেন- পুলিশ বা ডিবি পরিচয়ে কয়েকদিন আগে তাদের স্বজনদের ধরে আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, সম্প্রতি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ আরও বেশি সতর্ক রয়েছে। আগের চেয়ে এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশের কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে এবং তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মে. জে. এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.) বলেন, এসব ঘটনায় পুলিশের গাঁ বাঁচানোর চেষ্টা ভালো লক্ষণ নয়। তাদের নিজেদের স্বার্থেই এসব গুম কিংবা অপহরণের পর হত্যার ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত প্রয়োজন।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, এমন ঘটনার পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উদাসীনতা কাম্য নয়। সরকার নিজেও এর দায় এড়াতে পারে না। এসব ঘটনার সুষ্ঠ অনুসন্ধ্যানে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা উচিত। এছাড়া গণতান্ত্রিক দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর স্বচ্ছতা, জবাবাদিহিতা থাকা জরুরী।
এদিকে রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ওপরে মিলেছে অজ্ঞাত পরিচয় লাশ। এর মধ্যে- ১১ অক্টোবর টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের বেগুনটাল এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি, ৪ অক্টোবর বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের পিরোজপুর-বাগেরহাট সড়কের রাস্তার ওপর থেকে অজ্ঞাত নারীর (৪৫) মাথা থেতলানো রক্তাক্ত লাশ, ২৯ সেপ্টেম্বর খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের গুপ্তমারী গ্রামের রাস্তার পাশ থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির মস্তকবিহীন লাশ ও ৪ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ফুলবাড়ী এলাকার রাস্তার পাশ থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির (৪৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লাশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ