Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাহারাদারের ঠাঁই খোঁয়াড়ে

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে ফেন্সিডিল, নগদ অর্ধকোটি টাকা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার চেক ও এফডিআরসহ গ্রেফতারকৃত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো: সোহেল রানা বিশ্বাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ভৈরব রেলওয়ে থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও মানিলন্ডারিং আইনে দুটি মামলা দায়ের করার পর গতকাল তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে সোহেল রানাকে হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়িয়ে পুলিশি নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আটকের সময় মাতাল অবস্থায় ছিল বলে অভিযুক্ত সোহেল রানা স্বীকার করেন। ২০০৪ সালে কারা অধিদফতরে চাকরি নেয়ার পর থেকেই নানা দুনীতিতে ব্যাপরোয়া হয়ে উঠেন সোহেল রানা। গত ১৪ বছরে কারা অধিদফতরে চাকরির করে ময়মনসিংহে বিপুল পরিমান সম্পদ করেছেন তিনি। এসব সম্পদ তদন্তে নেমেছে পুলিশসহ একাধিক সংস্থা।
কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গতকাল তাকে মৌখিক সাময়িক বরখাস্ত করেছি। তার কর্মস্থল চট্টগ্রামে ফোনে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আজ রোববার অফিসকালীন সময়ে তাকে এ বিষয়ে লিখিত আদেশ দেওয়া হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন। আমরা রেলওয়ে পুলিশকে তদন্তে সহযোগিতা করছি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ভৈরব থানার ওসি আব্দুল মজিদ বলেন, জেলার সোহেল রানার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। একটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এবং অপরটি মানি লন্ডারিং আইনে। মামলা দুটির নম্বর যথাক্রমে ৯ ও ১০। তাকে মাদক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত গতকাল শুনানী শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সে দীর্ঘ দিন ধরে মাদক ব্যবসাসহ মাদক সেবনে লিপ্ত ছিল। বিজয় ট্রেনে তাকে ধরতে গেলে পুলিশের সাথে আচরণ খারাপ করে।
ভৈরব প্রতিনিধি এম আর রুবেল জানান, ২০০৪ সালে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকুরি নেয় তিনি। তার বাবা মো: জিন্নত আলী বিশ্বাস। মাতা মৃত রোকেয়া বিশ্বাস। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তার। ময়মনসিংহ শহরের ১১৯ আরকে মিশন রোডের বাড়ির মালিক সোহেল রানা ও তার দুই বোনের নামে। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনংসিংহের ধোবাউরা উপজেলার পোড়াকান্দলিয়ায়। ২০০৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরি পাবার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও নরসিংদী জেলা কারাগারে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় বিপুল পরিমান টাকার মালিক হন সোহেল রানা। গতকাল তিনি এঘটনাটি অন্যদিকে প্রভাবিত করতে পুলিশের উর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তার দিকে ইঙ্গিত করেন সাংবাদিকদের কাছে। তবে কোন কর্মকর্তার নাম বলেনি। তিনি নিজেকে ডায়বেটিক্স ও প্রেসারের রোগী বলে দাবি করেন। আটকের সময় মাতাল অবস্থায় ছিল বলে অভিযুক্ত সোহেল রানা স্বীকার করেন।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, জেলার সোহেল রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। আটকৃকত সোহেল রানা অসুস্থতার ভান করে অজ্ঞান হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক তাকে ঢাকা নেয়ার জন্য এম্ভুলেন্স আনা হলে তিনি স্বাভাবিক হন। তার বিষয়ে তদন্ত চলছে।
উল্লেখ্য, জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনে করে শুক্রবার চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পথে ভৈরব রেলওয়ে পুলিশের ওসি মো: আব্দুর মজিদের নেতৃত্বে ১২ বোতল ফেনসিডিল, নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, সোহেলের নামে বিভিন্ন ব্যাংকের পৃথক ৩টি চেকের মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংক ময়মনসিংহ ৪০ লাখ টাকার একটি চেক, ব্র্যাক ব্যাংকের ২০ লাখ টাকার একটি চেক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক ময়মনসিংহ শাখায় ৭০ লাখ টাকার তিনটি চেক এবং মো: সোহেল রানা বিশ্বাসের নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংক ময়মনসিংহ শাখায় এফডিআর ৫০ লাখ টাকা ও প্রিমিয়ার ব্যাংক ময়মনসিংহ শাখায় ৫০ লাখ টাকার ২টি এফডিআর, স্ত্রী হোসনে আরা পপির নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংক ময়মনসিংহ শাখায় ৫০ লাখ টাকা ও প্রিমিয়ার ব্যাংক ময়মনসিংহ শাখায় ৫০ লাখ টাকার ২টি এফডিআর, শ্যালক মো: রাকিবুল হাসানের নামে প্রিমিয়ার ব্যাংক ময়মনসিংহ শাখায় ৫০ লাখ টাকার একটি এফডিআর জব্দ করে পুলিশ। জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসের কাছ থেকে জব্দকৃত ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার চেক ও এফডিআরসহ নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৪ কোটি চব্বিশ লাখ ৪৩ হাজার টাকার উৎস জানতে তদন্ত করছে পুলিশসহ একাধিক সংস্থা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদক

২২ অক্টোবর, ২০২২
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ