পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত শুক্রবার বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও সংসদীয় দলের সদস্যদের নিয়ে এ যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে কওমী মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে বিদ্রুপ করে ‘তেঁতুল হুজুর’ না বলা এবং তার সম্পর্কে সব ধরনের নেতিবাচক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম আর জামায়াত এক নয়। এরা পরস্পরবিরোধী। এদের এক করে দেখা ঠিক নয়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আচরণে আর কখনই যাতে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা অসন্তুষ্ট না হন। ১৪ দলের শরিকরাও যাতে হেফাজতের বিরুদ্ধে কথা না বলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে আমরা স্বাগত জানাই। তার এ বক্তব্য যৌক্তিক এবং বাস্তবভিত্তিক। কারণ জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামী দল ও সংগঠনের নীতি-আদর্শ ও কার্যক্রম কখনোই এক নয়। এ কথা আমরা বহু বছর ধরেই বলে আসছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, তারা যুদ্ধাপরাধ করেছে কিন্তু কওমী মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেনি। তারা যুদ্ধাপরাধের সাথে যুক্ত নয়। তারা স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি। অতএব, সঙ্গত কারণেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সাধুবাদযোগ্য।
আমরা দেখেছি, কয়েক বছর ধরে জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোকে সরকার, তার দলীয় সমর্থক এবং জোটবদ্ধ দলগুলো এক দৃষ্টিতে দেখেছে। ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোকে জামায়াতে ইসলামীর সাথে এক করে ফেলেছে। অথচ জামায়াতে ইসলামীর সাথে অন্যান্য ইসলামী দল ও সংগঠনের নীতি এবং আদর্শের ক্ষেত্রে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। বলা যায়, আকাশ-পাতাল ব্যবধান রয়েছে। দুঃখের বিষয়, সরকারি দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে তার জোটবদ্ধ দল এবং তার সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা এ পার্থক্য করতে পারেননি। তারা দাঁড়ি-টুপিওয়ালা মানুষ দেখলেই একবাক্যে বলে দিতেন জামায়াত দলভুক্ত। তারা এ কথা ভুলে গিয়েছিলেন, দাঁড়ি রাখা এবং ইসলামী পোশাক ও টুপি শুধু জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও সমর্থকরাই পরেন না, দলমত নির্বিশেষে এ দেশের ইসলামপ্রিয় সাধারণ মানুষ হাজার বছর ধরেই এসব সুন্নতি লেবাস ও সংস্কৃতি ধারণ করে আসছে। তাদের প্রচার-প্রপাগান্ডা এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল যে, দাঁড়ি-টুপি ও ইসলামী পোশাক পরা মানেই জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ত থাকা। এটা তাদের বোঝা এবং জানার সীমাবদ্ধতা ছাড়া কিছুই নয়। তাদের বক্তব্যে, তারা জামায়াতকে আক্রমণ করতে গিয়ে ইসলামকেই মূলত হেয়প্রতিপন্ন করছেন। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এই পার্থক্য করতে পারেনি। দাঁড়ি-টুপিওয়ালা মানুষ দেখলেই তারা জামায়াতের নেতাকর্মী ভেবে হয়রানি থেকে শুরু করে গ্রেফতার-নির্যাতন পর্যন্ত করেছে। এর ফলে ইসলামপ্রিয় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিস্তৃত হয়েছে। এতে সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বাসায় ইসলামী বইপত্র রাখতেও ভয়ে থেকেছে। এ আতঙ্ক সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো বিরাজ করছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, জামায়াতকে নিবৃত করতে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে এক সময় এ খবরও প্রকাশিত হয়েছে যে, গ্রেফতার এড়াতে জামায়াতের নেতাকর্মীরা দাঁড়ি-টুপি ও ইসলামী পোশাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকে। তবে যারা সাধারণ আলেম-উলামা ও ইসলামপ্রিয় মানুষ, শত কষ্ট ও ঝুঁকি সত্তে¡ও তারা তা করেনি। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে অতি প্রগতিশীল শ্রেণির মানুষ ইসলামপ্রিয় সাধারণ মানুষকে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী বা সমর্থক হিসেবে বিবেচনা করে গ্রেফতার ও তিরস্কার করেছে, হয়রানি করেছে। বিষয়টি যেন এমন হয়, দাঁড়ি-টুপি ও ইসলামি পোশাক কেবল জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মী ও সমর্থকরা পরে, আর কেউ পরে না।
এ কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়, জামায়াত ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না, আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখদের প্রতিনিধিত্ব করে না, ইসলামপ্রিয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা অন্যান্য দলের মতোই একটি রাজনৈতিক দল। অন্যদলগুলোর সাথে দলটির পার্থক্য হচ্ছে, সে রাজনীতিতে ইসলামকে ধর্মকে করছে। অন্যদিকে ইসলামী দল ও সংগঠনগুলো ইসলামের প্রতি আমাদের দেশের ৯২ ভাগ মুসলমানের আবেগ, অনুভূতি ধারণ করে রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারে ইসলামের সঠিক প্রচার, প্রসার, নিয়ম-নীতি তুলে ধরা থেকে শুরু করে ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করে থাকে। এ বিষয়টি সব রাজনৈতিক দল ও মহলের যেমন উপলব্ধি করতে হবে, তেমনি তা বিবেচনায় রাখতে হবে। সবচেয়ে বেশি বিবেচনায় রাখতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। কারণ, এ বাহিনীর একশ্রেণির সদস্যর মধ্যে এ প্রবণতা বিদ্যমান যে, দাঁড়ি-টুপি ও ইসলামি পোশাক পরিধান করা মানুষ মানেই জামায়াতে ইসলামীর সাথে জড়িত। আমরা দেখেছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন অনেক সদস্যও রয়েছেন যারা দাঁড়ি রাখেন, অফিস ডিউটির বাইরে ইসলামী পোশাক পরিধান করেন। এটা তারা করেন তাদের ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি থেকেই। কাজেই, সাধারণ মানুষ যদি দাঁড়ি-টুপি ও ধর্মীয় পোশাক পরিধান করে, তবে তারা জামায়াতে ইসলামীর সাথে জড়িত, এমন ধারণা পোষণ করা সমীচীন নয়। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জামায়াতে ইসলামী ও অন্য ইসলামী দল এবং সংগঠনের মধ্যকার যে মৌলিক পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন, তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বুঝতে ও উপলব্ধি করতে পারবে এবং সে অনুযায়ী আচরণ করবে। আমরা আবারও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেই, তিনি বিষয়টি যথার্থভাবে উপলব্ধি করে তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।