পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে, আবারো একটি ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাকে আগামী ৫ বছরের জন্য নবায়ন করে নিতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এজন্যই সংবিধানের দোহাই দিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তারা। জনগণকে হয়তো আস্থায় নিতে পারছেন না বলেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে তারা নারাজ। এর নাম গণতন্ত্র নয়। সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা তথা জনগণকে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হলো বর্তমান ক্ষমতাসীনরা।
গত ১৩ অক্টোবর বিএনপি, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম রবের জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। অনেক বাধা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত ন্যূনতম শর্তে এবং বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরু হয়েছে। অনেক মত ও পথের সমন্বয় ঘটেছে এই ফ্রন্টে। উদ্দেশ্য একটাই, আগে গণতন্ত্রের পথের কাঁটা সরাতে হবে। ধরুন ঢাকার গাবতলী বাসটার্মিনাল থেকে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের গাড়িগুলো ছেড়ে গেল। নবীনগর পর্যন্ত দুই বঙ্গের গাড়ির জন্যই রাস্তা এক এবং অভিন্ন। তার আগেই সাভারে গিয়ে দেখা গেল রাস্তার মধ্যে পড়ে আছে বিশাল একটি গাছ। এ অবস্থায় দুই বঙ্গের লোকেরা যদি ঝগড়া করে অথবা মনে করে, ওরা গাছ সরিয়ে ফেলুক তারপর আমরা যাব, সেই চিন্তা সঠিক নয়। বরং দুই বঙ্গের লোকেরা মিলে যদি চেষ্টা করে সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমে রাস্তা আটকে রাখা গাছটি সরাতে, তাহলে সেটা সম্ভব।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এখন সকল সংকীর্ণতা ভুলে গিয়ে পথ আটকে থাকা গাছটি সরিয়ে ফেলতেই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ২৪ অক্টোবর হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারতের পর সিলেটে জনসভার মাধ্যমে তার কার্যক্রম শুরু করেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করার প্রক্রিয়ায় বাদ পড়েছেন বি. চৌধুরীর বিকল্প ধারা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বি. চৌধুরীর দল কেন বাদ পড়ল তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা কৌতূহল। তবে, এটা ঠিক যে, বিগত দু’ বছর ধরে এ ধরনের একটি ঐক্যের ব্যাপারে অত্যন্ত তৎপর ছিলেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। আবার বাদ পড়ার পর তার ক্ষুদ্র দলটিতেও দেখা দিয়েছে বড় ভাঙন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তাই এটি বি. চৌধুরীর জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়ার মতো ঘটনা বটে।
প্রথমে দ্বিধাদ্ব›দ্ব থাকলেও কয়েক মাস আগে ড. কামাল ও বি. চৌধুরী বৃহত্তর ঐক্যের আহবানে বিএনপি ভালোভাবেই সাড়া দেয়। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গড়ে তোলার চেষ্টা বিএনপিও বেশ কিছুদিন ধরেই করে আসছিল। পরবর্তীতে অগ্রণী ভূমিকাও নিতে হয়েছে বিএনপির নেতৃবৃন্দকেই। এ লক্ষ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেছেন ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোক্তা দুই প্রবীণ নেতার সাথে। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিতে বিএনপি সর্বোচ্চ ছাড় দিতেও রাজি হয়।
কিন্তু বাঁধ সাধে বি. চৌধুরীপুত্র মাহী বি. চৌধুরীর কিছু অনাকাক্সিক্ষত ও বিতর্কিত তৎপরতা। প্রথম ও প্রধান এজেন্ডার পরিবর্তে আসন ভাগাভাগিকে গুরুত্ব দেন তিনি। বি. চৌধুরীর বাসায় বিএনপি মহাসচিব ও বি. চৌধুরীর অনানুষ্ঠানিক বৈঠক চলাকালে মাহী ঐক্যের শর্ত হিসেবে যুক্তফ্রন্টকে দেড় শ’ আসন দিতে হবে- এমন আবদার করে বসেন। যদিও রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক শক্তির বিবেচনায় যুক্তফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর দেড় শ’ আসন দাবির ন্যূনতম যৌক্তিকতা নেই। পরবর্তীতে মাহী চৌধুরী আরো দাবি তোলেন যে, বিএনপিকে যদি বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসতে হয়, তাহলে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে আসতে হবে। এ দাবির পেছনে পিতা বি. চৌধুরীরও সমর্থন ছিল। অভিজ্ঞ মহল বলছেন, মাহীর এসব দাবি-দাওয়া ছিল বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করতে দুরভিসন্ধিমূলক। অথচ, তার পিতা বি. চৌধুরী এক সময় জামায়াতের সমর্থনে গঠিত বিএনপির মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ছিলেন, এমনকি জামায়াতের সমর্থন নিয়ে তিনি দেশের রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ২২ সেপ্টেম্বর ঐক্য প্রক্রিয়ার যে সমাবেশ মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় তার আগের দিন বিএনপি মহাসচিবসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা যান বি. চৌধুরীর বাসায় তার মান ভাঙাতে। শোনা যায়, বি. চৌধুরী নাকি শর্ত দিয়েছিলেন বিএনপিকে যদি নাট্যমঞ্চের সমাবেশে অংশ নিতে হয়, তাহলে অতীতে তার সাথে দলটি যে আচরণ করেছে, তার জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চাইতে হবে। বিএনপি নেতৃবৃন্দ বি. চৌধুরীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন বলেও পত্রিকায় খবর এসেছে। তারপরও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বি. চৌধুরীর দল চূড়ান্তভাবে বাদ পড়লো। নানান দিকে খেলতে গিয়ে বি. চৌধুরী শেষ পর্যন্ত ধরা খেয়ে গেলেন বলেই মনে করছে বিশ্লেষক মহল।
সব বাধা পেরিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ২৪ অক্টোবর থেকে রাজপথে তার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। তার আগেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে ফ্রন্ট কতটা সক্ষম হবে তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন আছে। দাবি না মানলে ফ্রন্ট নির্বাচনে যাবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট করে বলা হয়নি। আন্দোলন অথবা নির্বাচন যেকোন প্রক্রিয়ায়ই হোক জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।
লেখক : সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।