Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুমিল্লায় মুদি-স্টেশনারি দোকানেও মিলছে ওষুধ

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

অনুমোদিত ফার্মেসীর বাইরে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের ওষুধ যত্রতত্র বিক্রির ফলে কুমিল্লায় হুমুকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। বিশিষ্টজনরা মনে করছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এবং ওষুধ প্রশাসন ফার্মেসীর বাইরে জীবন রক্ষাকারি ওষুধ বিক্রির ঘটনা লাগাম টেনে না ধরলে এর প্রবনতা বেড়ে চলবেই। কুমিল্লা শহরতলী ও উপজেলাগুলোতে মুদি এবং ষ্টেশনারীজ দোকানে সাধারণ ও জটিল রোগের ওষুধ হাত বাড়ালেই মিলছে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে ওইসব দোকানীদের নুন্যতম ধারণা নেই। কিন্তু দোকানের অন্যান্য পণ্যের মতো জীবন রক্ষাকারী ওষুধও বিক্রি হচ্ছে অহরহ।

চাল, ডাল, আটা, বিস্কুট, সিগারেটসহ ষ্টেশনারীজ সামগ্রী বলতে সবই থরে থরে সাজানো রয়েছে কুমিল্লা শহরতলী ও উপজেলা পর্যায়ের মুদি ও ষ্টেশনারীজ দোকানে। তার সাথে ছোট বড় প্লাষ্টিক বক্সে রয়েছে সাধারণ ও জটিল রোগের ওষুধ। দোকানদার জ্বর, কাঁশি, গ্যাষ্ট্রিক ও শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যথাসহ শিশুরোগের ওষুধও বিক্রি করছেন। প্রতিদিন শতশত মানুষ গ্রাম-গঞ্জের মুদ ষ্টেশনারীজ দোকান থেকে রোগের বর্ণনা দিয়ে ওষুধ কিনে সেবন করছেন। রোগীর বয়স, ওজনের উপর নির্ভর করে ওষুধের সেবনবিধির মাত্রা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে একজন মুদি দোকানদারের ধারণা নেই। কিন্তু মুদি দোকানদার ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন কোন ওষুধ কিভাবে সেবন করবে। মুদি দোকানদারের হাতুড়ি চিকিৎসাপনা রোগীর জীবনকে ক্ষতির মুখে নিতে পারে এমনটি কেউই ভাবছে না। এতে করে মুদি দোকানদারকে রোগের বর্ণনা দিয়ে কেনা ওষুধ সেবন করে প্রতিদিনের শতশত মানুষের বহর বেড়ে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে নিয়ে যাচ্ছে। কুমিল্লার স্বাস্থ্য বিভাগ এবং ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন অভিযান চালিয়ে এসব কর্মকান্ড সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা গেলেও এটির স্থায়ী সমাধান সচেতনতা। রোগী বা তার পরিবারের লোকজন নি¤œআয়ের বা দরিদ্র হলে সরকারি হাসপাতাল বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে পারে। কিন্তু এসব শ্রেণির লোকজনই চিকিৎসকের সরণাপন্ন না হয়ে মুদি, ষ্টেশনারীজ দোকান থেকে দোকানীকে জিজ্ঞেস করে ওষুধ কিনে নিয়ে সেবন করছে। এক্ষেত্রে রোগী হয়তো সাময়িকভাবে সুস্থতা বোধ করতে পারে কিন্তু এভাবে অনুমান নির্ভর চিকিৎসাসেবা নিয়ে ভবিষ্যতে কিডনী, হার্ট বা বড়ধরণের স্বাস্থ্যহানীর মুখে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।

কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, প্যারাসিটামল, রেনিটিডসহ এ জাতীয় কিছু ওষুধ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেবলমাত্র ফার্মেসী থেকে কেনা যাবে। আর ফার্মেসীর বাইরে সাধারণ পণ্য বিক্রির দোকানে ওষুধসহ কোন গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। আবার জন্মনিয়ন্ত্রক বিষয়ক ওষুধের কিছু আইটেম ছাড়া জীবন রক্ষাকারি কোন ওষুধ ফার্মেসীর বাইরে সাধারণ দোকানে বিক্রি করা বা মজুদ রাখা আইনত অপরাধ।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর কুমিল্লার তত্ত¡াবধায়ক হারুন-অর-রশিদ বলেন, কুমিল্লা জেলায় ড্রাগ লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা রয়েছে ৩ হাজার ৮৯২টি। তারমধ্যে এলোপ্যাথিক ৩ হাজার ৭০১টি, ইউনানী ২৬টি, আয়ুর্বেদীক ১০টি, হোমিওপ্যাথিক ৭১টি এবং বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর ডিপো রয়েছে ৮০টি। কুমিল্লা জেলায় লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। গত এক বছরে এরকম শতাধিক ফামের্সীর তালিকা তৈরি করে এগুলোর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়েছে। জেল, জরিমানা ছাড়াও বেশ কটি ফার্মেসী বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাধারণ পণ্য বিক্রির দোকানে জটিল রোগের ওষুধ রাখা যাবেনা। এধরণের দোকানে এমন ওষুধ বিক্রির বিষয়ে কুমিল্লা ওষুধ প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওষুধ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ