একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমেরিকা যাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তাঁর এই বিদেশ সফর নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভূমিকায় আনতে ব্যর্থ হয়েই তিনি কী দূরে চলে যাচ্ছেন? তবে এর জবান দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এই সফরকে পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত জানিয়ে তিনি বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দেশে ফিরে আসবেন। এ মাসে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে ইসি। সেখানে তিনি থাকতে পারবেন না। এমনকি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা বিষয়ক কমিশন বৈঠকেও থাকছেন না। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের একথা জানান। ৩১ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে।
মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি তফসিলের আগেই ফিরে আসব। সে জন্যই আমি এই সময়ে যাচ্ছি। আমার ছেলে কানাডা থেকে আমেরিকায় আসবে। আমি ঢাকা থেকে মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি। আমার ভাইও সেখানে আসবে। পরিবারের সবাই সেখানে একত্রিত হব। একমাস আগেই আমি বিমানের টিকিট কেটে রেখেছি।
তফসিল ঘোষণার আগে আগামী সপ্তাহে আরেকটি সভা করবে নির্বাচন কমিশন। এই বৈঠকে তফসিলের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সে সময়ও দেশের বাইরে থাকবেন তিনি। ফলে সভায় অংশ নিতে পারছেন না এই নির্বাচন কমিশনার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কোনো বিষয় নয়।
উল্লেখ ১৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন (ইসি) সভায় নিজের বক্তব্য পেশ করার সুযোগ না পাওয়ায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। পরে সংবাদ সম্মলনে বলেন, সভায় কথা বলতে না দেয়ায় তার বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। এর আগেও গত ৩০ আগস্ট কমিশনের ৩৫তম সভাঢ ইভিএম রকনার বিরোধিতা করে রনাট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করেছিলেন তিনি। মূলত ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়াারি বর্তমান কমিশনের পাঁচ সদস্য শপথ নেয়ার পর থেকে কমিশনের মত বিরোধ দেয়া যায়। জুলাইয়ে ইসি সচিবালয়ের ৩৩ জন কর্মকর্তার বদলি নিয়ে বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। এরপর জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, সিটি নির্বাচনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেয়া, ইভিএম ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইসির মতবিরোধ দেখা দেয়। বরিশাল, খুলনা, গাজীপুরে সিটি কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন নিয়েও তাঁর সঙ্গে সিএসির কমিশনে মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল।
এদিকে
কবিতা খানম যা বললেন ঃ এদিকে বাক স্বাধীনতা ‘কেড়ে নেওয়ার’ অভিযোগ এনে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে পরপর দুটি কমিশন সভা বর্জন করা নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন আরেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। তিনি বলেন, মাহবুব তালুকদারের কয়েকটি প্রস্তাবনা অযৌক্তিক ও একটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কবিতা খানম বলেন, নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসি অধীনে নিয়ে আসার প্রস্তাবের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার বিষয়টি ইসির এজেন্ডায় আসার মতো প্রস্তাব নয়। সুতরাং তার প্রস্তাবগুলো অযৌক্তিক। তবে এ মতবিরোধের কারণে কমিশনে মতানৈক্য তৈরি হবে না বলেও জানান তিনি।