Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন মাহবুব তালুকদারের

নির্বাচনের জন্য ৭শ’ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:২৫ এএম

বাকস্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের সভা বর্জন করেছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। গতকাল সোমবার কমিশন সভা শুরুর পাঁচ মিনিট পর আন অফিসিয়াল (ইউও) নোট দিয়ে বের হয়ে আসেন তিনি। বের হওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের সভা বর্জনের বিষয় নিশ্চিত করলেও বিস্তারিত কিছু বলেননি। এদিকে, ব্যক্তিগত সফরে আগামী শনিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন তিনি। যদিও এ বিষয়ে তার কাছ থেকে কিছু জানা যায়নি।
সকাল ১১টা ১০ মিনিটে শুরু হওয়া এ সভায় একাদশ সংসদ নির্বাচনের খরচ নির্বাহ করতে ৭০০কোটি টাকার একটি বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩৬তম প্রস্তুতি সভায় এ বাজেট অনুমোদন করা হয়। সভা শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ সংশোধন ও ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়টি বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ৫ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, নির্বাচনে নিরপেক্ষতা এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপ ইস্যুতে কমিশন সভায় লিখিত প্রস্তাব উত্থাপনের সুযোগ চেয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার। গত ৮ই অক্টোবর নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ইউও (আনঅফিসিয়াল) নোটের মাধ্যমে এসব বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব উত্থাপন করতে বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। কিন্তু তিনজন কমিশনার ওই প্রস্তাব উত্থাপন না করার জন্য সিইসিকে পাল্টা অনুরোধ করেন। এর প্রতিবাদে সভা বর্জন করেন মাহবুব তালুকদার।
সভায় উত্থাপেনর জন্য তৈরি করা মাহবুব তালুকদারের প্রস্তাবে বলা হয়, ইসির সংলাপে ২৬টি দল সেনা মোতায়েনের পক্ষে ও ৩ টি দল বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। স্বাধীনতার পর সব নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হয়েছে। তবে তা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে। ভোটে সেনা মোতায়েন হলেও তারা কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে তা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সংজ্ঞা থেকে সেনাবাহিনী বাদ দেয়ার পর তাদের কার্যপরিধি কেমন হবে তা নির্ধারিত হওয়া উচিত।
দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা রয়েছে। এ নির্বাচনটি একটি দল বর্জনও করেছে। তবে বর্তমান বিরোধী দল সরকারের পাশাপাপাশি মন্ত্রিসভায় অংশ নিয়েছে। এ অবস্থায় কীভাবে একটি দল সরকারে ও বিরোধীদলে থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে কঠিন সমস্যারও সমাধান হতে পারে।
প্রস্তাবে আরো বলা হয়, ভোটে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি নির্বাচনের পূর্বশর্ত। রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় ক্ষমতাসীন দল যে সুবিধা ভোগ করে বিরোধীদল তা ভোগ করতে পারে না। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের কমিটি ধরে ধরে মামলা দায়ের ও গায়েবি মামলা দায়েরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় তফসিল ঘোষণার আগে ইসি সম আচরণ নিশ্চিতে বিবৃতির মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
লিখিত ওই প্রস্তাবে বলা হয়, নির্বাচনকালে সার্বিকভাবে জনপ্রশসান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্ত করতে বলেছেন অনেকে। এ দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ইসির কাছে অর্পিত হলে জন আস্থা বেড়ে যাবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে তা সহায়ক হবে। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নযোগ্য মনে হলে তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের সঙ্গে তা নিয়ে ইসির সংলাপ করা উচিত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ ও অন্যান্য কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন। দুপুরে বিরতির পর দ্বিতীয় দফা বৈঠক শুরু হয়। এর আগে গত কমিশন সভাতেও ইভিএম-এর ব্যাপারে আপত্তি তুলে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার। ওই সভা থেকেও তিনি ওয়াক আউট করেছিলেন।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, এবার ভোট গ্রহণের জন্য ৪০ হাজার ১৯৯টি ভোট কেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত ৫ শতাংশ কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রস্তত করা হয়েছে। সেগুলো সিডি আকারে প্রতিটি আসনে পাঠানো হয়েছে। সচিব বলেন, এবারের নির্বাচনে দেশি-বিদেশ পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এবার বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনের আগে আটটি বিভাগীয় জেলা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটিসহ মোট ১০টি জেলায় সভা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সভা বর্জন প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, তিনি একটি বিষয় সভার এজেন্ডায় অর্ন্তভূক্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন, কিন্তু বাকি তিন কমিশনার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার সে বিষয়ে একমত হননি। এ কারণে তিনি সভা বর্জন করেছেন।
এদিকে, ব্যক্তিগত সফরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এমন সময় তিনি বিদেশ সফরে যাচ্ছেন, যখন বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় নির্বাচন কমিশনে দ্বিধা-বিভক্ত হওয়ার প্রশ্ন ওঠেছে!। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আগামী ২০ থেকে ৩০ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সভায় বক্তব্য পেশ করার সুযোগ না পাওয়ায় নিজের অপমানের কথা সংবাদ সম্মলনে তুলে ধরেন তিনি।
মাহবুব তালুকদার বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশার তার প্রস্তাব আলোচনার এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা বললেও বিরোধিতা করেছেন অন্য তিন কমিশনার। ২০১৭ সালে অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের বিষয়গুলো কমিশন সভায় আলোচনার জন্য প্রস্তাব করেছিলেন। গত ৩০ আগস্টের কমিশন সভাও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিরোধিতা করে বর্জন করেছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব। নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কমিশন সভা বর্জন করে ইতোমধ্যে আলোচিত মাহবুব তালুকদার। এর মাঝেই খবর এলো তিনি আমেরিকা যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি মো. শাহ আলম ইতোমধ্যে মাহবুব তালুকদারের বিদেশ যাওয়া চিঠি চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার, কেবিনেট সেক্রেটারি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সব দফতরে পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আগামী ২০ থেকে ৩০ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। এটা হবে তার ব্যক্তিগত সফর। এ সময় তিনি দেশীয় মুদ্রায় আর্থিক সুবিধা পাবেন। সফরে তিনি থাকবেন মেয়ে আইরিন মাহবুবের কাছে। চিঠিতে তার ফেরার সম্ভাব্য তারিখ বলা হয়েছে, ৩১ অক্টোবর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ