পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং, লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়াসহ নানা তোড়জোড়ের মধ্যেই নগরীতে ফের ঘটলো পাহাড় ধসের ঘটনা। পাহাড় ধসে প্রাণ হারিয়েছেন একই পরিবারের তিনজন। অন্যদিকে ভারী বর্ষণে পাহাড় থেকে উপড়ে পড়া গাছের চাপায় মারা গেছেন আরও একজন। গত শনিবার মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত টানা বজ্রসহ ভারী বর্ষণের সময় এ দু’টি দুর্ঘটনা ঘটে। আকবর শাহ থানার পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনীর ১ নম্বর ঝিল এলাকায় এ পাহাড় ধসের পর গতকাল (রোববার) সকালে সেখান থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন- বিবি জোহরা (৭০), মেয়ে নূরজাহান বেগম (৪৫) ও তার মেয়ে আড়াই বছর বয়সী ফয়জুন্নেছা আক্তার ওরফে নূর আয়শা। নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান ওই পরিবারের বাকি পাঁচ সদস্য।
রেলওয়ের মালিকানাধীন জমিতে গড়েওঠা ফিরোজ শাহ কলোনীর লাগোয়া ঝিল এলাকায় পাহাড় ধস হয়। পাহাড়ের বিশাল একটি অংশ বসতঘরের উপর ধসে পড়ে। তবে ধসের আশঙ্কায় বসতবাড়ি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ায় অনেকেই প্রাণে বেঁচে গেছেন। পাহাড় ধসে নিহত নূরজাহানের স্বামী নূর মোহাম্মদ জানান, গভীর রাতে ভারী বর্ষণের সময় তার বসতঘরের উপরে পাহাড় ভাঙ্গতে শুরু করে। পাহাড়ের কিছু অংশ ঘরের আশপাশে এসে পড়ে। এ অবস্থায় তিনি চার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে পাশের একটি স্কুলে রেখে আসেন। এ সময় তার স্ত্রী, শাশুড়ি ও শিশু কন্যা ঘুমিয়ে ছিলেন। চার সন্তানকে রেখে ঘরে আসার আগেই দেখেন পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়েছে ঘরসহ সবকিছু। পরে উদ্ধারকর্মীরা এসে সেখান থেকে তিনজনের লাশ বের করে আনে। তাদের বাড়ি লক্ষীপুর জেলায়। লক্ষীপুর থেকে নূর মোহাম্মদের শাশুড়ি বিবি জোহরা শুক্রবার বেড়াতে আসেন। মেয়ের বাসায় বেড়াতে এসে মেয়ে ও নাতনির সাথে প্রাণ হারান বৃদ্ধা বিবি জোহরা। আড়াই বছরের শিশুটি মায়ের কোলে ঘুমিয়েছিল। মাটি সরিয়ে উদ্ধারকর্মীরা মাকে জড়িয়ে ধরে থাকা শিশু ও মায়ের লাশ উদ্ধার করে আনে। এ সময় সেখানে নিহতের স্বজনদের কান্নায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নূর মোহাম্মদ ভিক্ষা করতেন। তার স্ত্রী বাসাবাড়িতে কাজ করতেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের উপ-সহকারি পরিচালক জসিম উদ্দিন জানান, পাহাড় ধসের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি গাড়ি ভোর রাতেই ঘটনাস্থলে যায়। টানা অভিযানে সকালে মাটি সরিয়ে সেখান থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আর কেউ নিখোঁজ না থাকায় উদ্ধার অভিযান শেষ করা হয়। তিনি বলেন, পাহাড় ধসে বেশ কয়েকটি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে বাসিন্দারা নিরাপদে সরে যাওয়ায় বড় দুর্ঘটনা থেকে তারা রক্ষা পেয়েছেন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন জানান, ফয়’স লেকের দক্ষিণে রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়টি লিজ নিয়েছে কনকর্ড গ্রুপ। সেখানে পাহাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি পরিবার আছে। গত ৬ দিন ধরে সেখানে মাইকিং করেছি, উচ্ছেদও করেছি। যে পরিবারটি দুর্ঘটনার ঘটনার শিকার হয়েছে তাদেরও সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টি কম দেখে শুক্রবার বিকেলে তারা ফিরে আসে।
রেলওয়ের ওই পাহাড়টির মতো নগরীর বেশিরভাগ পাহাড়-টিলা দখল করে বসতি তৈরি করা হয়েছে। নিম্ন আয়ের লোকজন কম ভাড়ায় সেখানে বসবাস করে। প্রতিবছর বর্ষা আসলে পাহাড় ধসে বেঘোরে মৃত্যু ঠেকাতে নানা তোড়জোড় শুরু করে প্রশাসন। এবারও গত কয়েকদিন ধরে মাইকিং করা হয়। কিছু লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়। তবে বৃষ্টি থেমে গেলে প্রশাসনের তোড়জোড় থেমে যায়। হতদরিদ্র মানুষ ঘরে রেখে যাওয়া সহায়-সম্বল রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে আসে পাহাড়ের কোলে বসতঘরের নামে তৈরি মৃত্যু ফাঁদে। পাহাড়ে অবৈধ বসতি পুরোপুরি বন্ধ না হলে পাহাড় ধসে মৃত্যুও থামানো যাবে না।
এদিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার রহমান নগরে পাহাড়ে একটি ঘরের উপর গাছ উপড়ে পড়ে। এতে ঘরের দেওয়াল ভেঙ্গে পড়ে। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হন ওই ঘরের বাসিন্দা নুরুন নবী (৪৫)। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় ও দেয়াল ধসে নিহতদের দাফনের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।