পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বিতর্কে মুদ্রা অবমূল্যায়নের বিষয়টি হচ্ছে সর্বসাম্প্রতিক যা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দৃই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে। আর এ বিষয়টিই ফিরে এসেছে বালি আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের বার্ষিক সভায়।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে গত ৬ মাসে ইউয়ানের মূল্যমান ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবিকে জোরদার করেছে যে, চীন তার প্রতিদ্ব›িদ্বতা জোরদার করতে মুদ্রা ম্যানিপুলেশনের সাথে জড়িত। তবে বেইজিং ‘ভিত্তিহীন অনুমান’ বলে সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রধানগণ গত শনিবার প্রতিযোগিতামূলক মুদ্রা অবমূল্যায়ন থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করেছিলেন।
আইএমএফ-এর ২৪ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ তাদের যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘শক্তিশালী মূলধন, সমৃদ্ধ নীতি এবং একটি স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা বিনিময় হারগুলির স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং টেকসই বৃদ্ধি ও বিনিয়োগে অবদান রাখে’। ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল কমিটি আইএমএফসি বলেছে, ‘যেখানে সম্ভব নমনীয় বিনিময় হার ঘাতশোষক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে’।
চীনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ই গ্যাং বলেন, তার দেশ বাজারে ইউয়ান বিনিময় হার গঠনের ক্ষেত্রে একটি নিষ্পত্তিমূলক ভূমিকা পালন করবে। ‘আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবমূল্যায়নে লিপ্ত হব না এবং বাণিজ্য যুদ্ধ মোকাবিলার জন্য মুদ্রা বিনিময় হারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করব না’।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানচিনি বলেন, চীনের কর্মকর্তারা তাকে অবহিত করেছেন যে, ইউয়ানের আরো অবমূল্যায়ন বেইজিংয়ের আকাঙ্খায় ছিল না’।
আরেকটি বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে উদ্বেগ
২০১৮ সাল যে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কঠিন সময়। চলতি সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারের উথাল-পাতাল অবস্থা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বিপুল পরিমাণে বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বছরে দ্বিতীয় বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ধীরগতি ও দেশটির নতুন প্রণয়ন করা কঠিন অর্থনৈতিক নীতি এ উদ্বেগকে বেশ দৃঢ় করে তুলেছে। মাত্র এক বছর আগেও বিশ্ব অর্থনীতির গতি ছিল সবার জন্যে সন্তোষজনক। ২০১৭ সালে বৃটেন ছাড়া বৃহৎ অর্থনীতির অন্য সব দেশগুলো অর্থনীতির এ চাঙ্গা ভাব উপভোগ করেছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যের হারও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ফলস্বরূপ ব্যাপক লাভবান হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পৃথিবীর অপর প্রান্তেও ছিল একই চিত্র। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় থাকা চীনও ঝুঁকি কাটিয়ে উঠেছে। এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতিতেও বইছিল সুবাতাস। কিন্তু মাত্র এক বছরেই পালটে গেছে সব।
অবাধ মুক্ত বাণিজ্যের ওপর নানা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি আরেকটি অর্থনৈতিক মন্দায় পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তারা বলছে, তাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় পণ্য বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অযৌক্তিক কর ও শুল্ক আরোপের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক মুক্ত পণ্য বাণিজ্য বড় ধরনের হুমকিতে পড়বে। পণ্য বাণিজ্য কমে গেলে তা ২০০৭ সালের মতো বিশ্ব অর্থনীতিতে আরেকটি মন্দা সৃষ্টি করবে।
২০১৮ সালে বিশ্বের অর্থনীতি উঁচু ও নিচু উভয় পথেই এগিয়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামেপর নতুন অর্থনৈতিক পলিসির কারণে এ বছর দেশটির উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ শতাংশেরও বেশি। ১৯৬৯ সালের পর বর্তমানে সব থেকে কম বেকারত্ব রয়েছে দেশটিতে। তারপরেও আইএমএফ বলছে, এ বছর যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর সব বৃহৎ অর্থনীতির দেশের উৎপাদন ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস পাবে। সত্যিকার অর্থেই বিশ্বজুড়ে উদীয়মান বাজার এখন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এটাই প্রমাণ করে দেশগুলোর অর্থনৈতিক পলিসিতে সমস্যা ছিল এবং রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৮ বার সুদের হার বাড়িয়েছে। যেহেতু পৃথিবীর অন্য কোথাও এটি হয়নি তাই ডলার শক্তিশালী হয়েছে। এটি উদীয়মান এই বাজারের জন্য এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই ডলারে ঋণ আর পরিশোধ করতে পারছে না। একই সঙ্গে আর্জেন্টিনা ও তুরস্কের মতো দেশগুলো গভীর খাদে পড়েছে। এদিকে, এ সপ্তাহে পাকিস্তান তার অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতেআইএমএফের কাছে বড় অংকের ঋণের আবেদন করেছে।
তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এক দশক আগে যখন বিশ্ব ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা দেখেছিল তার তুলনায় বর্তমানে ব্যাংকিং সিস্টেম অনেক বেশি স্থিতিশীল রয়েছে। তাই সেরকম একটি ভয়াবহ মন্দার ঝুঁকি বর্তমানে বেশ কম। তাই যদিও বাজারের প্রকৃতির কারণে বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কিন্তু তাদের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ঊর্ধ্বমুখীই ছিল। তবে, এখানেই শেষ নয়। যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে তার প্রভাব এখনো পুরোপুরি পড়তে শুরু করেনি। ভয়াবহ ধরনের ক্ষতির শিকার হওয়ার আশঙ্কা দু’পক্ষের মধ্যেই রয়েছে। ভয়ের কারণ রয়েছে আরো। সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলো বলছে যুক্তরাষ্ট্রের ধনীরা একটা হালকা মাত্রার অর্থনৈতিক মন্দার জন্যেও প্রস্তুত নয়।
মন্দা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যেও রয়েছে আতঙ্ক। জার্মানিসহ উত্তর ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে এ ভয় রয়েছে যে মন্দার কারণে হয়তো রাষ্ট্রগুলো তাদের পাওনা ফেরত দিতে পারবে না। আসন্ন এ মন্দা প্রতিহত করার পথে রাজনীতি একটি বড় বাধা। এসব সত্তে¡ও আশা করা হচ্ছে যে সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলে এখনো হয়তো আসন্ন মন্দার ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে আনা যাবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির পরও চীনের রপ্তানি বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৩৪ দশমিক এক বিলিয়ন ডলার। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা বাণিজ্যে এই উদ্বৃত্ত হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছে, বাণিজ্য যুদ্ধ চীনের রপ্তানিতে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। চীনের কাস্টমস এজেন্সি জানিয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে এবার বাণিজ্য ১৪ দশমিক ৫ ভাগ বেড়েছে। আর আগষ্টের চেয়ে বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ ভাগ। তবে চীনা পণ্যে শুল্কারোপের পর বাণিজ্যযুদ্ধে মার্কিন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিকই। ইতোমধ্যেই মার্কিন কর্মসংস্থান বাজার কমে গেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে চীনের রপ্তানি উদ্বৃত্ত ৩৪.১ বিলিয়ন ডলার, যা নতুন রেকর্ড বলে শুক্রবার জানিয়েছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, চীনা পণ্যে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার। চাকরি হারাচ্ছেন মার্কিন শ্রমিকরা। দেখা দিচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতি। এসব অজুহাতেই চীনের বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এ বছর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। এভাবে কয়েক দফায় শুল্কারোপ করেন। পাল্টা শুল্কারোপ করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ঠিকই বাধার সম্মুখিন হয়েছে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক দফার শুল্কারোপ সত্তে¡ও মার্কিন বাজারে চীনা পণ্যের রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান হয়নি। গত আগস্টে দেশটিতে চীন ৪৪ দশমিক চার বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ১৩ দশমিক দুই শতাংশ বেশি। ওই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন আমদানি করেছে ১৩ দশমিক তিন বিলিয়ন ডলারের পণ্য। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি দুই শতাংশ বেশি। অর্থাৎ দেশটির সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আগস্টে ৩১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। কোনো মাসে এটিই দেশটির সঙ্গে চীনের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য উদ্বৃত্ত। এর আগে গত জুনে সর্বোচ্চ বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ২৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে শুল্কারোপ করলে, সেক্ষেত্রে চীন আরও অন্তত ছয় হাজার কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যে শুল্কারোপ করবে বলে পরিকল্পনা করছে। এমন পরিস্থিতিতে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্তের খবর চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধকে উসকে দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র : স্ট্রেইট টাইমস, রয়টার্স ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।