বয়স ৩১ ছুঁই ছুঁই। বর্তমানে বয়স লুকোচুরির একটা চলন আছে মনে করিয়ে দিয়ে নিজেই হাসিমুখে বললেন, ‘ভাই, আমার কিন্তু সত্যি সত্যিই বয়স ৩০ পেরিয়েছে।’ বিসিবিকে দেয়া কাগজপত্র ঘেঁটে যেটি জানা গেল আদতেই তার বয়স ৩০ বছর ২৮৭ দিন। যার সাক্ষি দিচ্ছে ক্রিকইনফোও। বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে যে সময়টাতে অবসরের তালিকায় চলে যান খেলোয়াড়রা সেই সময়েই ফজলে মাদমুদ রাব্বি পেলেন জাতীয় দলের ডাক। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক দ্যুতি ছড়ানোয় বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আসন্ন হোম সিরিজের দলে ডেকেছেন নির্বাচকরা।

কোনো চমক নয়। রাব্বির ডাকটা ছিল প্রত্যাশিত। সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ১৬ ম্যাচে ৪৭.২০ গড়ে করেছেন ৭০৮ রান। ২টি সেঞ্চুরির সঙ্গে ৩টি হাফ সেঞ্চুরি। এছাড়া দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দল ও আয়ারল্যান্ড সফরে ‘এ’ দলের হয়ে পারফর্ম করেছেন। সবশেষ ৭ লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ৪ ইনিংসে রান করেছেন ১৯৫, যার তিনটিই হাফ সেঞ্চুরি। চলতি জাতীয় ক্রিকেট লিগের প্রথম রাউন্ডে ব্যাট হাতে করেছেন ১৯৫ রান। ২২ গজে তার ব্যাটিং দাপট কাছ থেকে দেখেছেন মিনহাজুল আবেদীন। তাইতো তাকে সুযোগটাকে প্রত্যাশিতই বললেন প্রধান নির্বাচকও, ‘এশিয়া কাপের প্রাথমিক স্কোয়াডেও ওকে আমরা রেখেছিলাম। আমাদের নজরে সব সময়ই ছিল। এখন পারফর্ম করলে যে কেউই দলে আসবে। ও ধারাবাহিক পারফর্ম করায় সুযোগ মিলল। যদি খেলার সুযোগ পায় সেটা কাজে লাগাতে পারলে তো অবশ্যই ভালো।’

মিডল অর্ডার শক্তিশালী করার চেষ্টায় রাব্বিকে সুযোগ দিয়েছেন নির্বাচকরা। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস সুযোগটি দারুণভাবেই কাজে লাগাবেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। জিম্বাবুয়ে সিরিজে তাকে তিনে খেলানোর পরিকল্পনা। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ওপেন করার অভিজ্ঞতাও আছে তার। দেখার বিষয় জাতীয় দলের জার্সিতে কেমন করেন এ ব্যাটসম্যান। ৮০ লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ৩০.৯৮ গড়ে ২২০০ রান করেছেন রাব্বি। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো। এবার? পোড় খাওয়া ক্যারিয়ারের কারণেই হয়ত বাস্তবতা খুব ভালো বোঝেন রাব্বি, ‘অপেক্ষায় থাকব সুযোগ পাওয়ার। সুযোগ পেলে চেষ্টা করব কাজে লাগানোর। সেঞ্চুরি-ফিফটি ভাবছি না, দলের অবদান রাখতে চাই যেভাবে হোক।’

সাকিব আল হাসান নেই বলেই মূলত তার দিকে নজর পড়েছে এবার। সাকিবের বিকল্প নেই, তবে বিভিন্ন পজিশনে ব্যাট করতে পারা আর বোলিং মিলিয়ে রাব্বি কার্যকর হতে পারেন বলে মনে করছে টিম ম্যানেজমেন্ট। দলের প্রয়োজেনে নিজেকে উজার করে দেবেন, রাব্বি জানালেন প্রত্যয়ী কণ্ঠে, ‘আমি কিন্তু মোটেও অলরাউন্ডার নই। ব্যাটিংই আমার কাছে আগে। তবে গত কিছুদিনে বোলিংটায় একটু উন্নতি হয়েছে। যদি প্রয়োজন হয়, অবশ্যই সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব। দলের দুইজন সিনিয়র ক্রিকেটার নেই বলেই হয়তো আমার সুযোগ হয়েছে। আমার চাওয়া থাকবে, তারা যখন ফিরবে, তখনও যেন আমার জায়গা থাকে দলে। সুযোগ পেলে চেষ্টা করব সেটি নিশ্চিত করার।’

জন্ম পিরোজপুরে, তবে বাবার চাকরির সুবাদে বোধ হওয়ার পর থেকেই বেড়ে ওঠা বরিশালে। ২০০৩ সালে বরিশালের হয়ে খেলা শুরু করেন রাব্বি। এর আগে বরিশালে খেলতেন টেপ টেনিস ক্রিকেট। পাড়া মহল্লায় টেপ টেনিস ক্রিকেটে সুনাম কুড়ানোর পর বড় স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। ধীরে ধীরে সেই পথে পা বাড়ান। ২০০২ সালে প্রথমে বরিশাল দ্বিতীয় বিভাগ দলে সুযোগ মেলে তার। ভালো পারফর্ম করায় পরের বছর বরিশালের হয়ে অভিষেক। এরপর ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ দলের ক্যাম্পে ডাক মেলে তার। কিন্তু বয়স বেশি হওয়ায় বাদ পড়েন। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের জন্য প্রতিভাবান খেলোয়াড় খুঁজছে মেরিনার্স ক্লাব। এক রাতের সিদ্ধান্তে চলে আসেন ঢাকা। এরপর ক্লাবের হয়ে ঢাকা লিগে খেলা শুরু। প্রায় এক যুগ ধরে খেলছেন ঢাকা লিগে। এছাড়া ‘এ’ দল, হাই পারফরম্যান্স দলে সুযোগ পেয়েছেন। কখনো ভালো করেছেন। আবার কখনো খারাপ। কিন্তু শেষ দুই-তিন মৌসুমে তার ব্যাট হাসছে নিয়মিত। সব বাধা পেরিয়ে এবার অপেক্ষা আলোকিত এক অভিষেকের।