পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কোন শিশুই অপরাধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। দারিদ্র্য এবং পারিবারিক সহিংসতা অনেক সময় শিশু-কিশোরকে বিপথগামী করে। দারিদ্র্য ও অভাবের সাথে কিশোর অপরাধের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আর অপরাধী চক্র কিশোরদের ব্যবহার করে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে। এতে করে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে ছিন্নমূল শিশু-কিশোর-কিশোরী অপরাধীর তালিকা বেড়েই চলছে। রাজধানীতে ছিনতাই ও মাদক পাচারে ৮০ শতাংশ কিশোর জড়িত।
সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয় ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকার দারিদ্র্যপীড়িত অসংখ্য মানুষ কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন শহরমুখী হচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছে নদী ভাঙন, ভূমিহীন ছিন্নমূল পরিবার, পারিবারিক বিরোধসহ বিভিন্ন কারণ। শহরে এসে ছোটখাটো কাজ পেলেও তা থেকে যা রোজগার হয়, তা দিয়ে কোনভাবে দু’মুঠো খাবার জোগাড় করাটাই তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বসবাসের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। দিনের পর দিন এভাবে মানবেতর জীবনযাপন করে চলছে। ফলে তাদের শিশু সন্তানরা বঞ্চিত হয় বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদা থেকে। অভাব অনটনে এসব শিশু-কিশোররা কেউ ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় আবার কেউ অপরাধ জগতের দিকে পা বাড়াচ্ছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সূত্র জানায়, ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সের কিশোর-কিশোরী সাড়ে ৩ কোটির বেশি। এদের মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশ শিশু বা কিশোর বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। এসব শিশু-কিশোরদের ৭০ শতাংশ দারিদ্র্যের কারণে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত। কতিপয় অপরাধীচক্র এসব শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করে নিজেরা আড়ালে থাকে। এদের হাত ধরেই পথশিশু-কিশোররা চুরি, ছিনতাই ও মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে থাকে। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে ছিন্নমূল কিশোরদের দলে ভেড়াচ্ছে অপরাধী চক্র।
মহিলাও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কিশোর-কিশোরীর দ্বারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সংখ্যা বাড়ছে। ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের মতে, বেশিরভাগ ছিন্নমূল শিশু-কিশোররা মাদকাসক্ত এবং মাদক সরবরাহের সাথে যুক্ত। এদের অনেকেই না জেনে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের ভয়ঙ্কর অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা শহরে ছিন্নমূল কিশোরদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ মাদক পাচার বা সরবরাহের সাথে জড়িত। ৩৫ শতাংশ ছিন্নমূল দরিদ্র কিশোর ছিনতাই, রাহাজানির সাথে জড়িত। ১২ শতাংশ ভিক্ষাবৃত্তি করছে। ১১ শতাংশ মানব পাচারের সাথে জড়িত। আর ২১ শতাংশ শিশু-কিশোর অন্যান্য ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, দেশে সাড়ে ৫ লাখ শিশু-কিশোর মাদক নেশায় আসক্ত। এদের মধ্যে ৩০ শতাংশ নিজেদের নেশার অর্থ যোগানের জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে থাকে। বর্তমানে নেশার টাকা জোগাড়ে শুধু ছিন্নমূলক-শিশু-কিশোররাই নয়, অনেক বিত্তশালী পরিবারের কিশোর-কিশোরীরাও বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।
শিশু অধিকার ফোরাম জানায়, গত ৬ মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক শিশু-কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের বয়স ১০ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। নিম্ন আদালতে গত বছর মাদক সংক্রান্ত বিচারাধীন ৪২৮টি মামলার মধ্যে ১৪০টি কিশোর মাদক ব্যবহারী ও পাচারকারীর মামলা রয়েছে।
রাজধানীর বস্তি, বিভিন্ন পার্ক, বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, রেললাইন এলাকা, লঞ্চ টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রকাশ্যে নেশা করতে পথশিশু-কিশোরদের। সন্ধ্যার পর অলি-গলিতে মাদকের দুর্গন্ধে জনজীবন অতীষ্ঠ হয়ে ওঠছে এমন অভিযোগ বহুদিনের। কেউ অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছে না এসব কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব-পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে এদের তৎপরতা কিছুটা কমেছে।
একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কিশোর অপরাধ দেশের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু ছিন্নমূল কিশোর-কিশোরী নয়, বিত্তবান পরিবারের সন্তানরাও জড়িয়ে পড়ছে মাদক সেবনে। গত গয়েক বছর এর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পারিবারিক ভাঙন, কোলাহলপূর্ণ পরিবার, প্রকৃত অপরাধের প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি কম, সামাজিক অপরাধকে রাজনৈতিক রূপ দেয়া।
পারিবার ভেঙে যাওয়ায় বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোর আদর যত্ম পায় না। তারা পারিবারিক শিক্ষা বঞ্চিত হওয়ায় ভবিষ্যৎ থাকে অনিশ্চিত। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।