Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পারমিট দেয়ার পর নিষেধাজ্ঞা ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের জেলেরা

কয়রা (খুলনা) থেকে মোস্তফা শফিক | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম


ইলিশ প্রজনন মওসুমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় হঠাৎ প্রজ্ঞাপন জারি করায় মৎস্যজীবীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করায় সুন্দরবনে আটকা পড়েছেন হাজার হাজার জেলে। পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই প্রজ্ঞাপন জারি করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জাল ও নৌকা জব্দ এবং জেলেদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অথচ বন বিভাগ থেকে পারমিট নিয়ে তারা মাছ ধরতে যান। এ পরিস্থিতির জন্য মৎস্য মন্ত্রণালয়কে দায়ী করছে বন বিভাগ। তবে ইলিশ প্রজনন মওসুমে সুন্দরবনের কাঁকড়ার পারমিটও দিচ্ছেনা। যে কারনে হাজার হাজার জেলে পড়েছে বিপাকে।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত সাগর ও নদ-নদীতে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সুন্দরবনের অভ্যন্তরের নদ-নদীতে সাধারণ মৎস্য আহরণও নিষিদ্ধ করেছে মন্ত্রণালয়। ১৯ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও সেটি বন বিভাগের দফতরে পৌঁছেছে ৫ অক্টোবর। এর আগেই সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মৎস্য আহরণের জন্য জেলেদের পারমিট দিয়েছে বন বিভাগ। পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেও জেলেরা পড়েছেন বিপাকে। আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দিচ্ছেন। জাল ও নৌকা জব্দ করা হচ্ছে। এতে সর্বস্ব হারিয়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন জেলেরা। তবে মৎস্য ব্যাবসায়ী আবু সাঈদ ও অনেক জেলেদের আক্ষেপ ইলিশ প্রজনন মওসুম হলেও সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা বন্ধ কেন তা নিয়ে তারা রয়েছে সংশয়।

কয়রা উপজেলার ৫নং কয়রা গ্রামের জেলে মোস্তাক গাজী জানায়,কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন থেকে ৫ অক্টোবর পারমিট নিয়েছেন তিনি। এর পরদিন সুন্দরবনের জোড়শিং এলাকায় পৌঁছলে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে মাছ ধরতে নিষেধ করেন। তার জাল ও নৌকা জব্দ করতে চাইলে অনেক অনুনয় বিনয় করে সেগুলো তিনি ফিরে পেয়েছেন। একই ধরনের অভিযোগ করেছেন সুন্দরবনের মাছ ধরার অনেক জেলে। তাদের দাবি পারমিট দেয়ার দু-একদিন আগে তাদের জানানো হলে তারা বড় ধরনের এ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতেন। দক্ষিণ বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান জি এম কবি শামছুর রহমান বলেন, জেলেদের পাশ দেওয়ার আগে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জনানো হলে তাদের এত বড় ক্ষতি হত না। জেলেরা সবই দরিদ্র যে কারনে তাদের বেশি সমস্যা।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশিরুল-আল-মামুন বলেন, মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশে তারা উভয় সংকটে পড়েছেন। এক দিকে জেলেদের পারমিট দেয়া হয়েছে, অন্য দিকে প্রশাসন অভিযানও চালাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন জেলেরা। প্রশাসন সহ বন বিভাগের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছি জেলেরা যেন হয়রানির শিকার না হয়। জেলেদের বুঝিয়ে উপকূলে পাঠানোরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেসব জেলে ইলিশ ধরে না তাদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে মাছ না ধরার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। চলতি গোনে সুন্দরবনের শোরনখোলা, চাদপাই, নলিয়ান ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় ১৭ টি ষ্টেশনের হাজার হাজার জেলেরা মৎস্য আহরণ করার জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে। সংশ্লিষ্ট স্ব-স্ব স্টেশন থেকে পারমিট নিয়ে মাছ ধরার জন্য তারা সুন্দরবনেও প্রবেশ করেছেন। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে এক দিকে সুন্দরবনে প্রবেশ অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা তারা উভয় সংকটে পড়েছে।

অন্যদিকে ইলিশ মৌসুমে সুন্দরবন ছাড়া অন্য জেলেরা ক্ষতিপুরুন পেলেও সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলেরা এ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের দাবি, সরকার হয় ক্ষতিপূরণ দিক, অন্যথায় তাদের মাছ ধরার সুযোগ দেয়া হোক এমনটাই দাবি ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের। মৎস্য ও প্রানিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, শুধু ইলিশ মাছ ধরার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলেরা অন্য মাছ ধরতে পারবে। তবে কেন সুন্দরবনে মাছ ধরতে নিষেধ করা হয়েছে সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মুহসীনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী জানান, সচিব ব্যস্ত আছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ