পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উপকূলের দিকে উড়ে আসছে হ্যারিকেনের তীব্রতাসম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’। বঙ্গোপসাগরে ক্রমেই শক্তি সঞ্চয় করে গতকাল বুধবার জোরদার হয় ঘূর্ণিঝড়টি। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারেরও বেশী। তিতলির গতিমুখ ভারতের উড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূল বরাবর। তবে হঠাৎ দিকবদল কিংবা উপকূল অতিক্রম করার সময়ে বিশাল আকারের এই ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ খুলনা হয়ে গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর অঞ্চলের ওপর দিয়েও প্রবাহিত হওয়ার ক্ষীণ শঙ্কা আবহাওয়াবিদদের। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব পড়তে পারে মধ্যাঞ্চলে ঢাকা পর্যন্ত। আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল নাগাদ গোপালপুরের নিকট দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূলে ছোবল হানতে পারে। তবে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় অথবা তার আগে যদি কম-বেশী দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে ভারত ও বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। উর্দু শব্দ ‘তিতলি’র অর্থ ‘প্রজাপতি’। কোটি কোটি মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও কৌতূহল তিতলি কোথায় উড়ে এসে আছড়ে পড়বে।
প্রবল ঘূণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর খুবই উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে। আবহাওয়া বিভাগের সতর্ক চোখ এখন তিতলির ওপর। সর্বশেষ গতকাল রাতে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৮০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৫০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭২০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৭৪০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিমি, যা দমকা ও ঝড়ের আকারে ১৪০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কাছাকাছি সমুদ্র বিক্ষুব্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরও জোরালো হয়ে উপকূলের দিকে এগিয়ে এলে সঙ্কেত বাড়তে পারে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, সাইক্লোনের শক্তি ও মতিগতি পর্যবেক্ষণ করে সঙ্কেত বাড়ানো হতে পারে।
তিতলির কারণে হঠাৎ বদলে গেছে আবহাওয়া। রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ প্রায় সারাদেশে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। থেমে থেমে হালকা বৃষ্টির সাথে কোথাও কোথাও বইছে হিমেল হাওয়া। প্রত্যন্ত চর, উপকূল, দ্বীপাঞ্চলবাসীর মাঝে ভর করেছে অজানা ডর-ভয়। দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রী ও মালামাল পরিবহন বন্ধ থাকায় নৌপথে চলাচলকারী হাজারো মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছে অগণিত যাত্রী। তিতলীর প্রভাবে আবহাওয়া বিরূপ থাকায় সারাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে নৌ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। এ সিদ্ধান্ত বিভিন্ন নৌ টার্মিনালে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙরে আমদানিকৃত মালামাল লাইটারিং খালাস কাজে বিরাজ করছে অচলদশা। বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, দমকা ও ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টিতে ভিজে পণ্যসামগ্রী নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় বহির্নোঙরে বড় বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে খাদ্যশস্য জাতীয় খোলা সাধারণ পণ্য লাইটারিং খালাস কাজ বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারক, ব্যবসায়ীরা। তবে বন্দরের জেটি-বার্থে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। সঙ্কেত বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথেই প্রধান এ সমুদ্র বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম যথারীতি বন্ধ রাখা এবং জেটি-বার্থসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। সামুদ্রিক মাছ শিকার বন্ধ থাকায় সারি সারি ট্রলার নৌযান অলস বসে আছে ফিশারি ঘাটগুলোতে। তবে সমুদ্রে গিয়ে অনেক ট্রলার নৌযান এখনও ফেরেনি।
ঘূর্ণিঝড়ের বিরূপ প্রভাবে বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামে দ্বিতীয় দিনের মতো ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি পণ্যসামগ্রী ডেলিভারী পরিবহনে ভাটা পড়ে। সকালে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে ও জোয়ারে ফের হাঁটু পানিতে প্লাবিত হয় আগ্রাবাদ, হালিশহর, চকবাজার, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, মোহরাসহ বিভিন্ন এলাকা। পরিবহন সঙ্কটে দুর্ভোগে পড়েন কর্মমুখী অগণিত মানুষজন। দীর্ঘ যানজটে অচল হয়ে পড়ে নগরী। বৈরী আবহাওয়ার অজুহাতে সবজিসহ বিভিন্ন নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে।
পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ গতকাল আরো ঘনীভূত এবং জোরালো রূপ নেয়। সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রামসহ উপক‚লীয় অঞ্চলে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এবং গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
অন্যদিকে হ্যারিকেনের তীব্রতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় তিতলির বর্ধিত প্রভাব ইতোমধ্যে ভারতের অন্ধ্র, উড়িষ্যাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পড়ড়ে শুরু করে এবং সেসব অঞ্চলে রেড অ্যালার্ট জারির পাশাপাশি লাখো ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানের দিকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সেখানে অতিবৃষ্টিতে বন্যারও আশঙ্কা রয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিতলি আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে ভারতের অন্ধ্র-উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশের বিরাট অংশে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে আকাশজুড়ে ঘনঘোর মেঘমালা সৃষ্টি হয়েছে। তিতলি আবহাওয়ায় পরিবর্তন আনতে পারে।
গত রোববার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগরে সৃষ্ট একটি লঘুচাপ থেকে পর্যায়ক্রমে নিম্নচাপ, গত মঙ্গলবার ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ে (তিতলি) পরিণত হয়। এর নামকরণ করা হয় ‘তিতলি’। মানে ‘প্রজাপতি’। নামটি প্রস্তাব করে পাকিস্তান। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের নতুন নাম ঠিক করা হয় আগেই। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর উপসাগর তীরের ৮টি দেশের প্যানেলে বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করা হয়। সেসব নাম থেকে ইতোপূর্বে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ভারত, মিয়ানমার ও অন্যান্য দেশের দেয়া নামে রাখা হয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম-পরিচয়। দুর্যোগের সুনির্দিষ্ট পরিচিতি, ত্রাণ ও পুনর্বাসনে সহায়ক হিসেবেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখার এই উদ্যোগ। বর্তমানে আরব সাগরে সৃষ্ট আরেকটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘লুবান’।
ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এর পরের ৫ দিনে বৃষ্টির প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে খেপুপাড়ায় ৫৯ মিলিমিটার। এছাড়া গোপালগঞ্জে ৯, চট্টগ্রামে ১৩, হাতিয়ায় ৩১, কুমিল্লায় ১০, কক্সবাজারে ২০, সিলেটে ৯, মংলায় ১২, বরিশালে ৫ মিমিসহ দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাত হয়েছে হালকা ধরনের।
২ নম্বর নৌ হুশিয়ারী সঙ্কেত
আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরসমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এসব এলাকার নদী বন্দরসমূহকে ২ নম্বর নৌ হুশিয়ারী সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিমি বেগে বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরসমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।