পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি ইস্যুতে বিতর্ক চলছে। সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে চলছে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের’ অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামার প্রস্তুতি। তিনি জোর দিয়েই ঘোষণা দিয়েছেন, এই দাবীর আন্দোলনে ব্যর্থ হবেন না। ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারকরা এতোদিন বলে আসছেন ‘নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রিসভা হবে ছোট’। কিন্তু এখন ‘সেই সুর’ অনেকটা বদলে গেছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে সব মহল থেকে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠনের দাবি বহাল থাকলেও; এখন বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি চলছে। গতকালের মন্ত্রিসভার বৈঠকে অধিকাংশ মন্ত্রীই এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। বেশির ভাগ মন্ত্রীই বতর্মান মন্ত্রিসভা বহাল রেখেই জাতীয় নির্বাচন চাচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানা গেছে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা জানান, সংবিধান থেকে ২০১১ সালে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি’ বাতিল বিল পাসের সময় পঞ্চদশ সংশোধনী এমন ভাবে করা হয়েছে যে, নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি কেমন হবে সে ধরনের কোনো দিকনির্দেশনা বর্তমান সংবিধানে রাখা হয়নি। জাতীয় নির্বাচনের সময় সরকারের ধরন কেমন হবে এমন বিধানও নেই। সবকিছু রাখা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাধীন। জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সংবিধানে না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ ছোট আকারে করতে পারেন। এই বিষয়টি একেবারেই নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর। প্রায় অভিন্ন কথা বলেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের জনগণ ‘ভোটের অধিকার’ প্রত্যাশা করে। তিনি ২০১৪ সালে যে প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন সেটাই তিনি এবারও করতে পারেন।
২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। ওই সংশোধনী অনুযায়ী বর্তমানে নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনোকিছুই অযোগ্য করিবে না।’ আবার সংবিধানের ৫৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে; তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলী-সাপেক্ষে তাহাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন।’
বর্তমান সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের এখতিয়ার এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর ন্যাস্ত থাকায় মন্ত্রীরা প্রত্যাশা করছেন সংসদ বহাল এবং বর্তমান মন্ত্রিসভা রেখেই প্রধানমন্ত্রী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবেন। ইতোমধ্যেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব সরকারের; নির্বাচন কমিশনের নয়। আমরা কেবল নির্বাচনের আয়োজন করতে পারি’।
বর্তমান মন্ত্রিসভা বহাল রেখেই যে সরকার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারকদের ধারাবাহিক বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ৭ অক্টোবর ক্ষমতাসীন দলের মুখপত্র ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাজধানীর সাপ্তাহব্যাপি গণসংযোগের সময় উত্তরায় বলেছেন, ‘নিবার্চনের আগে অন্তবর্তী কিংবা অন্য কোন সরকার হবে না, এই (বর্তমান) সরকার থাকবে। তবে সরকার রুটিন কাজ করবে। জানুয়ারী মাসের ২৭ তারিখের আগে যে কোন দিন নিবার্চনের তারিখ ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন’। এর আগে মহিউদ্দিন আহমেদ স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত জাতীয় জাদুঘরে এক স্মরণসভায় বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল বর্তমান সরকারের অধীনেই ২০১৯ সালের নির্বাচনে অংশ নেবে। এর বাইরে কিছু চিন্তা করার সুযোগ নেই। সে সময় সরকার নির্বাচন কমিশনকে চাহিদা মোতাবেক সব ধরণের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে’। গতকাল সচিবালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত জোয়াত্ত তাবাজারা ডি অরিভেরা জুনিয়রের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে যথা-সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। তবে এর আকার নির্ধারণ করার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনিই এটা নির্ধারণ করবেন। আর এটা চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে অথবা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ পুনর্গঠিত হবে। নির্বাচনকালীন সরকারে প্রধানমন্ত্রী ৩০ জনের মতো সদস্য নিয়ে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠিত করতে পারেন’। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ অক্টোবর গণভবনে এক সভায় আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছেন, নির্বাচনের নিয়ম হচ্ছে যে, ৫ বছরের জন্য সরকার নির্বাচিত হয়। ওই ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার তিন মাস আগে থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা মানে তখন যে সরকার হবে; সেই সরকার শুধু রটিন ওয়ার্ক ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে কাজ করতে পারে না। এটাই হচ্ছে নির্বাচনকালীন সময়ের দায়িত্ব’। এর আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কিভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। সেই সরকার সর্বোতভাবে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা দিয়ে যাবে।’
এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং নির্বাচনী বিধিমালায় বলা হয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বদলি, পদায়নসহ কিছু কিছু কাজে সরকারকে কমিশনের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন, নির্বাচনের সময় সরকারি প্রটোকল গ্রহণ, ডাক-বাংলোসহ সরকারি স্থাপনার ব্যবহার বা এ জাতীয় কিছু কর্মকান্ডে বিধিনিষেধ আরোপ থাকবে।
পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সংবিধানের বিধান অনুসারে বিদ্যমান সরকার ক্ষমতায় রেখেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে গেলেও সরকারের ওপর তার প্রভাব পড়বে না। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকবেন। অর্থাৎ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে স্বপদে বহাল রেখেই নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি তার সরকারের মন্ত্রিসভার ক্ষেত্রেও সংবিধানের একই বিধান! সিইসি সেই ইংগিতও দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার বলতে কিছু নেই। নির্বাচনকালীন সময় যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সেই সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার। প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে বর্তমান মন্ত্রিসভা ছোট আকারে করতে পারেন। এই বিষয়টি একেবারেই নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। আর এই সরকার নির্বাচন পরিচালনা করতে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবেন। প্রখ্যাত আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কোনও বিধান সংবিধানে রাখা হয়নি। ক্ষমতাসীন সরকারই নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করবে। এক্ষেত্রে সরকার চাইলে তার কোন কোন কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। তবে বিরত যে থাকতেই হবে এমন কোনও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রথম কথা হলো আমাদের সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কিছু বলা নেই। বিগত সময়ে নির্বাচন পরিচালনার আগে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বসে আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এবারের নির্বাচনের আগে এ রকম সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। তবে এই নির্বাচনটা যেহেতু দেশের জনগণের জন্য তাই নির্বাচন কীভাবে করা হবে সে বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের বসা উচিত। আগামী নির্বাচনের সময় কে বা কারা সরকার পরিচালনা করবে, এমন সিদ্ধান্তের জন্য সংলাপ জরুরি, সব দলের সঙ্গে বসা জরুরি। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গতকাল একটি টিভি টকশোতে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তার কাছে জাতি অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। তিনি ২০১৪ সালে সব দলের অংশগ্রহণে যে উদ্যোগ নিয়ে বিএনপিকে প্রস্তাবনা দেন সেটা এবারও দিতে পারেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।