চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
সম্প্রতি ইউরোপীয় কিছু গবেষক রানী এলিজাবেথকে হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) এর ৪৩ তম বংশধর হওয়ার দাবী করে যে নিবন্ধ তৈরি করেছেন তা নিতান্ত ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর, আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিগত ১০ই এপ্রিল ২০১৮ইং সনে দৈনিক ইনকিলাবের মাধ্যমে আমরা এ হীন দাবি সম্পর্কে জানতে পারি। এ জন্য দৈনিক ইনকিলাব কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। আমরা ইউরোপীয় গবষেকদের নিবন্ধটির একটি সমালোচনা তৈরি করার মাধ্যমে এ বিভ্রান্তির জবাব দিতে চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিখ্যাত ও পাঠকনন্দিত দৈনিক ইনকিলাবে এটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে ইউরোপের গবেষকদের ভুল ভাঙার চেষ্টা করছি। পাঠকরাও বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি পাবেন বলে আশা রাখি।
মুল আলোচনায় যাওয়ার পুর্বে ইসলামের কতিপয় স্বীকৃত নীতিমালা সম্পর্কে সকলেরই অবগত হওয়া প্রয়োজন:
(১) চার মাযহাবের চার ইমাম সহ বিগত ১৪শত বৎসরে জন্ম নেয়া সকল মোহাদ্দিস, মোফাসসির, মোজতাহিদ, ঐতিহাসিক, ফকীহ সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে রাসূলে আকরাম (সঃ) এর ঔরশজাত চারজন কন্যার গর্ভজাত ৮ জন সন্তান তাদের পিতার ঔরশে জন্ম নিলেও তাদের বংশধারা রাসূলে আকরাম (সঃ) হতে প্রবাহিত হবে এবং তারা রাসূলে আকরাম (সঃ) এর আওলাদ হিসাবে আখ্যায়িত হবেন। দ্রষ্টব্য ঃ ফাতাওয়ায়ে শামী ৬নং খন্ড ৬৮৫নং পৃষ্ঠা, আল মাওছূআতুল ফিক্হিয়্যাহ আল ক‚য়েতিয়্যাহ সি. ডি. ভার্সন ২য় খন্ড ৩৫১নং পৃষ্ঠা, আল হাবী লিল্ ফাতাওয়া ২য় খন্ড ৩৮নং পৃষ্ঠা, আল ফাতাওয়াল হাদীসিয়্যাহ লি ইবনে হাজর হাইছামী আশ শাফেঈ (রাহ) ১ম খন্ড ৩৭৫নং পৃষ্ঠা, ফাইুজুল কাদির লিল মানাবী (সি ডি ভার্সন) ৫ম খন্ড ২২নং পৃষ্ঠা।
(২) রাসূলে আকরাম (সঃ) এর ঔরশজাত চারজন কন্যার গর্ভজাত ৮ জন সন্তান ছিলেন। এদের তিনজন কন্যা সন্তান এবং পাঁচজন পুত্র সন্তান। পুত্র সন্তানগণ হলেন, (১) হযরত হাছান (রাঃ) (২) হযরত হোছাইন (রাঃ) (৩) হযরত মোহাচ্ছিন (রাঃ) তিনি শৈশবেই ইন্তেকাল করেছিলেন। (৪) আব্দুল্লাহ বিন ওছমান (রাঃ)। (৫) হযরত আলী বিন আবুল আছ (রাঃ)। কন্যা সন্তানগণ হলেন, (১) যয়নাব বিনতে ফাতিমা (রাঃ) (২) উম্মে কুলছুম বিনতে ফাতিমা (রাঃ) (৩) উমামা বিনতে যয়নাব (রাঃ)। এদের ব্যাপারে ইসলামের স্বীকৃত ফায়সালা এই যে এই ৮ জনের মধ্যে যারা পুত্র সন্তান তারা নিজেরা যেমন আওলাদে রাসূল (সঃ) হিসাবে আখ্যায়িত হবেন তেমনি তাদের ঔরশজাত সন্তানগণও আওলাদে রাসূল (সঃ) হিসাবে আখ্যায়িত হবেন চাই নারী হউক বা পুরুষ হউক। অবশিষ্ট তিনজন কন্যা সহ সকল নারীর ক্ষেত্রে ইসলামের স্বীকৃত ফায়সালা এই যে এদের গর্ভজাত সন্তানগণের বংশধারা সর্বদাই তাদের স্বামী বা সন্তানগণের পিতা হতে প্রবাহিত হবে, চাই তিনি আওলাদে রাসূল হন বা সাধারণ কোন নারী হন। এরা কেয়ামত পর্যন্ত এই নীতিমালার আওতাধীন থাকবেন। ফাতাওয়ায়ে শামী ৬নং খন্ড ৬৮৫নং পৃষ্ঠা, ফাইুজুল কাদির লিল মানাবী (সি ডি ভার্সন) ৫ম খন্ড ২২নং পৃষ্ঠা, তাফসীরুল লুবাব লি ইবনে আদেল ৭ম খন্ড ৩৬নং পৃষ্ঠা, আছ ছওয়াইকিল মুহরিকাহ ২য় খন্ড ৪৬১নং পৃষ্ঠা, বাইহাকি শরীফ মা’আ আল জাওহারুন নকী ৭ম খন্ড ৩৬নং পৃষ্ঠা, আত্ তালখীছুল হাবীর ৪র্থ খন্ড ২৪৯নং পৃষ্ঠা, ফাইযুল কাদীর লিল মানাবী ২নং খন্ড ২৮২নং পৃষ্ঠা, আছনাল মোতালিব ১৪নং খন্ড ১৫৭নং পৃষ্ঠা, আল হাবীল কাবীর ৭ম খন্ড ১৩২২নং পৃষ্ঠা।
(৩) বংশধারা বা শাজারাহ বা বংশ তালিকা সর্বদাই পিতা পুত্রের নিরবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতায় তৈরি হতে হবে। কেননা পিতার বংশধারা তার পুত্র হতে প্রবাহিত হয়। কন্যা হতে নয়। আল্লামা ইবনে আবেদীন আশ শামী ফাতাওয়ায়ে শামী ৬নং খন্ড ৬৮৫নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, বংশধারায় সন্তানগণ পিতার অনুগামি হয় মায়ের নয়। বিষয়টির সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে কোন বংশধারা বা শাজারাহ বা বংশ তালিকার সর্বোচ্চ ব্যক্তি হতে সর্বনিম্ন ব্যক্তি পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে যতগুলো ব্যক্তির নাম উল্লেখ থাকবে তাদের প্রত্যেকেই তার অব্যবহিত উপরে বিদ্যমান ব্যক্তির পুত্র এবং তার অব্যবহিত নিচে বিদ্যমান ব্যক্তির পিতা হতে হবে। এর মধ্য হতে একজন ব্যক্তিও যদি ভুয়া বা বহিরাগত সাব্যস্ত হন তাহলে সেই বংশধারা বা শাজারাহ বা বংশতালিকাটি বাতিল ও ভুয়া বলে গণ্য হবে।
(৪) আমাদের নবীর বংশধর সাব্যস্ত হতে হলে আমাদের নবী (সঃ) এর আনিত দ্বীনের বিধান মোতাবিক সাব্যস্ত হতে হবে। অতএব এখান থেকে ওখান থেকে কতগুলো নাম ধারাবাহিক ভাবে সাজিয়ে নিজেকে ৪৩ নাম্বারে রেখে হজরত মোহাম্মাদ (সঃ) এর বংশধর দাবী করার কোনই সুযোগ নেই। কেননা ইসলাম একটি স্পষ্ট ও স্বচ্ছ জীবন ব্যবস্থার নাম। এর মাঝে গোজামিলের কোনই সুযোগ নেই। অতএব বর্ণিত চারটি স্বীকৃত নীতিমালা গভীর ভাবে অনুধাবন করে এবার রানী এলিজাবেথের বংশধারাটি নিয়ে আমাদের নিম্নোক্ত বক্তব্যগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।
নয় ইউরোপিয়ান গবেষকদের মতে রানী এলিজাবেথের বংশধারা: ইউরোপিয়ান গবেষকদের মতে মহামতি রানী এলিজাবেথের মূল বংশধারাটি নিম্নরূপ, (১) হজরত মোহাম্মাদ মোস্তফা (সঃ) এর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) এর সন্তান (২) হাছান ইবনে আলী. হাছান ইবনে হাছান ইবনে আলী, যোহরা বিনতে হোসেনের পুত্র নউম আল লখমী, তার পুত্র তায়ফ ইবনে নাঈম, ইত্তফ ইবনে নাঈমের পুত্র আসলান ইবনে আওয়ামী, আমির ইবনে আসলানের পুত্র ইশতিয়াক ইবনে আমর, তার পুত্র আব্বাস ইবনে আমর, তার পুত্র কোরেশ ইবনে আব্বাস ইবনে আবুল কাসিম মোহাম্মাদ ইবনে আব্বাস। তিনি সেভিল বা ইসবিলিয়ার রাজা ছিলেন।
বর্ণিত বংশধারাটি নিয়ে আলোচনায় যাওয়ার পুর্বে আমাদের নিম্মোক্ত বক্তব্যগুলোর প্রতি লক্ষ করুন
(ক) ইউরোপীয় গবেষক মহোদয় রচিত মহামতি রানী এলিজাবেথের বংশধারাটির ৫ম স্তর হতে শেষ পর্যন্ত বর্ণিত নাম সমুহের বানানে যথেষ্ট ভুল রয়েছে, যা ইউরোপীয় গবেষক মহোদয়গনের সাবজেক্টে অদক্ষতার প্রমান বহণ করে। নিম্নে এমন কতিপয় অসঙ্গতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো।
(১) বংশধারাটির ৫ম স্তরে লিখা হয়েছে, যোহরা বিনতে হোসেনের পুত্র “নউম আল লখমী” নামটি সঠিক নয় বরং নামটি হবে “নুআঈম আল্ লখ্মী” আদ-দাওউল লামি ৩য় খন্ড ৩৯৮নং পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে, নুআইম শব্দটি তাছগীর অর্থাৎ প্রথম অক্ষরে পেশ এবং ২য় অক্ষর যবর এবং ৩য় অক্ষর সাকিন উচ্চারণ করতে হবে। ইতাফ শব্দটির সঠিক উচ্চারণের ব্যাপারে আদদাওউল লামে নামক গ্রন্থের (সি ডি ভার্সন) ১ম খন্ড ৮৯নং পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে, ইতাফ শব্দটির আইন অক্ষরে যের এবং ত্বয়া অক্ষরটি যবর বিশিষ্ট এবং তাশদীদ বিহীন উচ্চারণ করা হবে।
(২) “নুআঈম আল লখমী” এর পুত্র হিসাবে দেখানো হয়েছে “তায়ফ ইবনে নাঈম” নামটি সঠিক নয় বরং নামটি হবে “ইতাফ ইবনে নুআঈম” । (৩) ইতাফ ইবনে নুআঈম এর পুত্র হিসাবে দেখানো হয়েছে “আসলান ইবনে আওয়ামী” নামটি সঠিক নয় বরং নামটি হবে “আসলাম ইবনে আমর”। (৪) আমির ইবনে আসলানের পুত্র ইশতিয়াক ইবনে আমর। নামটি সঠিক নয় বরং নামটি হবে “আসলাম ইবনে আমরের পুত্র” আমির ইবনে আসলাম নয়। তবে এই ইশতিয়াক ভুয়া ও বহিরাগত ব্যক্তি, যার সাথে বংশধারাটির পুর্বাপর কারো কোন সম্পর্ক নেই। (৫) আব্বাস ইবনে আমর, নামটি সঠিক নয় বরং নামটি হবে, আব্বাদ ইবনে আমর। (৬) কোরেশ ইবনে আব্বাস, নামটি সঠিক নয় বরং নামটি হবে, কোরাইশ ইবনে আব্বাদ, আব্বাস নয়। বংশধারাটিতে এমন আরো অনেক ত্রুটি বা অসঙ্গতি রয়েছে, যা গবেষক মহোদয়ের অদক্ষতার জ্বলন্ত প্রমান।
(খ) ইউরোপীয় গবেষক মহোদয়ের লিখা বংশধারার ৫ম স্তর তথা বংশধারাটির ৫ম ব্যক্তি হতে আবুল কাসিম মোহাম্মাদ পর্যন্ত বংশধারাটির বিশুদ্ধ রূপটি নি¤œরূপ হবে,
নুআঈম আল্ লাখ্মী, পুত্র ইতাফ, পুত্র ওমর, পুত্র আসলাম, পুত্র আমর বা ওমর, পুত্র আব্বাদ, পুত্র কোরাইশ, পুত্র ইছমাঈল, পুত্র মোহাম্মাদ, পুত্র আবুল ওয়ালীদ ইছমাঈল, পুত্র আবুল কাছিম মোহাম্মাদ আল মো’তামিদ আলাল্লাহ, পুত্র আব্বাদ আল মো’তাজিদ বিল্লাহ।
ইউরোপীয় গবেষকদের লেখা বংশধারাটির ব্যপারে আমাদের মূল বক্তব্য: (১) ইউরোপীয় গবেষকদের লেখা বংশধারাটিকে আমরা দুই ভাগে বিভক্ত করেছি। (ক) ১ম স্তর হতে ৪র্থ স্তর পর্যন্ত (খ) ৫ম স্তর হতে আবুল কাছিম মোহাম্মাদ আল মো’তামিদ পর্যন্ত, যিনি সেভিলের রাজা বা শাসক ছিলেন। ১ম স্তর হতে ৪র্থ স্তর পর্যন্ত বর্ণিত ব্যক্তিগণের বাস্তব ধারাবাহিকতাটি নিম্নরূপ। (১) হজরত মোহাম্মাদ (সঃ) (২) ফাতিমা বিনতে মোহাম্মাদ (সঃ) (৩) হাছান ইবনে আলী. (৪) হাছান ইবনে হাছান বা হাছান মোছান্না ইবনে হাছান। এ পর্যন্ত শাজারাটি সঠিক ও নির্ভেজাল। কিন্তু শাজারাটির ৫ ও ৬ নং স্তরে দেখানো হয়েছে “যোহরা বিনতে হোসেনের পুত্র নউম আল লখমী” তথা সংক্ষেপে হোসেনের কন্যা যোহরার পুত্র নউম আল লখমী নামক একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে। অথচ বংশধারা প্রবাহিত হওয়ার নীতিমালা মোতাবিক বংশধারাটির এ স্তরে হযরত হাছান মোছান্নার ইতিহাস স্বীকৃত ও অধস্তন বংশধর সম্পন্ন কোন একজন পুত্র সন্তান থাকা বাধ্যতা মুলক ছিল। বংশধারার ধারাবাহিকতায় এই স্তরে হযরত হাছান মোছান্নাহ (রাহঃ) এর সন্তানদের বাহিরে কেহ বা কারো নাম কোন ক্রমেই আসতে পারেন না। যেহেতু হযরত হাছান মোছান্নাহ (রাহঃ) এর ইতিহাস স্বীকৃত পুত্রদের তালিকায় কথিত “নউম আল লখমী” নামে কোন পুত্র নেই, এমনকি দুনিয়ার কোন ইতিহাস গ্রন্থেই হযরত হাছান মোছান্নাহ (রাহঃ) এর এই
নামে কোন পুত্র বা তার কোন বাঁদির পুত্র ছিল এমনটিও কোথাও লিখা হয়নি এবং যেহেতু কথিত এই “নউম আল লখমী” এর সাথে হযরত হাছান মোছান্নার (রাহঃ) এর পিতৃত্বের কোন সম্পর্কই নেই সেহেতু ইউরোপীয় গবেষকদের লেখা বংশধারাটির ৫ম ব্যক্তি হতে সর্বশেষ ব্যক্তি পর্যন্ত (অর্থাৎ মোহতারামাহ রানী সহ) কেহই রাসূলে আকরাম (সঃ) এর সঠিক বংশ ধারার সাথে সম্পৃক্ত নন। তাই ইউরোপীয় গবেষকদের লেখা বংশধারাটি ভুয়া ও বাতিল বলেই আমরা মনে করি। অতএব এই ভুয়া শাজারা বা ভুয়া বংশধারার আলোকে মহামতি রানী এলিজাবেথ রাসূলে আকরাম (সঃ) এর বংশধর বলে দাবী করার কোনই সুযোগ নেই।
(২) ইউরোপীয় গবেষকদের লেখা বংশধারায় বর্ণিত ৫ম ব্যক্তি যোহরা বিনতে হোসেন কে যদি কাল্পনিক ভাবে হাছান মোছন্নার কন্যাও ধরে নেয়া হয় তাহলেও বংশধারাটি বাতিল সাব্যস্ত হবে। কেননা শাজারা বা বংশধারা পিতা পুত্রের ধারাবাহিকতায় তৈরি হয়, পিতা কন্যার ধারাবাহিকতায় নয়। একই ভাবে ইসলাম ধর্মের নীতিমালা মোতাবিক বংশধারা পিতা হতে সাব্যস্ত হয় কন্যা হতে নয়, এ কারণেও ইউরোপীয় গবেষকদের লিখা বংশধারাটি কে আমরা ভুয়া ও বাতিল বলে মনে করি।
(৩) একই ভাবে ইউরোপীয় গবেষক মহোদয়ের দাবী মোতাবিক আব্বাদ আল মো’তাজিদের কন্যা জা’দাহ কে যদি কাল্পনিক ভাবে সঠিক ধরে নেয়া হয়, তাহলেও রানী এলিজাবেথ রাসূলে আকরাম (সঃ) এর বংশধর বলে দাবী করার কোন সুযোগ নেই। কেননা আমরা পুর্বেই বলে এসেছি যে ইসলামের বিধান মতে কন্যা হতে পিতার বংশধারা প্রবাহিত হয়না।
কে এই নাউম আল লাখামী? ঐতিহাসিকগণ এ ব্যাপারে একমত যে ইউরোপীয় গবেষক মহোদয় রচিত মহামতি রানী এলিজাবেথের বংশধারাটির ৫ম স্তর হতে আব্বাদ আল মো’তাজিদ বিল্লাহ পর্যন্ত সকলেই হিরার বা তদানীন্তন ইরাকের সর্বশেষ বাদশাহ নো’মান ইবনে আল মুনযির এর বংশধর। এদের সাথে হাছান মোছান্না বা রাসূলে আকরাম (সঃ) এর বংশগত কোন সম্পর্ক নেই। দীর্ঘ তদন্ত তালাশের পরও গবেষক মহোদয়ের এমন অজ্ঞতা আমাদের হতাশ করেছে। কোথাকার বংশধারা কোথায় জুড়ে দিয়ে রানী এলিজাবেথ কে রাসূলে আকরাম (সঃ) এর বংশধর সাব্যস্ত করার কোনো সুযোগ বা বৈধতা নেই। রাণী মূলত তদানীন্তন ইরাকের সর্বশেষ বাদশাহ নো’মান ইবনে আল মুনযির এর বংশধর। এ ব্যাপারে বিশ্ব বরেণ্য ঐতিহাসিকগণের নিম্নোক্ত বক্তব্যগুলোর প্রতি লক্ষ করুন,
(১) আল মুতরিব মিন আশআ’রি আহলিল মাগরিব গ্রন্থের ১ম খন্ড ৪র্থ পৃষ্ঠায় ইসবিলিয়ার শাসক আবুল কাসেমের বংশধারার বিবরণ এভাবে দেয়া হয়েছে, মোহাম্মাদ পিতা আব্বাদ পিতা মোহাম্মাদ. পিতা ইসমাঈল, পিতা কোরাইশ পিতা আব্বাদ পিতা আমর পিতা আছলাম, পিতা আমর পিতা ইতাফ পিতা নুআইম। এরপর তিনি লিখেছেন, এরা নো’মান ইবনে আল মুনযিরের বংশধর।
(২) আল হুল্লাতুস সায়েরা গ্রন্থের ১ম খন্ড ৪র্থ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে, এরা নো’মান ইবনে মুনযির ইবনে মাউছ ছামার বংশধর।
(৩) ওফায়াতুল আ’য়ান গ্রন্থের (সি ডি ভার্সন) ৫ম খন্ড ২১নং পৃষ্ঠায় বিশ্ব বরেণ্য ঐতিহাসিক কাজী শামছুদ্দিন ইবনে খাল্লেকান (রাহঃ) লিখেছেন, ইশবিলিয়ার (বর্তমান নাম শেভিল) শাসক আবুল কাছিম মোহাম্মাদ আল মো’তামিদ আলাল্লাহ এবং তার পুত্র আব্বাদ আল মো’তাজিদ বিল্লাহ এরা ছিলেন লাখামিদের শেষ বাদশাহ নো’মান ইবনে মুনযির আল লাখমি এর বংশধর। (৪) বিশ্ব বরেন্য ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনে খালদুন (রাহঃ) এর বক্তব্যও হুবহু একই, দ্রষ্টব্য: তারিখে ইবনে খালদুন সি ডি ভার্সন ৪র্থ খন্ড ১৫৬নং পৃষ্ঠা। (৫) বিশ্বের সর্বস্তরে পরিচিত তারাজিম গ্রন্থ নেহাতুল আরব ফি মাআ’রিফাতিল আনসাব আল আরব, সি ডি ভার্সন ৬নং খন্ড ৩৫নং পৃষ্ঠা। এক কথায় এ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করার মত এমন আরো বহু গ্রহণযোগ্য ইতিহাস গ্রন্থ রয়েছে, যাদের সকলের বক্তব্য ইহাই যে ইশবিলিয়ার শাসক আবুল কাছিম মোহাম্মাদ আল মো’তামিদ আলাল্লাহ এবং তার পুত্র আব্বাদ আল মো’তাজিদ বিল্লাহ এরা ছিলেন ইরাকের হিরা অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত লাখামিদের শেষ বাদশাহ নো’মান ইবনে মুনযির আল লাখমি এর বংশধর। এদের সাথে হাছান মোছান্না বা রাসূলে আকরাম (সঃ) এর বংশগত কোন সম্পর্ক থাকার প্রশ্নই আসেনা। ইউরোপীয় গবেষক মহোদয়ের এমন অজ্ঞতায় শুধু আমরা নই বরং এতে গোটা বিশ্ববাসী হতাশ হয়েছে। কার বংশধারা কোথায় জুড়ে দিয়ে রানী এলিজাবেথ কে রাসূলে আকরাম (সঃ) এর বংশধর সাব্যস্ত করার নামে মোসলমানদের বিভ্রান্ত করা ব্যার্থ চেষ্ট চালানো হচ্ছে?
চরম অজ্ঞতা ঃ ইউরোপীয় গবেষক মহোদয় ইসবিলিয়ার শাসক আবুল কাছিম মোহাম্মাদ আল মো’তামিদ কে রাসূলে আকরাম (সঃ) এর নাতি হাসানের ১১তম অধস্তন বংশধর বলে দাবী করে তাদের চরম অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। কেননা এই আবুল কাছিম মোহাম্মাদ এর বংশধারা নিয়ে এ পর্যন্ত যেসব আলোচনা হয়েছে তাতে দিবালোকের ন্যায় এ কথা স্পষ্ট যে কথিত এই “আবুল কাছিম মোহাম্মাদ” এর বংশধারা তদানীন্তন হিরার বাদশাহ নো’মান ইবনে মুনযির আল লাখমি হতে প্রবাহিত। অতএব তিনি রাসূলে আকরাম (সঃ) এর নাতি হাসান (রাঃ) এর ১১তম বংশধর হওয়ার প্রশ্নই আসে না। ফলত রাণী এলিজাবেথেরও রাসূল আকরাম (সঃ) এর বংশধর হওয়ার তথ্য সঠিক হতে পারে না। এ গবেষণা ভুল। আশাকরি সংশ্লিষ্ট গবেষকরা সংশোধন করে নিবেন।
লেখক: বংশধারা ও ক্যালেন্ডার বিশেষজ্ঞ, প্রখ্যাত ধর্মীয় বিতার্কিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।