Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কমছে ব্যাংক আমানত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ব্যাংকের আমানত কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ যে ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, সেই সোনালী ও জনতা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকার আমানত চলে যাচ্ছে। সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে দেওয়া এক চিঠিতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদ দাবি করেছেন, গত দুই মাসে জনতা ব্যাংক থেকে দুই হাজার ৬১২ কোটি টাকার আমানত কমেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার আমানত হারিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। একইভাবে তিন মাসের ব্যবধানে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা আমানত কমেছে রূপালী ব্যাংকের। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে আমানত কমেছে দেড় হাজার কোটি টাকা।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে সাধারণ মানুষের রাখা আমানত আগের মতোই আছে। তবে সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের টাকা তুলে নেওয়ার কারণে সরকারি ব্যাংকগুলোয় কিছুটা আমানত কমেছে। তিনি বলেন, বিএবি (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস) ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত সবাই মেনে চললে আমানত নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হতো না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকই শুধু নয়, এ বছরের জুনের তুলনায় জুলাইয়ে পুরো ব্যাংকিং খাতেই আমানত কমেছে। জুন শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল (আন্তঃব্যাংক আমানত ছাড়া) নয় লাখ ৬৯ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। জুলাই শেষে তা নয় লাখ ৬৮ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ একমাসের ব্যবধানে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানত কমেছে দশমিক ছয় শতাংশ।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো আমানত হারিয়েছে। বিএবি ও সরকারের যৌথ সিদ্ধান্ত ছিল, তিন মাস মেয়াদি আমানতের সুদহার ছয় শতাংশের বেশি হবে না। সরকারি ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত মানলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো এই সিদ্ধান্ত মানেনি।

জানা গেছে, গত আগস্ট শেষে সোনালী ব্যাংকের আমানত ছিল এক লাখ নয় হাজার ৮০০ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে তা নেমে দাঁড়ায় এক লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ শুধু সেপ্টেম্বরেই প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার আমানত হারিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। জুন শেষে রূপালী ব্যাংকের আমানত ছিল ৩৬ হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানত নেমে আসে ৩৩ হাজার কোটি টাকায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, গত একদশক ধরেই ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ২১ শতাংশের ওপরে। এখন আমানতে প্রবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছে। ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা এ বছরের শুরু থেকে আমানত বাড়ানোর জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসছে না। কোনও কোনও বেসরকারি ব্যাংক গ্রাহকদের ১২-১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংক খাতে একের পর কেলেঙ্কারির ঘটনার কারণে অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। আবার রেকর্ড পরিমাণ আমদানি ব্যয় মেটাতে প্রতিনিয়ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে ব্যাংকগুলো। ডলার কিনতে গিয়ে হাতে থাকা আমানতের টাকাও বাংলাদেশ ব্যাংকে চলে যাচ্ছে।

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো আগ্রাসী বিনিয়োগ করায় বেশ কিছু ব্যাংকে আমানত কমে গেছে। আবার আমদানি ব্যয় মেটাতে আমানতের টাকা চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে। তবে কিছু ব্যাংকের বিষয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হওয়ার কারণেও মানুষ ব্যাংকবিমুখ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের (ডিমান্ড ও টাইম ডিপোজিট) পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৬০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এক বছর পর ২০১০ সালের জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় তিন লাখ ১৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকায়। এই হিসাবে তখন আমানতের প্রবৃদ্ধি হয় ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অথচ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ। এখন আমানতে প্রবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছে।

এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে- ব্যাংকে যে পরিমাণ আমানত আসছে, ঋণ বিতরণ হচ্ছে তার চেয়েও বেশি। গত একবছরে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। অথচ এই সময়ে ব্যাংকে আমানত এসেছে ৯০ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে সংগৃহীত আমানতের চেয়ে ৪২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দুই বছরে (২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৮ জুন পর্যন্ত) ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে দুই লাখ ৪০ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। যদিও এসময়ে আমানত এসেছে মাত্র এক লাখ ৭৩ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। ফলে দুই বছরে সংগৃহীত আমানতের চেয়ে ৬৬ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এই পরিমাণ অর্থ ঋণ করেছে ব্যাংক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ