Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

যাদের মিথ্যা সংবাদ ছাপানোর উদ্দেশ্য নেই তাদের ভয় নেই

ফেসবুক স্ট্যাটাসে জয়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮ এর ৯টি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ ও দাবির কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেছেন, যেসব সাংবাদিকের মিথ্যা সংবাদ ছাপানোর উদ্দেশ্য নেই, তাদের ভয়েরও কিছু নেই।
গত রোববার সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এ কথা বলেন। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, কিছু মহল থেকে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করা হচ্ছে। তাদের মূল আপত্তির জায়গা আইনটির বিশেষ কিছু ধারা। আইসিটি ডিভিশন যখন আইনটির খসড়াগুলো তৈরি করে তখন সেগুলো দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। সবার সুবিধার্থে এ বিষয়ে আমার মতামত তুলে ধরছি-
সরকারি অফিসের কম্পিউটারে হ্যাকিং এবং গোপনে নজরদারির ক্ষেত্রে আইনের দরকার জনগণের তথ্য ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থেই। এ আইনের আগে হ্যাকিং ও তথ্য চুরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো আইনি ভিত্তি দেশে ছিল না। তা হলে এ আইনের সাহায্য ছাড়া কীভাবে হ্যাকিং ও তথ্য চুরির বিচার হবে?
সরকারি কম্পিউটারে জনগণের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নাগরিকদের অনেক রকম তথ্য সংগৃহীত থাকে। ব্যাংক হিসাব, স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য, জমির রেকর্ড- সব কিছুই আজকাল ডিজিটাইজ করে সংগ্রহ করা হচ্ছে। এগুলো যদি হ্যাক করা হয়, তার দায়ভার কে নেবেন? দায় কিন্তু তখন সরকারের ওপরই আসবে। তাই তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে আমি এ আইন প্রণয়নের সুপারিশ করি হ্যাকিং ঠেকানোর জন্য।
শুধু তাই নয়, সরকারি অফিসে ডিজিটাল নজরদারির মাধ্যমে জনগণের তথ্যসংবলিত বিভিন্ন দলিল বা নথির ছবি বা ভিডিও তোলাও সম্ভব। গোপনে অডিও রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমেও নাগরিকদের অনেক সংবেদনশীল তথ্যের আলোচনা শুনে ফেলা সম্ভব, এমনকি ওয়াইফাই পাসওয়ার্ডও।
এর মাধ্যমে হয়তো একজন সাংবাদিকের কাজ কঠিন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু কারও দুর্নীতি ফাঁস করার জন্য একজন সাংবাদিকের কি সরকারি অফিসের কম্পিউটার হ্যাক করে নাগরিকদের সংবেদনশীল তথ্য চুরির অধিকার থাকা উচিত?
পৃথিবীর কোনো দেশই কিন্তু বেআইনিভাবে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করার সুযোগ দেয় না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও না। সরকারি অফিসে গোপনে নজরদারি করা সব দেশেই আইনবহির্ভূত, সাংবাদিকদের জন্যও। সাংবাদিকদের তাদের তথ্য অন্যান্য সূত্র থেকে জোগাড় করতে হয়। যেসব কূটনৈতিক মিশন এ আইনটি নিয়ে আপত্তি তুলেছে, তাদের আমি একটি প্রশ্ন করতে চাই- সাংবাদিকরা কি আপনাদের দূতাবাসের ভেতরে গোপনে নজরদারি করার যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে পারবেন?
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হলোকাস্ট ডিনায়াল আইনের ওপর ভিত্তি করেই এ ধারাটি প্রণয়ন করা হয়েছে। ১৬ ইউরোপিয়ান দেশে হলোকাস্টে স্বীকৃত সংখ্যা থেকে কম মানুষ মারা গেছে এই কথা বললেও কারাদন্ড দেয়া হয়। এর মধ্যে অনেক দেশ আছে, যাদের দূতাবাসগুলো বাংলাদেশে আমাদের এই আইন নিয়ে আপত্তি তুলেছে।
যেসব ইউরোপিয়ান দূতাবাস আমাদের এ আইন নিয়ে আপত্তি তুলেছেন, তাদের প্রতি আমার প্রশ্ন- আপনাদের হলোকাস্ট ডিনায়াল আইন থাকতে পারলে আমাদের কেন একই রকম আইন থাকতে পারবে না? আমাদের আইন যদি জাতিসংঘসহ অন্যান্য মানবাধিকারের মানদন্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তা হলে আপনাদেরগুলো কীভাবে হয়? এ ধারাটিতে কোনো ধরনের সংশোধন সম্ভব নয়।
এই আইনের কিছু অংশ অনলাইনে মিথ্যা বা গুজবের মাধ্যমে সহিংসতা বা ধর্মীয় উন্মাদনা উসকে দেয়ার বিরুদ্ধে। আপনাদের মনে আছে- রামুতে ফেসবুকে পবিত্র কোরআন পুড়িয়ে দেয়ার মিথ্যা পোস্টের মাধ্যমে পুরো একটি বৌদ্ধ অধ্যুষিত গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। অনেক ইউরোপিয়ান দেশে বিদ্বেষ ছড়ানো ও সহিংসতা উসকে দেয়ার বিরুদ্ধে আইন আছে। আমাদের এই আইনও সে রকমই।
প্রেসক্লাব, সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের কোনো সংগঠনই কিন্তু তাদের নিজেদের নৈতিকতার সনদ বা আচরণবিধি প্রয়োগ করতে পারেননি। সম্পাদক পরিষদের বর্তমান প্রধান মাহফুজ আনাম, যিনি টেলিভিশনের পর্দায় স্বীকার করেছেন ১/১১-এর সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রচারের কথা।
যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে হলে তাকে বাধ্য করা হতো সাংবাদিকতা পেশা থেকে পদত্যাগ করতে। শুধু তাই নয়, তাকে আর কোনো দিন সম্পাদক বা সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হতো না। বাংলাদেশে কিন্তু সম্পাদক পরিষদ উল্টো তার পক্ষ নিয়েই তাকে তাদের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত করেছে। বিষয়টি আমাকে অবাক করে।
যেহেতু ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র মিশন এ আইন নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেছে। আমি আশা করব, তারা মাহফুজ আনামের স্বীকারোক্তির পরও একটি প্রথম সারির পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত থাকা নিয়েও তাদের মতামত জানাবেন। তা না হলে তাদের কার্যকলাপ হবে একপেশে ও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার শামিল। এ বিষয়টি থেকে আমরা সম্পাদক পরিষদের নৈতিকতা সম্পর্কে কি ধারণা পাই? পরিষ্কারভাবেই তাদের নৈতিকতা বলে কিছু নেই।
বস্তুত সম্পাদক পরিষদ বলতে চায়, তাদের সরকারের বিরুদ্ধে নোংরা, মিথ্যা প্রচারণা চালাতে দিতে হবে এবং সত্য অবলম্বন না করেই তাদের অপছন্দের রাজনীতিকদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে দিতে হবে। তারা যদি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এমন পরিকল্পনা করেন, তা হলে দেশের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?
যেহেতু গণমাধ্যমের সম্পাদকরা তাদের নিজেদের তৈরি নৈতিক নির্দেশনাই মানতে রাজি নন, তা হলে আমরা সত্য-মিথ্যা নির্ধারণের ভার আদালতের হাতেই তুলে দিই। গ্রেফতার মানেই জেল নয়। সরকারের প্রমাণ করতে হবে যে আসামি জেনেশুনে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেছেন। প্রমাণের দায়ভার সরকারের। যেসব সাংবাদিকের মিথ্যা সংবাদ ছাপানোর উদ্দেশ্য নেই, তাদের ভয়েরও কিছু নেই।
সম্পাদক পরিষদ যদি এসব ধারার সংশোধন চান, তা হলে তাদের নিজেদের নৈতিকতার নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। যে সম্পাদক বা সংবাদকর্মী মিথ্যা সংবাদ ছেপেছেন, তাকে অবশ্যই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো দিন সংবাদ তৈরি বা প্রচারের কাজ করতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জয়

১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
১৭ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ