Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নাশকতা মামলার আসামিদের খোঁজে মাঠে নেমেছে পুলিশ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে সহিংসতার পুরনো মামলার আসামিদের খোঁজে মাঠে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পুরনো মামলার রেকর্ডভুক্ত আসামিরা আদালত থেকে জামিনে আছেন না বাইরে রয়েছেন সে খবর নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে নাশকতার মামলায় যারা জামিনে রয়েছেন তাদের গতিবিধি নজরে নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ লক্ষ্যে মাঠে কাজ শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। আগামি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন দুষ্টু চক্র যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্যই আগাম এ সতর্কতা।
সূত্র জানায়, বিগত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এবং পরে সহিংসতার জন্য ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছিল। মামলাগুলোর অধিকাংশই অভিযোগ হচ্ছে, গাড়িতে আগুন ও পুলিশের কাজে বাধা। ওই মামলার অধিকাংশই বাদী ছিলো পুলিশ। মামলা দায়েরের পর অনেক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আবার অনেক আসামি পলাতক রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড প্লানিং) মো. রুহুল আমিন চৌধুরী জানান, গত সংসদ নির্বাচনের সময় সহিংসতার জন্য যারা দায়ী এবং মামলার রেকর্ডভুক্ত আসামি পুলিশ তাদের নজরদারিতে রাখবে। তারা জামিনে আছেন না কারাগারে আছে তা মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দাদের দিয়ে তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে। তিনি জানান, সামনের নির্বাচনে খুব সতর্ক অবস্থানে থাকবে পুলিশ। আগে যারা সহিংসতা করেছে তাদের নজরদারি ছাড়াও নতুন করে যদি কেউ সহিংসতা করে আইন নিজের হাতে তুলে নেয় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্রমতে, ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে যারা নাশকতার মামলার আসামি ছিলেন বিশেষ করে তাদের দিকে দেয়া হচ্ছে বিশেষ নজর। পুলিশ সদর দপ্তরের অপারেশন বিভাগ থেকে জানা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দুই বছরে দেশের বিভিন্নস্থানে সহিংস ঘটনায় ঢাকাসহ সারা দেশের থানাগুলোতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মামলা হয়। এতে আসামি ছিলো প্রায় ১ লাখ। আসামিদের অধিকাংশই বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী। ঢাকার রমনা থানা, পল্টন, তেজগাঁও, শাহবাগসহ ডিএমপির একাধিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছিল সেসব মামলার আসামিরা কারা ছিল তা নজরদারি শুরু হয়েছে। এদিকে আদালত সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের রাজধানীর পল্টন থানায় পুলিশের দায়ের করা দু’টি মামলা দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে চার্জশীট দেয়া হয়েছে। এ দু’টি মামলা নং ২৮(৭)১৩ ধারা ১৪৩/৩৫৩/১৮৬/৩৩২/৩৩৩/৩০৭/৩০৭/৪৩৫/৩৭৯/৩২৭/তৎসহ বিস্ফোরক দ্রবাদি আইনের ৩(৬) ধারা। একই ধারার অপর মামলার নম্বর ৪৯ (১) ১৩)। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উক্ত দু’টি মামলা থেকে ৪টি মামলার উৎপত্তি হয়। ইতোমধ্যে এসব মামলায় আদালতে চার্জশীট দেয়া হয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় উক্ত আসামি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানার মেদিরাবাদের স্থায়ী বাসিন্দা। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম ফারুকী। দুর্ধর্ষ এ আসামি ইসলামি ব্যাংকের একজন কর্মচারি। অভিযোগ রয়েছে, চাকুরি তার সাইনবোর্ড মাত্র। তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কয়েকটি বিদেশ ইসলামী সংগঠনের সঙ্গে তার গোপন সখ্যতা রয়েছে। ওইসব সংগঠন থেকে তিনি আর্থিক অনুদান নিয়ে জঙ্গি তৎপরতায় অংশ বিশেষ ব্যয় করেন। বাকি অর্থ দিয়ে গোড়ান এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করেছেন। উক্ত বাড়িতে বসেই সরকার বিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও নাশকতার পরিকল্পনা করে। ইতিপূর্বে নাশকতার দায়ে কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে ছিলেন চার্জশীটভ‚ক্ত আসামি মনিরুযজ্জামান। পল্টন থানার দায়ের করা ২৮ (৭) ১৩ নম্বর মামলায় তিনি ওই বছরের ১৫ জুলাই গ্রেফতার হন। ওই সময় তিনি দুই দিনের পুলিশি রিমান্ডেও ছিলেন। বর্তমান সরকার জঙ্গি তৎপরতা নিরোধে তৎপর এবং আইন-শৃঙ্খলা উন্নতির জন্য প্রচেষ্টারত।
মনিরুজ্জামানের সঙ্গে অভিযুক্ত মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্যরা হলেন, ডাক্তার ফখরুদ্দিন মানিক যিনি ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি একই সংগঠনের ওই সময়ের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাইদী, সেক্রেটারি আব্দুল জব্বার, ঢাকা মহানগর শিবিবের সহকারি সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এছাড়াও রয়েছে হোসনে মোবারক, মাহামুদুল হাসান সোহাগ, মেহেদি হাসান, জাহিদ হোসেন, ইসমাইল হোসেন, মতিউর রহমান,সিহাব উদ্দিন, শরিফুল ইসলাম, আবু বক্কর ছিদ্দিক, আরিফ হোসেনসহ চিহিৃতত ক্যাডারা। চলমান এসব মামলায় পুলিশের দীর্ঘ তদন্তে নাশকতার ঘটনায় যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের অধিকাংশই জামায়াত শিবিরসহ কোন না কোন নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য। ৪টি মামলার চার্জসীটকৃত আসামি থাকলেও সবগুলোতেই দু’একজনের কমন নাম রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর, সরকারি সম্পদ নষ্ট মানুষ হত্যা, রাজিৈনতক অস্থিরতা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, যেসব মামলা বিস্ফোরক ও বাসে আগুন দেয়ার জন্য দায়ের হয়েছিল ওই মামলাগুলোর আসামিদের ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। থানা পুলিশ ও গোয়েন্দারা সমন্বয় করে ওয়ার্ড ভিত্তিক পুরনো মামলার আসামিদের খোঁজ নিচ্ছে। সহিংসতার মামলার আসামিরা যাতে ঢাকা বা বিভাগীয় শহরে অবস্থান করতে না পারে সেইদিকেও নজরদারি করবে আইনশৃঙ্খলা পুলিশ। সামনের নির্বাচনে আগের ঘটনার যাতে পুনারাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখবে পুলিশ। ইতিমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে বিগত ৫ বছর আগে পুরনো মামলার নথিগুলো তলিয়ে দেখা হচ্ছে।



 

Show all comments
  • Ismail Rony ১ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:১৫ এএম says : 0
    ১০ টা বছরই এই জিনিস দেখতাছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ