Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতুর নামকরণ হচ্ছে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

পদ্মাসেতুর নাম হচ্ছে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুর নাম বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে রাখা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে সারসংক্ষেপও পাঠানো হয়েছে। সেতুমন্ত্রী জানান, পদ্মাসেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৫৯ শতাংশ ও মূল সেতুর অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। আগামী ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প এলাকায় এসে ৬০ শতাংশ কাজের উদ্বোধন করবেন। গতকাল শনিবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের সেতু প্রকল্প এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
একই দিন উদ্বোধন করা হবে অসমাপ্ত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন মহাসড়কও। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১৬ সালের মে মাসে। শুরুতে এর ব্যয় ছিল ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরে আরও ৬০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। চলতি বছর জুনের মধ্যে এটি শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি নির্ধারিত সময়ে কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। এই ৬০ শতাংশ অংশেরই উদ্বোধন হবে ১৩ অক্টোবর।
আমাদের মুন্সিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, : সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শনিবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের সেতু প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুর নাম বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে রাখা হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বারবার বলেছেন পদ্মা নদীর নামে সেতুর নামকরণ করা হোক। কিন্তু সংসদ সদস্য এবং বাইরের জনমত হলো, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নামেই এ সেতুর নামকরণ হোক। তাই বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে চায়। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী সৎ সাহস দেখিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। সে কারণে ৩১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব ফান্ডে সেতু নির্মিত হচ্ছে। তিনি বলেন, সেতুর নামকরণের বিষয়ে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে বহু চিঠিপত্র এসেছে, সবার অভিমত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকরণ হোক। জনমতের চাপ প্রতিনিয়ত অনুভব করে ‘শেখ হাসিনা পদ্মাসেতু’ নাম রাখার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। সেজন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে সামারিও (সারসংক্ষেপ) পাঠানো হয়েছে।
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু থেকে সরে যাওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সাহস দেখান বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার একক সাহসের সোনালি ফসল পদ্মাসেতু আজ দৃশ্যমান। তার একক অবদানের জন্য এই সেতু নির্মিত হচ্ছে। স্বপ্নেও ভাবতে পারি না সাহায্য ছাড়াই এই সেতু নির্মাণ হচ্ছে। তাই ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মাসেতুর নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ‘শেখ হাসিনা পদ্মাসেতু’।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, আগামী বছরেই পদ্মাসেতুর উদ্বোধন হবে। পদ্মাসেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৫৯ শতাংশ ও মূল সেতুর অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প এলাকায় এসে ৬০ শতাংশ কাজের উদ্বোধন করবেন। সওজ সূত্র জানায়, একই দিন ঢাকা-ফরিদুপর-ভাঙ্গা পর্যন্ত অসমাপ্ত ৬ লেন এক্সপ্রেসওয়েরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে রেললাইনেরও ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হবে।
পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে চুক্তি সই হয় ২০১৪ সালের জুনে। চলতি বছর নভেম্বরে এ কাজ শেষ করার কথা ছিল। যদিও নির্মাণকাজ শেষ করতে অতিরিক্ত ৩১ মাস সময় চেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে সেতু বিভাগ ও ঠিকাদারের প্রতিবেদনে।
চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মূল সেতু নির্মাণকাজের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। সেতু বিভাগের দাবি, জুন পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ঠিকাদারের তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনা পরামর্শক বলছে, জুন পর্যন্ত মূল সেতুর অগ্রগতি ৬০ দশমিক ২৭ শতাংশ। যদিও এ অগ্রগতি আর্থিক ভিত্তিতে হিসাব করা। বাস্তব তথা ভৌত অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে তা নিশ্চিত নয়। এতে করে জুন পর্যন্ত এ কাজ কতটুকু পিছিয়ে ছিল তা নির্ধারণ করা যায় নি। একই অবস্থা নদী শাসন প্যাকেজেরও।
প্রকল্পটির নদী শাসন প্যাকেজের চুক্তি সই হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। চলতি বছর ডিসেম্বরে এ কাজ শেষ করার কথা ছিল। আর জুন পর্যন্ত নদী শাসনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তবে সেতু বিভাগের দাবি, উল্লিখিত সময় পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৪১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর ঠিকাদারের তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনা পরামর্শক বলছে, জুন পর্যন্ত নদী শাসনের অগ্রগতি ৩৮ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ।
জুনের আগেই নদী শাসন শেষ করতে অতিরিক্ত ১৮ মাস সময় চেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশনকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। তবে পদ্মা সেতুর ব্যবস্থাপনা পরামর্শক রেন্ডাল অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস মনে করে কবে নাগাদ এ কাজ শেষ হবে তা পুরোই অনিশ্চিত ।
ব্যবস্থাপনা পরামর্শকের সে সময়ে দেয়া এক চিঠিতে বলা হয়, জুনে মূল সেতুর কাজ হয়েছে মাত্র দশমিক ৯৪ শতাংশ। যদিও ওই মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর জুনে নদী শাসনের কাজ হয়েছে দশমিক ৯৫ শতাংশ। যদিও ওই মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই দশমিক ৯২ শতাংশ।
সূত্র জানায়, মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য অতিরিক্ত ৩১ মাস সময় চেয়ে গত মে মাসে কর্মপরিকল্পনা জমা দেয় চায়না মেজর ব্রিজ। এক্ষেত্রে ২০২১ সালের জুনে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতু বিভাগ বর্ধিত এ সময় দিতে রাজি হয়নি। এক্ষেত্রে পরবর্তী ১২ মাস কাজ পর্যবেক্ষণ করে বর্ধিত সময় নির্ধারণের কথা জানায় সেতু বিভাগ।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি বছরের শেষ দিকে সেতুটি উদ্বোধনের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। তবে নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে এখন সে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এ কারণেই দৃশ্যমান অংশ উদ্বোধন করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ১৩ অক্টোবর অসমাপ্ত রেখেই উদ্বোধন করা হবে ঢাকা-মাওয়া-ভঙ্গা ৪ লেন মহাসড়ক। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সওজ সূত্র জানায়, প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। মূলত এ কারণেই অসমাপ্ত রেখেই শেষ করা হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৪ লেন নির্মাণকাজ। বাকি কাজ শেষ করতে নেওয়া হচ্ছে আরেকটি প্রকল্প। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রকল্পটির স্টিয়ারিং কমিটির সভায় বিষয়টি উঠে আসে। এতে জানানো হয়, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেনে উন্নয়ন প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করতে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। ওই বৈঠকে জানানো হয়, প্রকল্পটির আওতায় যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার ও পাঁচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এর দুই পাশে সাড়ে পাঁচ মিটার প্রশস্ত সার্ভিস সড়ক ও মাঝে পাঁচ মিটারবিশিষ্ট মিডিয়ান রয়েছে। এছাড়া ২৯টি ছোট ও মাঝারি সেতু, ৫৪টি কালভার্ট, চারটি রেলওয়ে ওভারপাস, পাঁচটি ফ্লাইওভার, ২০টি আন্ডারপাস, দুটি ইন্টারচেঞ্জ ও দুটি টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে। জুন পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। তবে বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৬০ শতাংশ।
সূত্র জানায়, গত ১৮ আগস্ট উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে তা ফেরত দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ডিপিপিতে নতুন কাজ বা অঙ্গ যেভাবে আছে তা আলাদাভাবে বাস্তবায়নের জন্য পৃথক প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এ অবস্থায় প্রথম প্রকল্পটির ব্যয় ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ বাড়িয়ে ৬ হাজার ৮৯২ কোটি ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। আর বাকি কাজ শেষ করার জন্য নতুন প্রকল্পটির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ হাজার ১১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। শিগগিরই তা অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চার লেনের এ মহাসড়কের কাজ অনেক স্থানেই দৃশ্যমান। তবে পুরো কাজ শেষ হতে আরও অনেক সময় লাগবে। মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে ফ্লাইওভারগুলোর পিলারের কাজ শেষ করে কোনটার বেসমেন্টের আবার কোনটার ঢালাইয়ের কাজ চলছে। এ ছাড়া নীচের সার্ভিস সড়কগুলোর কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। মহাসড়কের ঢাকার অংশে জুরাইন থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। এর সাথে জুরাইন রেলগেইটে ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। #



 

Show all comments
  • ওবাইদুল ইসলাম ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:৪৩ এএম says : 1
    আমার মতে নাম পরিবর্তন ঠিক হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মারিয়া ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:৪৫ এএম says : 0
    নাম নিয়ে না থেকে কাজের মানের দিকে নজর দিন।
    Total Reply(0) Reply
  • সুলতান ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:৪৫ এএম says : 1
    নাম যা-ই হোক কাজটা ভালো হলেই হলো
    Total Reply(0) Reply
  • শাহাদাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:৪৬ এএম says : 0
    কাজ কবে শেষ হবে সেটা আগে বলুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা সেতু

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২৬ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ