পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একটা বড় রকমের ভুল ধারণা আছে যে, চীন এখন পর্যন্ত প্রযুক্তি পরাশক্তি নয়, অন্তত উদ্ভাবন ও জ্ঞানের প্রচলিত ধারণায় তা বলা যায় না। এটি কনফুসীয়-রীতির ছদ্ম বিনয় নয়। বস্তুত এ হচ্ছে সত্য, অথবা এ রকমই কিছু যা আপনি বলা উপযুক্ত মনে করেন। দেখা যায় যে, প্রযুক্তি নেতা হওয়ার সর্বোচ্চ প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন প্রথম দশটি দেশের মধ্যে চীন নেই। এর সমর্থনে বহু তথ্য রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দি ইকনোমিস্ট-এর ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে সেরা ১০টি দেশের তালিকায় চীনকে ঠাঁই দেয়নি। গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স-এর ২০১৬ সালের তালিকায় চীনের স্থান ছিল ২৫তম- লুক্সেমবার্গ ও এস্তোনিয়ার নিচে। কিন্তু যা মনে করা হয়, বিষয়টি সব সময় সে রকম হয় না। চীন প্রমাণ করেছে যে, অলৌকিক ঘটনা ঘটা অসম্ভব নয়।
কথা হচ্ছে, প্রযুক্তি পরাশক্তি (টেকনোলজি সুপারপাওয়ার বা টিএস) বলতে আসলে কী বোঝায়? এটা জবাবসহ এমন এক প্রশ্ন যা জীবন্ত। আদিম যুগের শিকার-সংগ্রহকারী সমাজে পাথরের অস্ত্রধারী গোত্রই ছিল সব গোত্রের মধ্যে সেরা। মধ্যযুগে যুদ্ধজাহাজ ও কামান-বন্দুক এবং যাদের কাছে দূরবীন ছিল (হার্ভার্ডের অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ডেভিড ল্যান্ডেসের মতে) তারাই ছিল পরাশক্তি। আর বিশ শতকে এসে যার কাছে পারমাণবিক বোমা ও মহাকাশে প্রেরণের উপগ্রহ ছিল সে এ শিরোপা লাভের অধিকারী হল। তবে আজ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা।
আজকের ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তি পরাশক্তি (টিএস) হতে গেলে কোনো দেশকে সুনির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হতে হবে যেমন কৃত্রিম যন্ত্র (ইন্টেলিজেন্স), মোবাইল প্রযুক্তি (ক্ষুদ্রকরণ) ও প্রক্রিয়া দক্ষতা (গতি)। প্রযুক্তি ও তার অপরিসীম সম্ভাবনার দিগন্ত বিষয়ে ছদ্ম আগ্রহ প্রকাশক ব্যক্তিদের কাছে এটা কোনো খবরই নয়।
এসব কিছুরই ভিত্তিমূল হচ্ছে তথ্য ও জ্ঞান। আপনি কীভাবে একটি পরিবহন যান তৈরি করবেন যা ঘন্টায় ১৫শ’ কিমি চলে? আপনাকে আগে এ ব্যাপারে জ্ঞান নিতে হবে। তাই পরাশক্তি হওয়ার সম্ভাবনা সে দেশেরই আছে যার আছে আগ্রহ ও সক্ষমতা এবং নতুন কিছু জানার ধৈর্য। এ তিনটি বিষয় পরস্পর বৈরী নয়।
পাঁচ মাস আগে দু’টি ব্যাগ নিয়ে আমি চীনে উপস্থিত হই। কোনো নতুন দেশকে নিয়ে লিখতে চায় এমন যে কারো মত আমি চীনের উপর কিছু বই পড়েছিলাম এবং দেশটি সম্পর্কিত খবরাখবরের দিকে তীক্ষ্ন দৃষ্টি রেখেছিলাম। তবে দেশটি সম্পর্কে আমার ভুল ধারণাও ছিল। আমার অজ্ঞতা এত বিরাট ছিল যে, এয়ারপোর্ট শাটলে নেপথ্য কন্ঠে ইংরেজি অনুবাদ আমাকে বিস্ময়াপ্লুত করে। চীন নিয়ে কখনো আগ্রহী না হওয়া আমার মানসে দেশটি ছিল এক অরওয়েলীয় রাষ্ট্র যেখানে যোগাযোগের একমাত্র উপায় ছিল চীনারা। জীবন ছিল একঘেয়ে। অরওয়েলিয়ান রাষ্ট্র নিয়ে আমরা বিতর্ক করতে পারি, কিন্তু সব ক্ষেত্রে আমার জানা ভুল ছিল না।
এখন চীনে অবস্থানের পর দেশটির সাথে আমার অপরিচয় ও অজ্ঞতা হ্রাস পায়। এই প্রাচীন, ধনী দেশটি ও তার সুন্দর ইতিহাসের সাথে পরিচয় গভীর হয়। এ এমন এক দেশ যা তাদের আদর্শগত ধারণার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ ও তাদের নির্দিষ্ট পরিচয় পুনরুদ্ধারে নিয়োজিত যেটা তাদেরকে টিএসের দিকে অগ্রসরমান করেছে। সম্ভবত ৫ হাজার বছরের পুরনো আদর্শগত ধারণাই আজ একুশ শতকে চীনের টিএস মর্যাদা অর্জনে শ্রেষ্ঠতম অস্ত্র।
আজকের এ যুগে প্রত্যেক অগ্রসর জাতি যে একটি বলিষ্ঠ জাতীয় পরিচিতি ধারণ করে তা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয়। তাই চীনের আত্মপরিচয় জ্ঞান তাকে প্রযুক্তি থেকে দুরে সরিয়ে রাখবে এমন কিছু বলা হবে অসঠিক ও ভাসা ভাসা মন্তব্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, চীনের এমন কী আছে যা অন্যদের নেই? তার রাজনীতি, সমাজ, ভূগোল কি সমকালের অন্যদের চেয়ে তাকে লাফিয়ে দূরে সরে যেতে দেবে? এর কোনো স্পষ্ট ও সরাসরি জবাব নেই, তবে আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করতে পারি।
চীনে সব কিছুই চলে নেতাদের মতের অনুসরণে। তবে শুধু তা এ দেশটিকে অনন্য করেনি। এখানে অবশ্যই গণিতকে দৃশ্যমান হতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় চীনের জনসংখ্যার হার উচ্চমাত্রায় বেশি। এটা একেবারেই অবিশ্বাস্য।
এখন এই নেতৃত্বের চেতনা চীনের ইতিহাসে শতাব্দীর পর শতাব্দী নানারকম ফলাফলের জন্ম দিয়েছে। তা শান্তি, যুদ্ধ, সমৃদ্ধি, ক্ষুধা সবকিছুই এনেছে। একুশ শতকে তা এনেছে প্রযুক্তি পরাশক্তির অভ্যুদয়। আর এটাই হল আগ্রহ সৃষ্টিকারী অংশ, পদ্ধতি কোনো বিষয় নয়।
২০১৫ সালে চীন সরকার মেড-ইন চায়না কৌশল চালু করে যার লক্ষ্য দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে জোরদার করা। তখন থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ক্রয়ের মধ্য দিয়ে এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০১৪ সালে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে চীনা বিনিয়োগ শুরু হয়। অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিবি ইনসাইটস-এর মতে, তার পরিমাণ ছিল ২৩০ কোটি ডলার। ২০১৫ সালে এ বিনিয়োগ পরিমাণ দাঁড়ায় ৯শ’ ৯০ কোটি ডলার। বিষয়টি মার্কিন সরকারকে রুষ্ট করে যার প্রেক্ষিতে এখন কোনো চীনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কেনা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে ১৬৫টি চীনা চুক্তির কথা জানা গেছে। তবে চীনা পরিকল্পনা শুধু বিদেশি কোম্পানি কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ২০১১ সালে সিটি ল্যাবস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রযুক্তিগত আবিষ্কারের এক চিন্তক নেতা রিচার্ড ফ্লোরিডা একটি রিপোর্টে সহলেখক হিসেবে লেখেন যে ইউরোপ ও ইসরাইল যতটা, চীন মার্কিন প্রযুক্তি আধিপত্যের প্রতি হুমকি নয়। ৭ বছর পর এই আগস্টে আমি তাকে একটি প্রশ্ন পাঠাই যে, কী পরিবর্তন ঘটেছে। জবাব ছিল, বিরাট। তিনি বলেন, বড় চীনা শহরগুলো ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে। বে এরিয়া এখনো এক নম্বরে ও নিউইয়র্ক সম্ভবত দুই নম্বরে। তবে বেইজিং ও সাংহাই-এর আসলেই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েছে। আমি মনে করি, দীর্ঘ দৌড়ে বিজয়ীরাই বিশ^ মেধা অবস্থানে থাকবে।
গত মাসে আমি সাংহাইর ঝাংজিয়াং হাইটেক পার্কে গিয়েছিলাম। এটা উত্তরাঞ্চলীয় পুডং জেলায় যাকে কেউ কেউ চীনের সিলিকন ভ্যালি বলে থাকেন। আমি যখন ঝাংজিয়াং প্রশাসনিক ব্যুরোর উপ-মহাপরিচালক জুন হু’র সাথে সাক্ষাত করে জানতে চাই যে, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পার্কে কী ধরনের উদ্ভাবনমূলক কাজ হয়েছে, তিনি বিশেষত বায়োমেডিসিনসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে গবেষণা সাফল্যের কথা জানান। এ বছরের জুলাইতে পার্ক ভিত্তিক একটি চীনা গ্রুপের জিভি-৯৭১ নামের ওষুধ তৈরির কথা জানান যা ২১ বছর গবেষণার পর আলঝেইমার রোগের চিকিৎসার ব্যবহৃত হতে পারে। তবে উ সতর্কতার সাথে বলেন, এ পার্কের ভবিষ্যত সবে শুরু হয়েছে। বিদেশী মেধার জন্য পার্ককে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এটা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২০ সালের পর আসুন, আপনি আরো অনেক বড় পরিবর্তন দেখতে পাবেন বলে আমাকে জানান তিনি। সুদৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছার সমর্থনে এ ধরনের আশাবাদ চীনের প্রযুক্তি স্থাপনায় আমি দেখেছি। এ আশাবাদ আপনাকে অলীক কিছুর দিকে টেনে নিয়ে যাবে না, বরং ভালো কিছু শুরুর জায়গা দেখিয়ে দেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।