Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মালদ্বীপে আজ নির্বাচন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

আজ রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) মালদ্বীপের জনগণ তাদের পরবর্তী নেতা নির্বাচনের জন্য ভোট দিচ্ছে। এ নির্বাচনে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মহল। সমালোচকদের দমনের অভিযোগও রয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে।
প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হওয়ার জন্য লড়ছেন। ভারত মহাসাগরের পর্যটনের আকর্ষণীয় কেন্দ্র এই দ্বীপরাষ্ট্রটি ভারত ও চীনের প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু সরকার তাদের প্রতিপক্ষের অনেককে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির অভিযোগে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। এছাড়া নতুন ভোট গণনা নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ কারণে প্রতিটি ব্যালট পেপার আলাদাভাবে দেখা যাবে না এবং ভোটের বৈধতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হবে।
প্রধান বিরোধী দল মালদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি) এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বিদেশী সাংবাদিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন তারা।
রাজনৈতিক মহড়া
দেশে ফেব্রুয়ারি থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। সে সময় প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে চাপা দিতে জরুরি অবস্থা জারি করেন। সুপ্রিম কোর্টের ওই আদেশে নয়জন বিরোধী রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ বাতিল করে দেয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে দেশের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদও রয়েছেন।
এর পর থেকে, ইয়ামিনের ক্ষমতাসীন জোট পার্লামেন্টে কোরাম ছাড়াই আইন পাশ করেছে এবং সুপ্রিম কোর্ট সেগুলোর অনুমোদন দিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতিকে কথিত দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার করা হয়।
এমডিপি নেতা নাশিদ ২০০৯ সালে পানির নিচে মন্ত্রিসভার বৈঠক করে আলোচিত হয়েছিলেন। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্যই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে শ্রীলংকায় তিনি নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন এবং আজকের নির্বাচনেও তিনি অংশ নিতে পারছেন না।
বিরোধী জোটের পক্ষে ইয়ামিনের বিরুদ্ধে লড়ছেন এমপি ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ (ইবু)। তিনি গণতন্ত্র, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান এবং পশ্চিমাদের সাথে সুসম্পর্কের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ইয়ামিন সরকার দেশকে চীনের কাছাকাছি নিয়ে গেছে।
এমডিপির মুখপাত্র হামিদ আবদুল গফুর যিনি বর্তমানে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন, তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘আর ভোটের দিন যা ঘটবে, তার পুরোটাই অনিশ্চিত।’ ইয়ামিন প্রশাসন ২০১৬ সালে মানহানিকে অপরাধ হিসেবে আইন করেছে। সরকারের সমালোচকদের মতে, বিরোধী মতকে দমন করতেই এই আইন করা হয়েছে।
দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য জাতিসংঘ, বেশ কিছু পশ্চিমা দেশ এবং ভারতের আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেছেন ইয়ামিন।
নির্বাচনে এগিয়ে আছে কে?
কোন নির্বাচনী জরিপ না হওয়ায় কে জিতবে বলাটা মুশকিল। বেসরকারী সংস্থা এবং দেশে সফররত কূটনীতিকরা বলছেন, বিরোধী প্রার্থী ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ (ইবু) গণতন্ত্র ও দুর্নীতি দমনের শপথ করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনিই বিজয়ী হবেন।
প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন দ্বিতীয়বারের মতো লড়ছেন। চীনের বিনিয়োগ অবকাঠামোর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনার কথা বলছেন তিনি। তার সমর্থকদের মতে, তারাই বিজয়ী হবেন।
কিন্তু তার সরকার জনপ্রিয় নেতাদের বন্দী করে রেখেছে যারা তাকে ২০১৩ সালের নির্বাচনে সহায়তা করেছিল। এদের মধ্যে তার সৎ ভাই সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুমও আছেন, যিনি এর আগে ৩০ বছর দেশ শাসন করেছেন।
বিভিন্ন কারণে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে বিরোধী নেতাদের কারাগারে পাঠানোর সাথে সাথে ইয়ামিন বেশ কিছু পদে নিয়োগ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া কঠিন হবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদসহ নয়জন কারাবন্দীকে ছেড়ে দেয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্ট যে আদেশ দিয়েছিল, তা নাকচ করে দিয়ে তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেন দেশে। এর ফলে গত ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ
ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ বহু আন্তর্জাতিক সংগঠনকে সফর ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়া হয়নি। তাদের পাওয়া তথ্য ইয়ামিনের বিরুদ্ধে ভোটে অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই তাদের অনুমতি দেয়া হয়নি।
নির্বাচন কমিশন বলেছে ৬১টি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আসবে। কিন্তু এরা কারা সেটা কমিশন বলেনি। স্থানীয়ভাবে ২ হাজারেরও বেশি সংখ্যালঘু পর্যবেক্ষক থাকবে, কিন্তু তারা নতুন ভোট গণনা নীতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন।
চীন ও সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে ইয়ামিন এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবেলা করে এসেছেন। তাদের বিরোধীদের ছেড়ে দেয়ার জন্য গত দুই বছর ধরে আন্তর্জাতিক চাপ চলে আসছে। যদিও তিনি ২০১৬ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদকে চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে ব্রিটেন যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন যেখানে পরে আশ্রয় নিয়েছেন নাশিদ।
নির্বাচন পরবর্তীতে কি হতে পারে
নির্বাচনে পরাজিত পক্ষ ফল মেনে নিতে রাজি না হওয়ার ফলে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে বলে অধিকাংশ বিশ্লেষকর আশঙ্কা। ইয়ামিন যদি হেরে যান, বিরোধী পক্ষের আশঙ্কা ইয়ামিন হয়তো সেক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন। নির্বাচন কমিশন এবং সুপ্রিম কোর্টকে দিয়ে নির্বাচন বাতিলও করাতে পারে এবং নতুন করে নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারেন অথবা নিজের পক্ষে সংবিধান পরিবর্তন করতে পারেন। বিরোধী প্রার্থী ইবু গ্রেফতারও হতে পারেন বলে মনে করেন তারা।
ইয়ামিন হেরে গেলেও সংবিধান অনুযায়ী ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত সেই প্রেসিডেন্ট থাকবে। আর ইবু হেরে গেলে বিরোধীদল বিক্ষোভ করবে দেশ জুড়ে। কিন্তু কূটনীতিকদের ধারণা, ইয়ামিন জরুরি অবস্থা, পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী দিয়ে বিক্ষোভকারীদের দমন করতে পারেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ