পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
হঠাৎ করেই রফতানি বাণিজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে রফতানি আয় কমেছে ৩৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ৭১ কোটি টাকা। গত জুলাইয়ে রফতানি আয় হয়েছিল ৩৫৮ কোটি মার্কিন ডলার। এক মাসের ব্যবধানে তা কমে গত আগস্টে হয় ৩২১ কোটি ডলার। রফতানি আয় কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকেই রফতানি আয় দেশে আনছেন না। তারা পণ্য রফতানি করছেন ঠিকই, তবে রফতানি আয়ের টাকা দেশে আনছেন না। এতে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। বলা বাহুল্য, নির্বাচনের বছরে দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় বিনিয়োগ এবং আমদানি-রফতানির ব্যাপারে শঙ্কিত অবস্থায় থাকেন। রাজনীতিতে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, এ নিয়ে তারা পর্যবেক্ষণে থাকেন। বলা যায়, তারা এক ধরনের ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করেন। তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা রফতানির অর্থ দেশে না এনে বিদেশেই রেখে দেন। এর কারণও দেশের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা। যেহেতু সামনে নির্বাচন, তাই আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করা অস্বাভাবিক নয়।
সারা বিশ্বেই জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে কম-বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে, যেখানে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত, ব্যবসায়ীরা কোন সরকার ক্ষমতায় আসবে তা জনমত জরিপের মাধ্যমে আগাম একটি ধারণা পান। তাদের সুবিধা হয়, এমন সরকার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা থাকলে শেয়ার বাজার থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্যে চাঙা ভাব দেখা দেয়। তবে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে রাজনীতি কখনোই স্থিতাবস্থায় থাকে না এবং নির্বাচনের আগে আন্দোলন, সংগ্রামের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, সেখানে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা অনেকটা হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। তারা নির্বাচনের আগে-পরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আমদানি-রফতানি কমিয়ে দেন। যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন ব্যবসায়িক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লেগে যায়। আমরা দেখেছি, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি একেবারেই স্থবির হয়ে পড়ে। তার রেশ এখনো রয়ে গেছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আশানুরূপ হচ্ছে না। উল্টো দেশি বিনিয়োগকারীদের বিদেশে বিনিয়োগ করতে দেখা গেছে। সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যে ঋণাত্মক প্রবণতা বজায় রয়েছে। এর কারণ ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ পরিবেশকে স্বাভাবিক মনে করছেন না। যারা নিয়মিত রফতানি করেন, তারাও শঙ্কিত হয়ে রফতানি বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে একশ্রেণির ব্যবসায়ী পরিস্থিতি অনুকূল না থাকার আশঙ্কায় রফতানি করে উপার্জিত অর্থ দেশে আনছেন না। বিদেশেই রেখে দিচ্ছেন। যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা থাকত, তাহলে সার্বিক ব্যবসায়িক পরিস্থিতিও অনুকূলে থাকত। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় না থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যে এবং বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব বজায় থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা যে রফতানি বাণিজ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি করতে পারছেন না, এ বিষয়টিও রফতানি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চশুল্ক, আধা শুল্ক, অশুল্ক, কানেক্টিভিটি খরচ ও সীমান্ত আস্থার সংকটের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়ছে না। সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার শুল্ক বেশি। এক্ষেত্রে যদি ভারতের সাথে আমাদের বাণিজ্যের তুলনা করা হয় তবে দেখা যাবে, বাংলাদেশের সাথে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি। ভারত ঠিকই ন্যূনতম শুল্কে বাংলাদেশে তার অনেক বেশি পণ্য রফতানি করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পণ্য ভারতে রফতানির ক্ষেত্রে উচ্চহারে শুল্ক নির্ধারণ করে রেখেছে। ফলে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ভারত কোনোভাবেই বাংলাদেশের পণ্য তার দেশে সহজে রফতানির সুযোগ দিচ্ছে না। উল্টো ভারত তার উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহণের জন্য মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরসহ নদীবন্দর ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে। সে বাংলাদেশ থেকে তার ষোল আনাই আদায় করে নিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও নির্দ্বিধায় তা দিয়ে দিচ্ছে। বিনিময়ে কিছুই পাচ্ছে না। অথচ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে যদি সমতা থাকত, তবে উভয় দেশই লাভবান হতো। ভারত সে সুযোগ না দিয়ে তার সব সুবিধাই আদায় করে নিচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রফতানি কমে যাওয়ার বিষয়টি আশঙ্কাজনক। এতে বিদেশে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। নিয়মিত রফতানির ক্ষেত্রে ঋণাত্মক প্রবণতা দেশের অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। আমরা মনে করি, এজন্য দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশের অভাব, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা বড় বাধা হয়ে রয়েছে। ক্ষমতায় যে সরকারই আসুক না কেন, তাকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে রাজনীতিতে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা সরকারসহ সব রাজনৈতিক দলেরই দায়িত্ব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।