পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ এবার দৃশ্যমান হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বাইরে থাকা অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আগামীকাল শনিবার এক মঞ্চে আসছেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’র সমাবেশ হবে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে। এটা হবে দেশের রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট। এ সমাবেশে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট, বামদলসহ বিরোধী অনেকগুলো দলের নেতা যোগ দেবেন। নেতাদের এক মঞ্চে উপস্থিতির মাধ্যমে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’র আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। ওই মঞ্চ থেকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের পরবর্তী দফা ও কর্মসূচী ঘোষণা হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে শুরু হবে বিরোধী দলগুলোর নতুন ভাবে পথ চলা।
বিএনপি থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে দেশের বৃহৎ স্বার্থ ও জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বড় ধরণের ছাড় দিতে দলটি প্রস্তুত। দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সে ইংগিত পাওয়া গেছে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এ বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেছেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের লক্ষে আমরা এগুচ্ছি। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে আমাদের যে সমাবেশ রয়েছে তাতে সব দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। ওইদিন সমাবেশ মঞ্চে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’র একটি রূপ লাভ করবে। প্রকৃত অর্থে আমরা যে পাঁচ দফা দাবি এবং ৯ দফা লক্ষ দিয়েছি সেগুলোর সাথে মোটামুটি ভাবে সবাই একমত পোষন করছেন। আমরা সবার সাথে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি। আগামী দু’তিনদিনের মধ্যে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ঘোষনা করতে পারবো।
ঐক্য প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব দলের নেতারা প্রায় প্রতিদিনই দফায় দফায় বৈঠক করছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডন থেকে ফেরার পর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দু’দফা বৈঠক হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা জোনায়েদ সাকি। বাম গণতান্ত্রিক জোটের আট দলের সঙ্গে গতকাল যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম নেতাদের আরেকটি বৈঠক হয়েছে। এ সব বৈঠকে কয়েক দফা দাবির বিষয়ে সবাই ঐক্যমত পোষন করেছেন।
সূত্রমতে, আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক সব আলোচনায় সরকারের বাইরে থাকা দল ও জোটগুলোর মধ্যে অন্তত ৫টি সাধারণ দাবিসহ কয়েকটি লক্ষ্যে মতৈক্য হয়েছে। বিএনপিসহ সরকারের বাইরে থাকা বিভিন্ন দল ও জোটের পাঁচটি মূল দাবি হচ্ছে, তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা ও নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন। ওইসব দাবি ও লক্ষ্য নিয়েই এক মঞ্চে আসছেন সবাই। দল ও জোটগুলোর মধ্যে শুধু ক্ষমতা পরিবর্তন নয়, শাসন পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়টিও আলোচনা হচ্ছে।
ঐক্য প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে ‘জাতীয় বৃহত্তর ঐক্য’ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করা হবে। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের পর চলতি মাসেই সরকারের বাইরে থাকা সব দল ও জোট প্রথমে অভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করবে। এর পর অক্টোবরের মাঝামাঝিতে অভিন্ন ইস্যুতে একই মঞ্চ থেকে কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে সরকারের বাইরে থাকা দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার পাশাপাশি কয়েকজন বুদ্ধিজীবী আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি এ বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, প্রাথমিকভাবে জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে বলা যায়। সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোর দাবি তো একই। তাই আশা করছি জাতীয় ঐক্যের আনুষ্ঠানিক ঘোষনা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিএনপিসহ বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কয়েক দফা দাবিতে সবাই একমব হয়েছে।এসব দাবিতে সবাই এক মঞ্চে আসবে। আশা করি শিগগিরই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’র আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেয়া হবে।
সূত্র মতে, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সম্মত হয়েছে বিএনপি, গণফোরাম, যুক্তফ্রন্টে থাকা বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং বাম গণতান্ত্রিক ধারার পৃথক ৪টি দল। এই ঐক্যে ২০ দলীয় জোটে থাকা জামায়াতে ইসলামী ছাড়া নিবন্ধিত অন্য দলগুলো থাকছে। এছাড়া আট দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকেও একই প্লাটফর্মে আনার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর বাইরে বিভিন্ন ইসলামিক রাজনৈতিক দল ও জোটের সাথে আলোচনা চলছে।
নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গঠনের চূড়ান্ত পর্যায়ে বিএনপি। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে হলেও তারা বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চায়। প্রয়োজনে প্রবীণ আইনজীবী ও রাজনীতিক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই জোট হতে পারে। যুক্তফ্রন্ট, গণফোরাম ও কয়েকটি বাম দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাবে বিএনপি।
এ বিষয়ে দলের সিনিয়র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠন প্রক্রিয়অ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে এ বিষয়ে যেমন আলোচনা করেছি তেমনি অন্যান্য দলের সাথেও আলোচনা করে একটি ঐক্যমতে চলে এসেছি। আগামী ২২ তারিখ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোটের সমাবেশ আছে সেখানে আমাদের দলের প্রতিনিধি থাকবে। ওই সমাবেশে বৃহত্তর ঐক্যের প্রাথমিক একটা রূপ পাওয়া যাবে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তাদের দলের দাবির সঙ্গে একমত বাম গণতান্ত্রিক জোটের আট দল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে আলোচনা করছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, বর্তমানে বিরোধী সব দলের দাবি একই। বাম গণতান্ত্রিক জোটও চায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন হতেই পারে। তাদের সাথে আলোচনা চলছে। এখনো কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি।
এদিকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের ব্যাপারে যুক্তফ্রন্টে থাকা তিন দলের নেতারাও নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। গত বুধবার বিকলে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্প ধারার সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে তার বারিধারার বাসায় বৈঠক করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। ওই বৈঠকে ২২ সেপ্টেম্বরের সমাবেশ ও বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না ইনকিলাবকে বলেন, ২২ সেপ্টেম্বরের সমাবেশে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ আমরা উপস্থিত থাকব। বিএনপিসহ বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। বলা যায় এটি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যে কোন সময় ঘোষনা করার সম্ভাবনা আছে।
গত বুধবার ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে তার বেইলী রোডের বাসভবনে বৈঠক করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা জোনায়েদ সাকি। তিনি ইনকিলাবকে ড. কামাল হোসেন বর্তমান রাজনীতির সংস্কারের লক্ষে পাঁচ দফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়েছেন। তাদের পাঁচ দফা এবং আমাদের ১৩ দফার মধ্যে বেশ কিছু মিল রয়েছে। তাই আমরা কিভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারি এসব বিষয় নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করছি ঐক্যমতের ভিত্তিতে এক সঙ্গে আন্দোলন হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।