নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
টানা দুই ম্যাচ হেরে যখন দেশের বিমানে চড়েছে শ্রীলঙ্কা ঠিক একই সময় নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছে ভারত! ‘তোমার হলো শুরু, আমার হলো সারা...’- অবস্থা বোঝাতে রবি ঠাকুরের এই পংক্তিটিই কি যথেষ্ঠ নয়!
এবার এশিয়া কাপের সূচি ঘোষণার পর থেকেই হয়েছে বিস্তর সমালোচনা। উদ্ভট আর গোলমেলে সূচি বানিয়ে নিজেদের দায় সেরেছিল এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। অংশগ্রহণকারী দলগুলোর আপত্তির মুখে কয়েক দফায় ম্যাচের সময় বদলালেও, তারিখ বদলায়নি এসিসি। যে কারণে এশিয়া কাপে একটি দলের যাত্রা শুরুর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে অন্য দলের পথ চলা। গতপরশু রাতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৯১ রানের পরাজয়ে নিশ্চিত হয়েছে শ্রীলঙ্কার বিদায় ঘণ্টা। এর আগে নিজেদের গ্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৩৭ রানে হেরেছিল শ্রীলঙ্কা। টুর্নামেন্টের তিনদিনেই শেষ তাদের যাত্রা। অথচ তখন পর্যন্ত নিজেদের গ্রথম ম্যাচটাই খেলেনি ভারত!
গতকাল বিকেলে হংকংয়ের বিপক্ষে যখন টস হেরে ব্যাট করতে নামছেন রোহিত-ধাওয়ানরা ঠিক তখনই একরাশ হাতাশ নিয়ে দেশের বিমানে চড়ার উদ্দেশ্যে আমিরাতের হোটেল লবি ত্যাগ করছেন ম্যাথ্যুস-মালিঙ্গারা। আর সেখানেই শুরু বিরাট কোহলিবিহীন ভারতের এশিয়া কাপ মিশন। তবে আদতে আসরের সর্বোচ্চ ৬বারের চ্যাম্পিয়নদের লড়াইটা শুরু হচ্ছে আজ। তাও আবার চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ বিকেলের আগুনে এই ম্যাচটিকে ঘিরে বিশ্বব্যপী চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
রোহিত-শরফরাজের চোখে
নবাগত হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এশিয়া কাপ মিশন শুরু করে ভারত। কোন বিরতি ছাড়া আজই চিরপ্রতিদ্ব›দ্বীদের মুখোমুখি বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচটি ঘিরে আগে থেকেই উত্তেজনার রেণু ভেসে বেরাচ্ছে বাতাসে। তবে দুই অধিনায়ক তেমনটি ভাবছেন না। তারা মনে করছেন চির প্রতিদ্ব›িদ্বতার চেয়ে এশিয়া কাপ এর চেয়েও বেশি কিছু। পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ম্যাচটিকে ঘিরে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিকে প্রেরণা হিসেবে নিচ্ছেন না। তিনি মনে করেন, ‘আমাদের মনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ছাপ থাকবে না। সেটা এক বছর আগের বিষয়। তাই মাঠে নামলে আমরা নতুন কৌশল আর প্রবল উৎসাহ নিয়ে নামবো।’
বিরাট কোহলিকে বিশ্রাম দেওয়ায় অনেকেই ভারতের শক্তি নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবছেন। তবে পাকিস্তান অধিনায়ক মনে করছেন তাতে ব্যবধানে হেরফের হবে না মোটেও, ‘এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই কোহলি ওদের নিয়মিত অধিনায়ক এবং বিশ্বমানের একজন ব্যাটসম্যান। তবে কোহলি ছাড়াও ভারত শক্তিশালী একটি দল। ওদের ব্যাটিং লাইন আপ খুবই শক্তিশালী। তাই সব মিলিয়ে বলতে পারি দারুণ একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে।’
অপর দিকে হংকং ম্যাচ দিয়ে নিজেদের সার্বিক পরিস্থিতি যাচাই করে রাখতে চান ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ‘প্রথম ম্যাচ পরেই পাকিস্তান নিয়ে ভাবার সুযোগ পাবো। ওদের শক্তি ও দুর্বলতা নিয়ে পরে ভেবে দেখবো। তবে পিচের অবস্থা দেখে আমাদের কম্বিনেশন সঠিক বলেই মনে হচ্ছে। এখন ছেলেদের কাজটা ঠিকভাবে করতে হবে।’
পাকিস্তানের পাশে সাঙ্গাকারা
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপের এবারের আসরের বড় চমক। এদিন আসরের পঞ্চম ম্যাচে মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী দুই দল ভারত ও পাকিস্তান। আর এই ম্যাচের আগে পাকিস্তানের দুই ক্রিকেটারকে কয়েকটি উপদেশ দিলেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা।
গত রোববার হংকংয়ের বিপক্ষে পাকিস্তানের জয়ের দিনে পাকিস্তানের দুই তরুণ ক্রিকেটার বাবর আজম ও উসমান খান শিনওয়ারিকে বেশকিছু উপদেশ দিয়েছেন শ্রীলঙ্কান সাবেক এই ক্রিকেটার। পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) অফিসিয়াল টুইটারে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি এই দুই ক্রিকেটারকে মাথা ঠান্ডা রেখে এবং স্নায়ুচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে খেলার উপদেশ দিয়েছেন লঙ্কান গ্রেট সাঙ্গাকারা।
ফ্যাক্টর কোহলি, পাশে গাঙ্গুলি
এশিয়া কাপে ভারতীয় ক্রিকেট দলের স্কোয়াডে নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলির না থাকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। এখনো চলছে সে আলোচনা। চলবে পুরো এশিয়া কাপ জুড়েই। প্রায় সবারই মত এশিয়া কাপে কোহলি না থাকায় শক্তি কমেছে ভারতের। সুযোগ বেড়েছে অন্য দলগুলোর।
কিন্তু এমনটা মানতে নারাজ কোহলিদের পূর্বসুরী সৌরভ গাঙ্গুলি। এশিয়া কাপে কোহলি না থাকলে ভারতীয় দলে অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ বলে মনে করেন ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সফল এ অধিনায়ক। তার মতে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেতেও খুব বেশি কষ্ট হবে না।
দেশের সংবাদ মাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে গাঙ্গুলি বলেন, ‘ওয়ানডেতে পাকিস্তানের থেকে এখন ভারত বেশি ভাল দল। ভারতীয় দলে ভারসাম্য বেশি রয়েছে। তাই কোহলির না থাকাটা এশিয়া কাপে কোন চিন্তার কারণ নয়।’
আগামীকাল (বুধবার) উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান। এ ম্যাচেও কোহলিবিহীন ভারতকেই এগিয়ে রাখছেন গাঙ্গুলি, ‘ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি সমানে সমান লড়াই হবে এ দুই দলের ম্যাচ সব সময়ই স্নায়ুর লড়াই। ক্রিকেট জীবনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সব সময়ই ভাল খেলতাম। রোহিতরা সাহসী ক্রিকেট খেললে পাকিস্তানকে হারাতে অসুবিধা হবে না।’
রোমাঞ্চিত রোহিত নার্ভাসও
এশিয়া কাপের মতো বড় আসরে ভারতের অধিনায়কত্ব পেয়ে ভীষণ রোমাঞ্চিত রোহিত শর্মা। তবে এতবড় টুর্নামেন্ট হওয়ায় কিছুটা স্নায়ু চাপে ভুগছেন তিনি।
টুর্নামেন্টে সব দলই একবার করে মাঠে নেমে গেছে। দুই ম্যাচ হেরে বিদায় নিয়ে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ভারত নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলেছে গতকাল। তবে আজকের পাকিস্তান ম্যাচকে ঘিরেই অধিনায়কত্বের রোমাঞ্চ ছুঁয়ে যাচ্ছে এই ওপেনারকে, ‘এটা আমার জন্য অনেক বড় টুর্নামেন্ট, কারণ আমি অধিনায়কত্ব করছি। ব্যাপারটা রোমাঞ্চকর কিন্তু সেইসঙ্গে আমি একটু নার্ভাস। সব খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনেক দিন থেকেই খেলে আসছি। সবার মধ্যে বোঝাপড়াও দারুণ। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, আমি সামনের দিকে তাকাচ্ছি।’
পাকিস্তানের পেসারদের সামলাতে...
পাকিস্তানের পেসারদের নিয়ে বেশ চিন্তিত ভারতীয় শিবির। বিশেষ করে বাঁহাতি পেসাররা তাদের রাতের ঘুম হারাম করেছে! মোহাম্মদ আমির তো আছেনই। যেকোনো ব্যাটিং অর্ডার একাই ধ্বংস করতে পারেন আমির। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন উসমান খান। হংকংয়ের বিপক্ষে ৩ উইকেট পাওয়া এ পেসার ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়ার হুংকার দিয়েছেন। এছাড়া জুনায়েদ খান ও ওয়াহাব রিয়াজ তো আছেনই। চার পেসারের তিন জনকেই হংকং ম্যাচে খেলিয়েছে পাকিস্তান। ভারতের বিপক্ষেও একই আক্রমণ নিয়ে মাঠে নামবে পাকিস্তান। জুনায়েদ খানের সঙ্গে রিজার্ভ বেঞ্চ ভারী করেছেন শাহিন শা আফ্রিদি।
পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসারদের সামলাতে বাঁহাতি থ্রো ডাউন বিশেষজ্ঞ উড়িয়ে এনেছে ভারত। শ্রীলঙ্কান নুয়ান সেনেভিরতেকে নিয়োগ দিয়েছে ভারত।
ওয়ানডেতে মুখোমুখি
ম্যাচ পাকিস্তান ভারত টাই/পরি.
১২৯ ৭৩ ৫২ ৪
এশিয়া কাপে
১১ ৪ ৬ ১
সংখ্যায় সংখ্যায়
১২৯ ওয়ানডেতে পাকিস্তান-ভারতের ম্যাচের সমষ্টি। ভারতের ৫২ ম্যাচের বীপরিতে পাকিস্তান জিতেছে ৭৩টি।
১১ এশিয়া কাপে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ১১ বার। পাকিস্তানের ৪ জয়ের বীপরিতে ভারত হেসেছে ৬ ম্যাচে। বাকিটি ড্র।
৬৯ দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে সবথেকে বেশি ম্যাচ খেলেছেন শচীন টেন্ডুলকার। ৬৯টি ম্যাচ খেলেছেন মাস্টারব্লাস্টার।
৩৫৬ দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে সর্বোচ্চ দলীয় রান ৩৫৬। ভারত ৯ উইকেটে করেছিলেন এ রান। পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান ৩৪৪।
৭৯ সর্বোচ্চ রানের মতো সর্বনিম্ন রানও ভারতের, ৭৯। পাকিস্তানের সর্বনিম্ন রান ৮৭।
২৫২৬ দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৪২৬ রান করেছেন শচীন টেন্ডুলকার। ইনজামাম-উল-হক রান করেছেন ২৪০৩।
১৯৪ দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান সাঈদ আনোয়ারের। ১৯৪ রান করেছিলেন বাঁহাতি ওপেনার।
৫ শচীন টেন্ডুলকার ও সালমান বাট ৫টি করে সেঞ্চুরি করেছিলেন।
৬০ দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে সর্বাধিক উইকেট পাকিস্তানি পেস কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরামের।
৭/৩৭ ৩৭ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন পাকিস্তানের আকিব জাভেদ। যা দু দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে সেরা বোলিং ফিগার।
৮৭ দুই দলের মুখোমুখিতে সবথেকে খরুচে বোলিং সোহেল তানভীরের। ১০ ওভারে ৮৭ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট।
৪৪ দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে সর্বাধিক ক্যাচ নিয়েছেন সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক আজহারউদ্দিন, ৪৪টি।
৭১ পাকিস্তান কিংবদন্তি উইকেটরক্ষক মঈন খানের দখলে দু’দলের সর্বাধিক ডিসমিসালের রেকর্ডটি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।