পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ-নিরপেক্ষ-অংশগ্রহণমূলক নিশ্চিত করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতিনিধির অংশ গ্রহণে শুরু হলো বিশেষ প্রচারাভিযান। উন্নয়ন সহযোগী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আর্থিক সহায়তায় এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘শান্তিতে বিজয় ক্যাম্পেইন’। নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে; অথচ এখনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা। এই অনিশ্চয়তা দূর করতেই বিশ্ব রাজনীতির দুই মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আর্থিক সহযোগিতায় মূলত এই বিশেষ প্রচারাভিযান। রাজনৈতিক সহবস্থান নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে অনুষ্ঠানে জানানো হয় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও সহনশীল রাজনীতির চর্চায় এই প্রচারাভিযানে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, প্রার্থী এবং সাধারণ জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করা হবে। অনুষ্ঠানে মূল প্রতিদ্ব›দ্বী বড় দুই দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের ৪শ নেতা এক কাতারে দাঁড়িয়ে সহঅবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবে আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং নির্বাচনী প্রচারণার অঙ্গিকার করেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লু ম বার্নিকাট বলেছেন, শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু নির্বাচনে সব ধরণের সহায়তা দেয়া হবে। একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন খবুই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সব রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিকে নির্বাচনী প্রচারণায় সমান সুযোগ দিতে হবে। ঢাকায় কর্মরত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসক ব্লক বলেন, নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ এবং আমরা সবাই যাতে শান্তি বজায় রাখতে পারি, এজন্য আজকে একত্রিত হয়েছি। মানুষ একটা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। সুষ্ঠু নির্বাচনে আমরা সবাইকে সহযোগিতা করতে চাই। দেশের সব নাগরিক ও রাজনীতিবিদ সহিংসতাকে ‘না’ বলবেন এটাই প্রত্যাশা করছি।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইউএসএআইডি এবং ইউকেএইডের যৌথ অর্থায়নে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের স্ট্রেংথেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ প্রকল্পের আওতায় ‘শান্তিতে বিজয় ক্যাম্পেইন’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে তৃণমূলের ৪০ জেলার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ৪শ নেতা রাজনৈতিক সহনশীলতা ও সম্প্রতির সমর্থনে তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে সহিংসতার বিরুদ্ধে অঙ্গীকার করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, ব্রিটিশ হাই কমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বক্তৃতা করেন। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এবং বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বিলকিস জাহান শিরিন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, রাশেদা বেগম হীরা, নীলোফার চৌধুরী মনি প্রমূখ।
আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির অঙ্গীকারের শপথনামায় বলা হয় ‘আমি বিশ্বাস করি, একমাত্র সহনশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতিই দেশের মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, যারা শান্তিপূর্ণ রাজনীতির চর্চা করবে, দেশের মানুষ তাদেরই সমর্থন করবে। তাই আমি অঙ্গীকার করছি- আমি সহনশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতির চর্চা করবো। ভবিষ্যতের যে কোনো নির্বাচনে আমি শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা করবো এবং দলের সহকর্মীদেরও নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে উৎসাহিত করবো। আমি অঙ্গীকার করছি- সবসময় শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে সচেষ্ট থাকবো। শান্তিতে বিজয় বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের বিজয়। শান্তি জিতলে জিতবে দেশ।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির জন্য নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় পরিপূর্ণভাবে সমান অংশগ্রহণের স্বাধীনতা থাকা উচিত। বাংলাদেশিদের অবশ্যই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে অহিংস আচরণ করতে হবে। সহিংসতা শুধু তাদেরই কাজে আসে যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং বাংলাদেশ ও তার নাগরিকদের স্বার্থহানি করতে চায়। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী-সমর্থকদের অবশ্যই নিজেদের রাজনৈতিক মতাম প্রকাশ, প্রচারণা চালানো এবং ভয়ভীতি, প্রতিশোধ বা জবরদস্তিমূলক বিধিনিষেধ ছাড়া শান্তিপূর্ণ সভাসমাবেশ করার স্বাধীনতা থাকতে হবে। শান্তি পারস্পরিক সহনশীলতা ও অংশগ্রহণমূলক মনোভাব- বাংলাদেশে এ সবকিছুরই রয়েছে এক জোরালো ঐতিহ্য। হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার মাধ্যমে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় অবদান রাখতে পারবো। এজন্য সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিজ্ঞ সমাজ, মিডিয়া এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে মিলে এ কাজ করতে সক্ষম সম্ভব। ইস্যু বা নীতির বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই তাদের প্রতিদ্ব›দ্বীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বৈধ অংশগ্রহণকারী এবং পরবর্তী সরকারের সম্ভাব্য নেতা হিসেবে মেনে নিতে হবে। নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচনের পর শান্তি বজায় রাখতে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। মনে রাখতে হবে সহিংসতায় কেবল তারাই লাভবান হয়, যারা বাংলাদেশের ভালো চায় না।
ঢাকায় কর্মরত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বলেন, আজ সব দল এক কাতারে, আমি খুবই আনন্দিত। বাংলাদেশের মানুষ একটা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। সুষ্ঠু নির্বাচনে আমরা সবাইকে সহযোগিতা করতে চাই। আমরা আশা করি দেশের সব নাগরিক ও রাজনীতিবিদ সহিংসতাকে ‘না’ বলবেন। প্রতিটি মানুষের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাজনীতি করার অধিকার আছে। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল এবং জনগণ শান্তির পক্ষে দাঁড়াবে বলেই আমার বিশ্বাস। আমরা এখান যারা আছি তারা শান্তির পক্ষে। কারণ শান্তি জিতলে জিতবে বিশ্ব, জিতবে বাংলাদেশ। আগামী জাতীয় নির্বাচনে মানুষ সহিংসতা চান না। এটা কেউ চায়না নির্বাচন ঘিরে প্রত্যাশিত কোনো ধরনের পরিবেশ তৈরি হোক। কারণ সহিংসতা মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তিনি বলেন, মানবাধিকার সনদে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। এটি অর্জন করতে হলে নিয়মিত নির্বাচন অপরিহার্য। তাই ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের এ উদ্যোগে আমরা অংশ নিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষের পাশে এ যাত্রায় থাকতে পেরে আমরা আনন্দিত। গণতন্ত্র এখন অনেক শক্তিশালী এটাকে আরও শক্তিশালী করতে আমরা কাজ করব।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন আমাদের প্রতিজ্ঞা, আমরা আওয়ামী লীগ এটা করতে পিছপা হব না। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। তিনি আরো বলেন, শান্তি না থাকলে, গণতন্ত্র না থাকলে, টেকসই কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। নির্বাচনের সময় ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা জনযুদ্ধ করে দেশ পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুই আমাদের গণতন্ত্রের কথা শিখিয়েছে। শান্তির জন্য আমরা অনেক রক্ত দিয়েছি। আজ বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তার নেতৃত্বের প্রশংসা করতে হয়। বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান বলেন, রাজনীতিতে শান্তি আসতে হলে রাজনীতিতে সুবিচার প্রয়োজন। আমরা রাজনীতিতে শান্তির কথা বলছি। শান্তি খুব প্রয়োজন। কিন্তু সুবিচার ছাড়া শান্তি সম্ভব না। আমরা একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। শুধু তাই নয়, আমরা একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ চাই। এটাই তো আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল। তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্র না থাকলে উন্নয়ন সম্ভব না। আমরা এ কথাই বলতে এসেছি। আমরা সামাজিক সুবিচার, রাজনৈতিক সুবিচার দাবি করি, এগুলো ছাড়া মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের কথা ভাবা যায় না। আমরা রাজনৈতিক দল, সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের হাতে হাত ধরে এগোতে চাই। কারণ, একসঙ্গে কাজ করলে আমরা গণতন্ত্র ও উন্নয়ন আনতে পারবো। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।